চট্টগ্রামে রক্ত নিয়ে কালো বাণিজ্য!

চট্টগ্রামে চলছে লাল রক্তের ভয়ঙ্কর কালো বাণিজ্য। চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রামে রক্ত নিয়ে অবৈধ ব্যবসা করছে ২০ জনের একটি সিন্ডিকেট। আবার ব্লাড ব্যাংক করতে মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন থাকলেও অবৈধভাবে বাণিজ্য করছে অন্তত এক ডজন প্রতিষ্ঠান।

দৈনিক সমকালের অনুসন্ধানে নগরের শমশেরপাড়ায় রক্ত ব্যবসা করতে দেখা গেছে আইআইএমসি নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে। একইভাবে নগরীর ওআর নিজাম রোডে সিটি মেট্রোপলিটন ব্লাড ব্যাংক, পাঁচলাইশের ফজলুল কাদের রোডে বসুন্ধরা ব্লাড ব্যাংক, জিইসি মোড়ে রাইজিং ব্লাড অ্যান্ড ট্রান্সফিউশন সেন্টার, মুরাদপুরে পিপলস ব্লাড ব্যাংক, চান্দগাঁওয়ে মোহরা সিদ্দিক ব্লাড ব্যাংক, চকবাজারে চাঁদনী ব্লাড ব্যাংক এবং আন্দরকিল্লায় অবৈধভাবে রক্ত ব্যবসা করতে দেখা গেছে ফাতেমা বেগম রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংককে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ভেজাল রক্ত নিয়ে মৃত্যুর পথে পা বাড়ায় হাসপাতালের মুমূর্ষু রোগী।

চট্টগ্রামে বছরে প্রায় ৮০ হাজার ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। চমেকসহ পাঁচটি ব্লাড ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বছরে সংগৃহীত রক্তের মধ্যে প্রায় ৭ শতাংশই দূষিত। নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা করেই রোগীর শরীরে রক্ত দিতে হয়। কিন্তু সে নিয়মও অনেক প্রতিষ্ঠান মানছে না। চমেক হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগ ২০১৩ সালে সংগৃহীত রক্ত পরীক্ষা করে ২৮৬ ব্যাগে হেপাটাইটিস-বি, দুই ব্যাগে এইচআইভি, ৩৬ ব্যাগে হেপাটাইটিস-সি, ৪৯ ব্যাগে ম্যালেরিয়া, ১০ ব্যাগে সিফিলিসের জীবাণু পায়। আবার রক্ত সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান সন্ধানী পাঁচ ব্যাগে এইচআইভি, ৪৬ ব্যাগে হেপাটাইটিস-বি, ৫০ ব্যাগে হেপাটাইটিস-সি, ৩৮ ব্যাগে সিফিলিস এবং ৩২ ব্যাগে ম্যালেরিয়ার জীবাণু পায়। পেশাদার রক্তদাতা থেকে রক্ত সংগ্রহ করে তা অননুমোদিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাজারে বিক্রি করায় বাড়ছে সংক্রামক রোগের ঝুঁকি।

২০১৩ সালে চমেক রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগ ৩৭ হাজার ৫৪ ব্যাগ, রেড ক্রিসেন্ট ২০ হাজার ৬১৫ ব্যাগ, সন্ধানী ৬ হাজার ৯০১ ব্যাগ, বেসরকারি লাইভ সেভ ৩ হাজার ৫১২ এবং চট্টগ্রাম ব্লাড ব্যাংক ৩ হাজার ১৩৪ ব্যাগ রক্ত মানুষকে সরবরাহ করেছে।

দৈনিক সমকালের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রামে রক্ত নিয়ে অবৈধ বাণিজ্য ক্রমশ বাড়লেও আশ্চর্যজনকভাবে নীরব দায়িত্বশীল সব কর্তৃপক্ষই। মহানগরের বাইরে ব্লাড ব্যাংকের কার্যক্রম মনিটর করার কথা সিভিল সার্জন অফিসের। মহানগরের ভেতরে এ কার্যক্রম তদারকি করার কথা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের। তবে মহানগরের রক্ত ব্যবসা তদারকির দায় সিভিল সার্জনেরও। কারণ নগরে রক্ত ব্যবসার কার্যক্রম তদারকির জন্য গঠিত মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন। আবার কার্যক্রম তদারকিতে জেলার জন্য গঠিত কমিটির সভাপতিও তিনি। রক্ত ব্যবসার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সরকার এভাবে দায়িত্ব নির্ধারণ করে দিলেও তা পালন করছে না কেউই। চট্টগ্রামে চলতি বছর ভেজাল রক্তের কারবারিদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযানই পরিচালিত হয়নি। গত বছর অভিযান পরিচালিত হয়েছে মাত্র তিনটি।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের রক্ত নিয়েও চলছে অবৈধ বাণিজ্য। ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই এক পত্রে ডাক্তারদের ‘রক্তের চাহিদাপত্র’ লেখার সময় ৮ ধরনের নির্দেশনা অনুসরণ করতে অনুরোধ করে রেডক্রিসেন্ট। এর মধ্যে রোগীর নাম, বয়স, লিঙ্গ; ভর্তির রেজিস্ট্রেশন নম্বর, বেড-ওয়ার্ড, রক্তের গ্রুপ, পরিমাণ ও ধরন, চিকিৎসকের পুরো নাম ও পদবি, সিলযুক্ত স্বাক্ষর ও তারিখ উল্লেখ করতে বলা হয়। কিন্তু প্রায় এক বছর হতে চললেও ৩০ হাসপাতাল এবং চমেকের ২০টি ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধানরা কেউ এ নিয়ম মেনে দিচ্ছেন না রক্তের চাহিদাপত্র। ফলে বন্ধ করা যাচ্ছে না স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের রক্ত নিয়ে চলা অবৈধ বাণিজ্য।

সূত্র: দৈনিক সমকাল



মন্তব্য চালু নেই