চাকরীতে বিতৃষ্ণা? ৫ টি প্রশ্নে বুঝে নিন কী করবেন

জীবিকা, সাচ্ছন্দ্য আর স্বনির্ভরতার প্রয়োজনে তরুণেরা যুক্ত হন বিভিন্ন রকমের পেশায়। দেখা যায়, কেউ কেউ সারাদিনই কাজ করছেন। কাজের চাপে পরিবারকে সময় দিতে পারছেন না। প্রিয়জনের মেসেজের উত্তর দেওয়া, ফোন করা এমনকি ফোন ধরার সময় পর্যন্ত পাচ্ছেন না। সবাই হয়ত তাকে অসামাজিক বলছে। আবার চাকরিক্ষেত্রেও কাজের মূল্যায়ণ পাচ্ছেন না যেমন চাইছেন। এতে কাজের চাপের সাথে যোগ হয় মানসিক চাপ।

এরকম পরিস্তিতিতে আমরা প্রচন্ড রেগে যাই আমাদের চাকরীর উপর। হতাশায় ভুগতে শুরু করি। প্রশ্ন করতে থাকি নিজের যোগ্যতাকে। বিশিষ্ট লেখক স্টিভ আলব্রেক্ট ডিভিএ চাকরিক্ষেত্রে কাজের প্রতি ক্ষোভকে বিশ্লেষণ করেছেন বিভিন্নভাবে। তার লেখা বই এর মধ্যে আছে, Defusing Violence in the Workplace, Fear and Violence on the Job, and Tactical Perfection for Street Cops ইত্যাদি। তার মতে, আপনার “জব বার্নাউট” কোন মাত্রায় আছে বুঝতে নিজেকে করুন এই ৬ টি প্রশ্ন। মাত্রা বুঝে নিজেকে সেখান থেকে বের করে আনতে পারবেন আপনি নিজেই।

“কাজের কোন দিকটি আমার প্রিয়?”
আপনার চাকরির কোন দিকটি আপনাকে আনন্দ দেয়? কেমন লাগে কাজের পরিবেশ? আপনার পরিশ্রমের স্বীকৃতি কি আপনি পান? সঠিক মূল্যায়ণ হয় যোগ্যতার? কাজের কোন দিকটি আপনার উৎসাহ বাড়ায়?

এসব প্রশ্নের উত্তরে যাদের জবাব ইতিবাচক হয় তারা তাদের চাকরিটি অনেক উপভোগ করছেন বোঝা যায়। তারা অনুভব করেন, তাদের চাকরিতে তাদের সঠিক বেতন এবং যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হয়। এভাবে তারা নিজেরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের একটি অংশ ভাবতে শুরু করেন। এভাবে জীবনের প্রতিও সন্তুষ্ট থাকেন তারা।

“কাজের কোন দিকটি আপনার অপ্রিয়?”
আপনার অপছন্দগুলো কী কী? কাজের পরিবেশ? যে কাজ গুলো আপনাকে করতে হয়? চাপ বেশী? বসকে অপছন্দ নাকি সহকর্মীদের? আপনার অপছন্দের লিস্ট যত বড় হবে আপনি তত আপনি চাকরি থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করবেন। আপনার মনে হবে, আপনাকে কম বেতন দেওয়া হয়, আপনার মূল্যায়ণ হয় না ঠিক মত। এভাবে একটি ভাল চাকরিও অসহ্য হয়ে যেতে পারে। ভালদিকগুলো খুঁজে বের করুন। অথবা চাকরি খুজুন, পেলে ছেড়ে দিন।

“আমার সহকর্মীদের কোন কাজগুলো আমার কাজকে আরও সহজ করে?”
পুরোনো একটি কথা আছে, “আপনি আসলে আপনার চাকরি ছাড়েন না, আপনার বসকে ছাড়েন।” একজন ভাল, সহনশীল, প্রেরণাদায়ক নেতা আপনাকে যেমন অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, তেমনি বস যদি বদরাগী হয় সেক্ষত্রে সহজ কাজটিও হতে পারে যন্ত্রণাদায়ক। কিন্তু আপনার এক্ষেত্রে কিছুই করার নেই তা কিন্তু নেই। ঝটপট কাজ শেষ করে অবাক করে দিন বসকে। তাকে সময়ই দেবেন না আপনাকে পাল্টা প্রশ্ন করার। মুষড়ে না পড়ে এটাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিন। সহকর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব করুন। একসাথে খেতে বসা, কাজের ফাকে টুকটাক খোঁজ খবর আপনাকে অনেক সাহায্য করবে। তবে অবশ্যই সেটা ব্যাক্তিগত পর্যায়ে না গড়ানোই ভাল।

“সহকর্মীরা কি কর্মপরিবেশ কে জটিল করে তুলছে?”
সহকর্মীদের সাথে ঝগড়া, ক্লেশ আপনার কাজ করার আগ্রহকে নষ্ট করে দিতে পারে। হিংসা, নিজে উপরে উঠতে অপরকে ছোট করা এসব কাজের পাশাপাশিও সেক্সুয়াল এবিউজের ঘটনাও ঘটতে পারে। নারী কর্মীরা এসবের শিকার হন প্রায়ই। অনেক প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ করেও কোন ফল হয় না। এসব ক্ষেত্রে জব বার্ণ আউট স্বাভাবিক। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন। কোন সমস্যা আপনার অবহেলার কারণেই তৈরি হয়েছে কিনা খেয়াল করুন।

“বস কি আমাকে সাহায্য করে?”
আপনার বস আপনাকে সাহায্য করলে আপনার কাজ অনেক সহজ হয়ে যাওয়ার কথা। বসের সাহায্য বলতে বোঝানো হচ্ছে, তার সহজ মানসিকতা। তিনি যদি আপনার সব কাজের ভুলকে বড় করে দেখেন, তাহলে আপনার কাজ করার পরিবেশ আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু পাশাপাশি ভাবুন, আপনার কাজের চ্যালেঞ্জ গুলো কী কী? সেগুলো আপনি কতটা পূরণ করছেন? বসের হয়ত আপনার প্রতি প্রত্যাশাও বেশী।

প্রশ্নগুলোর উত্তর আশা করি চাকরীর প্রতি বিতৃষ্ণার কারণ খুঁজে পেতে সাহায্য করবে আপনাকে। এরপর নিজের এবং প্রতিষ্ঠানের উভয়ের সমস্যাগুলো বিশ্লেষণ করুন সময় নিয়ে। লিখে রাখুন। নতুন চাকরি খোঁজার সময় এবার আপনি জানবেন আপনার কী কী চাই, নিজের উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য, যোগ্যতাগুলোও বুঝতে পারবেন। তৈরি করতে পারবেন একটি চমৎকার সিভি, যা এক কথায় তুলে ধরে আপনাকে।



মন্তব্য চালু নেই