চাঁদপুরের ৪০ গ্রামে কাল ঈদ

দীর্ঘ ৮৬ বছরেও চাঁদপুরে আগাম ঈদ উদযাপন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার অবসান হয়নি। হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা দরবার শরীফের প্রায় লক্ষাধিক অনুসারী এবারও আরব দেশসূমহের সঙ্গে সংগতি রেখে একদিন আগে ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করবে।

চলতি বছর রোজা ২৯ টি হলে আগামী সোমবার অর্থাৎ ২৮ জুলাই চাঁদপুরের ৪০টি গ্রামে ওই দরবার শরীফের অনুসারীরা দেশের নিয়মের একদিন আগে ঈদ পালন করবে। গত ৮৫ বছর ধরেই আরব দেশগুলোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সাদ্রাসহ ৪০টি গ্রামে ঈদ উদযাপন হয়ে আসছে।
হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা গ্রামে ১৯২৮ সাল থেকে একদিন আগে ঈদ উদযাপন প্রথা চালু করলেও এখন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ একদিন আগে ঈদ উদযাপন করছে।
১৯২৮ সালে হাজীগঞ্জ উপজেলার রামচন্দ্রপুর মাদরাসা তৎকালীন অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইছহাক খান আরব দেশ সমূহের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ঈদ উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু স্থানীয় গ্রামবাসী অসহযোগিতা করলে সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়। দেশে সরকারি নিয়মের বাইরে একদিন আগে ঈদ পালনের উদ্যোগ গ্রহণের দায়ে মাওলানা খানকে মাদরাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান মাওলানা খান ওই বছরই চলে আসেন নিজ গ্রাম একই উপজেলার সাদ্রায়। আরব দেশসমূহের রীতিনীতি অনুযায়ী ধর্ম-কর্ম পালনের জন্য প্রথমে নিজ গ্রামে শুরু করেন ব্যাপক গণসংযোগ। গ্রামের অসহায়, দুস্থ মুসলমানদের প্রচুর আর্থিক সাহায্য দিয়ে আরব দেশগুলোর সঙ্গে সংগতি রেখে একদিন আগে ঈদসহ সব প্রকার ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপন প্রথা চালু করেন।
মাওলানা খানের মতে হানাফি, মালেকি ও হাম্বলী মাজহাবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদসহ সর্বপ্রকার ধর্মীয় কার্যক্রম বিশ্বের সব দেশে একসঙ্গে পালিত হবে। বাংলাদেশ পবিত্র কাবা ঘর থেকে ৫০.১২ দ্রাঘিমাংশ পূর্বে অবস্থিত। মক্কার সাথে রাজধানী ঢাকার সময়ের ব্যবধান ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড। সময়ের ব্যবধান এত অল্প হলে একসঙ্গে রোজা রাখা ঈদ উদযাপন করতে বাধা থাকার কথা নয় বলে তাদের দাবি।
মাওলানা ইছহাক খান ১৯৮৫ সালে ১৩ নভেম্বর ইন্তেকাল করলে তার কবরকে ঘিরে গড়ে উঠেছে মাজার। তার ৬ ছেলে ও ১ মেয়ে। তারা হচ্ছেন- মাও. আবু জাফর হাই, আলহাজ্ব মাও. আবু বকর, মো. ঈসমাঈল, মাও. আবুল খায়ের, মাও. মোঃ শেখ ইলিয়াস, আলহাজ্ব মাও. আবু ইয়াহিয়া, মো. জাকারিয়া আলমাদানী, হাফেজ মাও. আহাম্মদ হোসাইন, মাও. শাহ মো. হাসান ও ওয়াহরেহা ফাতেমাতুজ জোহরা।
৬ সন্তানই বাবার মতবাদ প্রচারে সদা নিবেদিত। সেই সঙ্গে ওই মতবাদ প্রচারে কাজ করছেন মাও. ইছহাক খানের অসংখ্য মুরীদ। তার মৃত্যুবার্ষিকীতে ওরস মাহফিলও হয় পৃথক পৃথকভাবে।
একদিন আগে ঈদের জামাত করা নিয়ে মতবিরোধে সৃষ্ট সংঘর্ষে ১৯৮৬ ও ১৯৮৭ সালে দুই ঈদে দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়। এরপর থেকে প্রতি বছর সাদ্রাসায় ঈদের দিন ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
সাদ্রা ছাড়াও জেলার ৪০টি গ্রামের একাংশে ওই পীরের অনুসারীরা একদিন আগে ঈদ উদযাপন করেন। গ্রামগুলো হচ্ছে- হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখাল, শ্রীপুর, মনিহার, বরকুল, অলীপুর, বেলচোঁ, রাজারগাঁও, জাকনি, কালচোঁ, মেনাপুর, ফরিদগঞ্জ উপজেলার শাচনমেঘ, খিলা, উভারামপুর, পাইকপাড়া, বিঘা, উটতলী, বালিথুবা, শোল্লা, রূপসা, গোয়ালভাওর, কড়ইতলী, নয়ারহাট, মতলবের মহনপুর, এখলাসপুর, দশানী, নায়েরগাঁও, বেলতলীসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম।
এছাড়া চাঁদপুরের পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা ও শরীয়তপুর জেলার কয়েকটি স্থানে মাও. ইছহাক খানের অনুসারীরা একদিন আগে ঈদ উদযাপন করে।



মন্তব্য চালু নেই