চট্টগ্রাম কলেজে ২৫ বছর পর `স্বাধীন’ হলো ছাত্রলীগ

অবশেষে চট্টগ্রাম কলেজে ‘স্বাধীন’ হলো ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ। উন্মুক্ত হলো ক্যাম্পাসে তাদের রাজনীতি। প্রায় দুই যুগ ছাত্রলীগকে দাবিয়ে রাখা ছাত্রশিবির গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মুখে ক্যাম্পাস ছেড়ে পালায়। এরপর তারা আর পা মাড়ায়নি কলেজের আশপাশে।

সেদিন থেকে চট্টগ্রাম কলেজে নির্বিঘ্নে সভা-সমাবেশ করছে ‘স্বাধীন’ ছাত্রলীগ। তাদের ব্যানার, পোস্টার ও চিকায় ভরে গেছে গোটা ক্যাম্পাস। ষষ্ঠ দিনের মতো আজ মঙ্গলবার সকালেও নবীন শিক্ষার্থীদের নিজেদেরে পতাকাতলে আসার আহ্বান জানিয়ে ক্যাম্পাসে সমাবেশ করেছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনটি।

এর আগে চট্টগ্রাম কলেজে প্রায় ২৫ বছর ছাত্রলীগের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ছাত্রলীগ কাগজে-কলমে কলেজ শাখা গঠন করে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিলেও শিবিরের বাধার মুখে উন্মুক্ত ছিল না তাদের রাজনীতি।

এই সময়ে শিবির প্রভাবিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য কলেজে তাদের পতন হলেও মূল ঘাঁটি হিসেবে শিবিরের দৃঢ় অবস্থান বজায় ছিল চট্টগ্রাম কলেজে। ফলে ছাত্রলীগ সেখানে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহস করেনি।

চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও নগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি এম কায়সার উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামে ছাত্রশিবিরের দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসীন কলেজ। আধিপত্য ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি কলেজে, যেগুলো ছিল চট্টগ্রামে জামায়াতের মূল শক্তি। সেগুলো আগেই শিবিরের হাতছাড়া হয়। ফলে চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রাবাসে তারা গড়ে তোলে দুর্গ।

তাদের ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্রের মুখে পুলিশ ও র‌্যাব বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রাবাসে অভিযান চালাতে গিয়েও পিছু হটেছে। ছাত্রশিবিরের অস্ত্রের মুখে সাংগঠনিক কাজ চালাতে গিয়ে নানা অত্যাচারের সম্মুখীন হয়েছে ছাত্রলীগ।

এম কায়সার উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে ছাত্রলীগ কলেজ শাখা গঠন করে সাংগঠনিক কাজ শুরু করলেও উন্মুক্ত কার্যক্রম চালাতে পারেনি। সভা-সমাবেশ করতে গিয়ে ছাত্রশিবিরের হামলার শিকার হয়েছেন নেতাকর্মীরা। গুলি ও মারধরে রক্তাক্ত হয়েছে ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী। এবারের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর সময় ছাত্রলীগের ওপর বোমা হামলা চালায় ছাত্রশিবির। তবে এবার হামলা রুখে দাঁড়ায় নির্যাতিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। অবস্থা বেগতিক দেখে ছাত্রাবাস ছেড়ে পালায় ছত্রিশিবির।

সেদিন ছাত্রশিবির এত সহজে পালিয়ে যাবে এমনটা তারা ভাবেননি বলে জানান এম কায়সার উদ্দিন। পরে ছাত্রলীগের দাবির মুখে চট্টগ্রাম কলেজের চারটি ও মহসিন কলেজের দুটি ছাত্রাবাস বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, দল ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু হলেও এর আগে প্রায় ২৫ বছর সেখানে ছাত্রলীগের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম কলেজের দখল নিয়ে ছাত্রশিবির তৎকালীন ছাত্র সংসদের এজিএস ও ছাত্রলীগ নেতা তবারক হোসেনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাদের অস্ত্রবাজি আর খুনের রাজনীতিতে ছাত্রলীগ, বাকশালপন্থী জাতীয় ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয়। ১৯৮৪ সালের রাতের আঁধারে হোস্টেলে দুজন মেধাবী ছাত্রকেও জবাই করে খুন করে শিবির।

সেই থেকে চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হয় প্রগতিশীল শক্তি। নিয়ন্ত্রণ নেয় শিবির। হাজী মুহম্মদ মহসীন কলেজও শিবিরের দখলে চলে যায়। এরপর ছাত্রলীগ কিংবা অন্যান্য নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনগুলো কখনোই আর চট্টগ্রাম কলেজের ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেনি।

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নুরুল আমিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ১৬ ডিসেম্বর ছাত্রলীগ ও সাধারণ ছাত্রদের প্রতিরোধের মুখে পলাতক ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজে আসেনি। তাদের ফিরে আসার কোনো সুযোগও নেই। তাদের দুর্গ ছাত্রাবাসগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

নুরুল আমিন দাবি করেন, চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রাবাসগুলোতে কোনো বৈধ ছাত্র থাকে না। মহসিন কলেজে মেয়েদের হোস্টেলে থাকত ছেলেরা। হোস্টেলগুলো একেকটা অবৈধ অস্ত্র আর সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের আস্তানায় পরিণত হয়েছিল। তাই দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রাবাসগুলো বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল ছাত্রলীগ। এ নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ নানা টালবাহানা করলেও শেষ পর্যন্ত ছাত্রবাসগুলো বন্ধ করে দিয়েছে।

ঘটনার পর থেকে ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজে নির্বিঘ্নে সভা-সমাবেশ করছে জানিয়ে নুরুল আমিন বলেন, কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নতুন করে ব্যানার, পোস্টার লাগিয়েছে। নতুন চিকায় চকচক করছে দুই কলেজের চারপাশ। সাংগঠনিক কোনো কাজে ছাত্রশিবির বা কোনো সংগঠনের বাধা আর নেই। ছাত্রশিবির যাতে কলেজে আর অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে না পারে সে জন্য তারা সজাগ রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই