চট্টগ্রামে ১০টির ১০টিতেই আ.লীগ জয়ী

জাল ভোট, কেন্দ্র দখল, হামলা, রক্তপাত আর বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১০টির মধ্যে ১০টিতেই জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।

বুধবার রাত ৯টায় বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলাফলে সাতকানিয়া, পটিয়া, চন্দনাইশ, বাঁশখালী, বারৈয়ারহাট, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গুনিয়া, সন্দ্বীপ, রাউজান ও মিরসরাইয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।

রাঙ্গুনিয়ায় আওয়ামী লীগের শাহজাহান শিকদার নৌকা প্রতীক নিয়ে মোট ১১টি ভোট কেন্দ্রের ঘোষিত ফলাফলে ১২ হাজার ৯৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে হেলাল উদ্দিন শাহ ২ হাজার ১৫১ ভোট পেয়েছেন।

রাউজানের ১৯টি ভোট কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফলে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে দেবাশীষ পালিত ২৮ হাজার ১৬২ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আব্দুল্লাহ আল হাসান পেয়েছেন মাত্র ২ হাজার ১২০ ভোট।

সন্দ্বীপে আওয়ামী লীগের জাফর উল্লাহ টিটু ২৫ হাজার ৫৪৪ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে জয়ী হয়েছেন। মোট ১৫ কেন্দ্রের ঘোষিত ফলাফলে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আজমত উল্লাহ বাহাদুর ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন মাত্র ৫২২ ভোট।

মিরসরাইয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন (নৌকা) ৭ হাজার ২শ ৯৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। মিরসরাই পৌরসভার ৯টি কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এ জেড এম রফিকুল ইসলাম পারভেজ (ধানের শীষ) পেয়েছেন ৮শ ৭৫ ভোট।

সীতাকুণ্ডের ৯টি ভোট কেন্দ্রের ঘোষিত ফলাফলে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে বদিউল আলম ১৪ হাজার ৮৩২ পেয়ে বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী আবুল মনছুর পেয়েছেন ২ হাজার ৯৪২ ভোট।

বারৈয়ারহাটে আওয়ামী লীগের নিজাম উদ্দিন উদ্দিন নৌকা প্রতীক নিয়ে ৫৬৬৬টি ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন। মোট ৯ কেন্দ্রের সবকটির ঘোষিত ফলাফলে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী মাঈন উদ্দিন লিটন পেয়েছেন মাত্র ২৩৮ ভোট।

বাঁশখালীতে আওয়ামী লীগের সেলিমুল হক চৌধুরী নৌকা প্রতীক নিয়ে ১৩ হাজার ৩৩০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন। সবকটি কেন্দ্রের ঘোষিত ফলাফলে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী কামরুল ইসলাম হোসাইনী পেয়েছেন মাত্র ৬ হাজার ৩৬০ ভোট।

পটিয়ায় ১৮টি ভোট কেন্দ্রের ঘোষিত ফলাফলে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে হারুনুর রশীদ চৌধুরী ১২ হাজার ৩৯৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী তৌহিদুল আলম পেয়েছেন ৭ হাজার ৫৩৫ ভোট।

চন্দনাইশের ১৬টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে স্থগিত তিনটি ছাড়া ঘোষিত ১৩টি কেন্দ্রের ফলাফলে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে মাহবুবুল আলম খোকা ১১ হাজার ৫২১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এলডিপির কুলা প্রতীকের প্রার্থী আ্ইয়ূব কতুবী পেয়েছেন ২ হাজার ৭৭০ ভোট।

সাতকানিয়ায় আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ জোবায়ের নৌকা প্রতীক নিয়ে মোট ১৫টি কেন্দ্রের ঘোষিত ফলাফলে ২০ হাজার ২৫৭ টি ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে হাজী রফিকুল আলম পেয়েছেন ২ হাজার ২৮৯ ভোট।

এর আগে বুধবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর পর পরই কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোট গণনা শুরু হয়েছে। গণনা শেষে ভোটকেন্দ্রের ফলাফল স্ব স্ব রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকে চূড়ান্তভাবে ভোটের ফল ঘোষণা করা হচ্ছে।

এদিকে ভোট শুরুর তিন ঘণ্টার মধ্যে সকাল ১১টার দিকে সাতকানিয়া কলেজ কেন্দ্রের হোস্টেল মাঠে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলিতে মো. নুরুল আমিন (৪০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। বিএনপি তাকে ‘বিএনপি নেতা’ দাবি করলেও আওয়ামী লীগ বলছে তিনি সাধারণ ভোটার।

এ ঘটনার পরপরই কর্মী হত্যা, ভোটকেন্দ্র দখল ও জাল ভোট দেওয়ার প্রতিবাদে ভোট বর্জন করেন সাতকানিয়া পৌরসভার বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাজি রফিকুল আলম (ধানের শীষ)। এর আগে সকাল দশটার দিকে ভোটকেন্দ্র দখল ও জাল ভোট দেওয়ার প্রতিবাদে ভোট বর্জন করেন সন্দ্বীপ পৌরসভা নির্বাচনের বিএনপি মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাহ বাহাদুর ও রাঙ্গুনিয়ার বিএনপি প্রার্থী মো. হেলাল উদ্দিন খান ্এবং রাঙ্গুনিয়ার আব্দুল্লাহ আল আহসান।

রাঙ্গুনিয়া ও সন্দ্বীপে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন এমন খবর প্রচার হওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ঠা ও বিভাগীয় নির্বাচন মনিটরিং সেলের আহ্বায়ক মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বাংলামেইলকে বলেছিলেন, ‘ভোট বর্জনের বাকি আর কী আছে। এটার দরকার নেই। সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা তো সকাল ৯টার মধ্যে সব কেন্দ্র নিজেদের দখলে নিয়েছে। সীতাকুণ্ডে আমাদের প্রার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। রাউজান, চন্দনাইশ. সাতকানিয়া, মিরসরাইয়, বারৈয়ারহাট, সন্দ্বীপসহ চট্টগ্রামের সব উপজেলায় একই অবস্থা। ভোটের আগেই তারা জিতে গেছে। ভোট ছিনিয়ে নিয়ে তারা বিজয় নিশ্চিত করে ফেলেছে। এসব প্রহসনের নির্বাচনের কী দরকার ছিল?’

এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভোট গ্রহণের আগেই ব্যালেটে সিল মারার অভিযোগে চন্দনাইশ পৌরসভার ১৬টি কেন্দ্রের মধ্যে তিনটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা নির্বাচনে ব্যালেট পেপার ছিনিয়ে নেয়ার অপরাধে এক কাউন্সিলর প্রার্থীকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। বুধবার বিকেলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিশাত উজ জামান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এ আদেশ দেন।

রাঙ্গুনিয়া ও মিরসরাই পৌরসভা নির্বাচনে তিনটি ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে কাউন্সিলর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া সীতাকুণ্ড পৌরসভা নির্বাচনে জাল ভোট প্রদান, গোলযোগ সৃষ্টির অভিযোগে দুটি কেন্দ্র থেকে সাতজনকে আটক করেছে আইন শৃংখলা বাহিনী।



মন্তব্য চালু নেই