চট্টগ্রামে গণপরিবহন সংকটে ক্যাব চট্টগ্রামের উদ্বেগ

বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহন না করে যন্ত্রচালিত রিকসা বন্ধ সঠিক হয়নি, মিটারে সিএনজি ট্যাক্সি চালানো বাধ্য করা ও গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানোর দাবী

বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহন না হাইকোর্টের নির্দেশে ব্যাটারী চালিত রিকসা বন্ধের পর চট্টগ্রামে গণপরিবহনে অরাজকতা, অস্থিরতা সৃষ্ঠি, বিশেষ করে প্যাডেল চালিত রিকসা ও সিএনজি চালিত ট্যাক্সি গুলি বেপরোয়া হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে লিপ্ত। মিটারে সিএনজি টেক্সী চালানোর নির্দেশ দেওয়ার পরও তারা কোন প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মেট্রো-আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন মিটারে সিএনজি ট্যাক্সি চালাতে চালকদের বাধ্য করতে না পেরে ব্যাটারী চালিত রিক্সা বন্ধে কঠোর অবস্থানের কারনে যাত্রীরা অসহায় হয়ে পড়েছে।

তাই চট্টগ্রাম সিটিকর্পোরেশন এলাকায় নগরবাসীর নিরাপদ ও ভোগান্তিহীন, নিবির্গ্ন যাতায়ত নিশ্চিত, লক্কর-ঝক্ক্র বাসের রাজত্বের অবসান, সিএনজি অকেটারিক্সার চালক কর্তৃক যাত্রীদের জিম্মি করে ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ করতে এবং গণপরিবহনে দুরাবস্থা দুরীকরণে এবং যাত্রী সেবার মান উন্নয়নে জরুরী ভাবে গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো, বিআরটিসির ডবল ডেকার বাস নামানো, সিএনজিও ট্যাক্সিগুলি মিটারে চালাতে বাধ্য করা, লক্করযক্কর বাসগুলির পরিবর্তে নতুন বাস সংযোজন, টেম্পো, মিনিবাস ও হিউম্যান হলার এর সংখ্যা বাড়ানোর দাবী জানিয়েছেন দেশে ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থসংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটি। যন্ত্র চালিত রিকসা বন্ধের পর নগর গণপরিবহনে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটির নেতৃবন্দ এক বিবৃতিতে উপরোক্ত জানান।

নেতৃবৃন্দ বলেন মেট্রো-আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির অদুরদর্শী সিদ্ধান্তের কারনে গণপরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্ঠি হলেও সিএনজি চালকদের আইন মানতে বাধ্য করার বিষয়ে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনের রহস্যজনক নিরবতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে গণপরিবহন সেক্টরে পরিবহন চালকদেরকে আইন মানতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন বিশেষ করে মিটারে সিএনজি চালনা, পর্যাপ্ত পরিমান বাস, মিনিবাস, টেম্পো ও হিউম্যান হলার রাস্তায় চলমান রাখতে যথাযথ নজরদারি নিশ্চিত করার দাবী জানান।

নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন সিএনজি চালিত ট্যাক্সির চালকগন কোন সময় আরটিসির সিদ্ধান্ত মানে নাই। আর যখন বিগত ১৩ মার্চ ‘১৩ যোগাযোগ মন্ত্রণালয় চট্টগ্রাম নগরীতে ৪ হাজার অটোরিক্সার লাইসেন্স প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছিল তখন তারা সাধারণ মালিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবীতে সভা, সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি নিরসনে সরকারী সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সত্যিকার অর্থে যাত্রীদের জিম্মি করে জনগনের পকেট কাটার উৎসবে লিপ্ত হয়েছিল।

এর আগে মিটারে সিএনজি ট্যাক্সি চালানোর জন্য বলা হলেও তারা সে নির্দেশনা না মেনে পুলিশের উপর চড়াও হলেও রহস্যজনক কারনে পুলিশ বা আরটিসি কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাই গুটিকয়েক অসৎ মালিক ও চালকদের অশুভ তৎপরতায় বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন, মিটারে সিএনজি চালাতে বাধ্য করা, নতুন অটোরিক্সার লাইসেন্স প্রদান, নগরীতে বর্তমানে লক্কর-ঝ্ক্কর বাসের কারনে সাধারন যাত্রীদের যাতায়ত, অফিস-আতালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়তে বাধ্য হয়ে স্বল্প সংখ্যক সিএনজি অটোরিক্সার চালকদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, সিএনজি অটোরিক্সার মালিক ও চালকরা নানা অযুহাতে বিশেষ করে গ্যাস সংকট, যানজট বাড়বে ইত্যাদি ঠুনকো অযুহাতে নতুন গাড়ী নামানোর বিরোধীতা করলেও সত্যিকার অর্থে হলো বাংলাদেশে সিএনজি অটোরিক্সা, বাস, ট্রাকসহ সকল ব্যবসায়ীদের মুল অস্ত্র হলো সাধারন মানুষকে জিম্মি করে নিজেদের পকেট ভারী করা। কারন রাস্তায় যদি গণপরিবহনে পর্যাপ্ত গাড়ী পাওয়া যায় তাহলে তাদের সেই অস্ত্র ভোতা হয়ে যাবে। এখন তারা যাত্রীদের জিম্মি করে ১০০ টাকার ভাড়া দ্বিগুন-৪গুন পর্যন্ত আদায় করছে। সেকারনে আমরা দেখি কোন সিএনজি মিটারে যায় না, যাত্রীর ইচ্ছায় ও তাদের গন্তব্যে যায় না, সরকারের নির্ধারিত মুল্যে কোন বাস ভাড়া আদায় হয় না, আদায় হয় তাদের নিজেদের ইচ্ছামতো। এখানে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা হিসাবে পুলিশের ভুমিকা হলো “ধরি মাছ না ছুই পানির মতো”। তারা লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করলেও রাতের আঁধারে পর্দার অন্তরালে সব ঠিক হয়ে যায়।

নেতৃব্ন্দৃ আরো বলেন ভোক্তাদের জাতীয় প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে ক্যাব যাত্রী ও ভোক্তা স্বার্থ সংস্লিষ্ঠ সকল মন্ত্রনালয় ও বিভাগে প্রতিনিধিত্ব করলেও মেট্রো বা আঞ্চলিক পরিবহন কমিটিতে কোন অস্থিত্বও নেই। সেকারনে সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আঞ্চলিক সড়ক পরিবহন কমিটিতে পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও তাদের সমর্থিত সরকারী প্রতিনিধি ছাড়া এখানে ভোক্তাদের কোন প্রতিনিধি নেই। যার কারনে তারা নিজেরাই তাদের সুবিধা মতো সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে থাকেন। সেকারনেই জনস্বার্থের পরিবর্তে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকের স্বার্থই প্রধান্য পেয়ে থাকে। এ অবস্থার পরিত্রানের জন্য গণপরিবহন সেক্টরে শৃংখলা বিধান ও ভোক্তাদের ভোগান্তি নিরসনে বিআরটিএ ও আরটিসি গুলিতে ভোক্তাদের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এ সমস্ত সংস্থাগুলিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। তাদের কর্মকান্ড জনসমক্ষে প্রকাশ করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে এবং সরকারের কঠোর মনিটরিং এর আওতায় আনতে হবে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সদস্য সচিব অজয় মিত্র শংকু প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই