চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর নিম্নাঞ্চলে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে গেছে। এছাড়া টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সড়কে পানি উঠায় বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রামের সাথে বান্দরবানের যোগাযোগ।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় চট্টগ্রামে ২৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নিচ্ছেন নতুন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও ৫৫ জন কাউন্সিলর।

টানা বর্ষণে নগরীর প্লাবিত এলাকার মধ্যে নগরীর বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, হালিশহর, আগ্রাবাদ, মোগলটুলি, পাঁচলাইশ, মুরাদপুর, ষোলশহর, চকবাজার, কাপাসগোলা, চাক্তাই, বাকলিয়া এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে নগরীর সড়কে যানবাহন কম। রিকশা ও অটো রিকশায় আদায় করা হচ্ছে দু-তিন গুণ বেশি ভাড়া।

এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লুঘুচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে লাইটারেজ জাহাজে পণ্য উঠানামায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।

অন্যদিকে জেলার ফটিকছড়ি, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, রাউজান, আনোয়ারা, বাঁশখালী, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও মিরসরাই উপজেলায় নিমাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে বান্দরবান-কেরানিহাট সড়কের মাহালিয়া ও বাজালিয়া বড়দুয়ারা এলাকা তলিয়ে গেছে। ফলে বান্দরবান সদরের সাথে সারাদেশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

শনিবার বিকেল থেকে এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এত সড়কের উভয় পাশে আটকা পড়ে যাত্রীবাহী অনেক গাড়ী। সাতকানিয়ার ছদাহা, কেউচিয়া, জনার কেউচিয়া, আমিলাইশ, নলুয়া, চরতিসহ বিস্তীর্ণ এলাকার বসত ঘরে পানি প্রবেশ করায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার।

বর্ষণ অব্যাহত থাকায় চন্দনাইশের ধোপাছড়ি, দোহাজারী, সাতবাড়িয়া, বৈলতলী, বরমা, বরকল ও জোয়ারা ইউনিয়নের অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হয়ে পড়া নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ জমির মৌসুমী ফসলের খেত পানির নীচে তলিয়ে পড়েছে। ফলে এসব খেতে উৎপাদিত সকল ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

টানা বর্ষণের কারণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি শংখনদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্ষণ আর কয়েকদিন অব্যাহত থাকলে শংখনদীর পানি দু’কূল উপচে পড়ার আশংকা করা হচ্ছে। এতে নদীর ভাঙনও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। এ নিয়ে নদীপাড়ে বসবাস করা মানুষের মাঝেও আতংক বিরাজ করছে। টানা বর্ষণের কারণে শংখনদীর ভাঙন রক্ষার কাজও বন্ধ হয়ে পড়েছে।

এদিকে বাঁশখালীতে প্রবল বর্ষণে চাম্বল, নাপোড়া, পুঁইছড়ি, সাধনপুর, পৌরসদর জলদী, কালীপুর, বৈলছড়ি ও পুকুরিয়া,গন্ডামারার আবাইত্যা ঘোনা চিংড়ি প্রজেক্টসহ বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ছড়াগুলোতে পানির স্রোত অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকাগুলোতে মাছের চিংড়ি ও অন্যান্য মাছের প্রজেক্ট গুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মাছ চাষীরা হতাশ হয়ে পড়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর ও নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর-বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছে এসে সাবধানে চলাচল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই