চীন থেকে বড় ঋণ পাওয়ার আভাস

চীন থেকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঋণ পাওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন তথা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের উন্নয়নে এ অর্থ দেবে দেশটি। এজন্য ২১টি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করেছে সরকার। এর বাইরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আরো প্রকল্প রয়েছে।

আগামী ১৪ অক্টোবর চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের রাষ্ট্রীয় সফরে অর্থায়নের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। ঋণের পরিমাণ হবে প্রায় আড়াই হাজার কোটি ডলার হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চীনা প্রেসিডেন্টের এ সফরে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বেশি গুরুত্ব পাবে। দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প রয়েছে। যা সরকারের মধ্য আয়ের রূপকল্পের জন্য অগ্রাধিকারভুক্ত ছিল।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান বলেন, চীনের সঙ্গে আমাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিরাজমান। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ৩০ বছরের বন্ধুপ্রতীম দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক আরো উচ্চ মাত্রায় পৌঁছে গেছে। এর অংশ হিসাবেই চীন থেকে বড় অংকের ঋণ পাওয়ার সম্ভবনা তৈরি হয়েছে; যা হবে একক দেশ হিসাবে এ যাবৎকালের বৃহৎ ঋণ সহায়তা।

আব্দুল মান্নান আরো বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কিছু প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। আশা করছি, শি জিন পিংয়ের সফরে এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা আসবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২১টি উন্নয়ন প্রকল্প প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়েছে। তবে এর বাইরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী বিভাগের আরো কয়েকটি প্রকল্প অর্ন্তভুক্ত করা হতে পারে।

বাছাইকৃত প্রকল্পের মধ্যে রেলখাতের চারটি, সড়ক পরিবহনের চারটি, বিদ্যুতের চারটি, জীবনমান উন্নয়নে পাঁচটি, জ্বালানি ও তথ্য প্রযুক্তি খাতের একটি করে এবং শিল্প খাতের দুটি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য ২৫৭ কোটি ৫৭ লাখ ডলার, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল প্রকল্পে ৩০৩ কোটি ডলার, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনের (ডাবল লাইন ডুয়েল গেজ) উন্নয়ন প্রকল্পে ৭৫ কোটি ২৮ লাখ ডলার দিতে পারে চীন।

এর বাইরে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীতে টানেল নির্মাণ প্রকল্পে ৭০ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ১৩৯ কোটি ৩৯ লাখ ডলার, সীতাকুণ্ড-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ এক্সপ্রেসওয়ে ও কোস্টাল সুরক্ষা প্রকল্পে ২৮৫ কোটি ৬৫ লাখ ডলার এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের জন্য ১৬০ কোটি ৩৩ লাখ ডলার দিতে পারে চীন।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত বলেন, উন্নয়নে আমাদের অর্থ সংকট রয়েছে। এক্ষেত্রে বৈদেশিক ঋণ সহায়তা প্রাপ্তির খরব ইতিবাচক। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন তাদের ঋণের সুদ হার ও অন্যান্য শর্ত যেন কঠিন না হয়।

এছাড়া চায়না অর্থনৈতিক ও শিল্প জোন চট্টগ্রামের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রজেক্ট, ড্রেনেজ অ্যান্ড সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ফর স্মল সাইজ পৌরসভা, রিপ্লেস অব ওভারলোডেড ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার ফর প্রোভাইডিং রিলায়েবল ইলেক্ট্রিসিটি ইন আরই সিস্টেম প্রকল্পে ঋণ প্রাপ্তির সম্ভাবনা তালিকায় রয়েছে।

প্রসঙ্গত, প্রায় ৩০ বছর পর চীনা কোনো প্রেসিডেন্টের এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর। ১৯৮৬ সালে চীনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় শি জিন পিং ২০১০ সালে দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। সঙ্গত কারণেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে শি জিন পিং এর ১৪ অক্টোবরের সফরটি তাৎপর্যপূর্ণ।



মন্তব্য চালু নেই