ঘুরে দাঁড়াতে খালেদার নতুন পরিকল্পনা

রাজনীতির মাঠে ঘুরে দাঁড়াতে নতুন পরিকল্পনা করছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।মূল দল এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্বে নতুন মুখ এনে ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীদের চাঙা করতে চান সাবেক প্রধানমন্ত্রী।পাশাপাশি পৌরসভা নির্বাচনের কারণে থমকে যাওয়া দেশব্যাপী সাংগঠনিক পুনর্গঠন কার্যক্রমও আবার জোরেশোরে শুরু করতে চায় দলটি।

পুনর্গঠন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এরই মধ্যে দলের দায়িত্ব পাওয়া নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন।

দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এর আগে কয়েকবার উদ্যোগ নিয়ে শেষ পর‌্যন্ত দলের জাতীয় কাউন্সিল করতে ব্যর্থ হলেও এবার মার্চ-এপ্রিলে কাউন্সিল করার প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, এখন সরকারবিরোধী বা সরকার পতন আন্দোলনের চেয়ে দল গোছানোর কাজে মন দিতে চাইছেন খালেদা জিয়া। এর মধ্যে অগ্রাধিকার তালিকায় আছে জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের অনানুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তটি। কারণ দলের সর্বশেষ কাউন্সিলের পর ইতিমধ্যে ছয় বছর পেরিয়ে গেছে। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই কাউন্সিলের পর বিভিন্ন কমিটিতে নির্বাচিত অনেকে এখন নিষ্ক্রিয়। কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছেন। দলের শূন্য মহাসচিবের পদে দীর্ঘ দিন ধরে ভারপ্রাপ্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।

অথচ দলের গঠনতন্ত্রে বলা আছে, জাতীয় কাউন্সিলে তিন বছরের জন্য দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হবে। সে হিসাবে গত ছয় বছরে দুটি কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি একটিও।

অবশ্য ২০১২ সালে কাউন্সিল হবে বলে গুঞ্জন উঠেছিল। পরে আবার ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ওই বছরের মার্চে কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।

কাউন্সিল করতে ব্যর্থ হওয়ায় বারবার নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে সময় নিতে হয়েছে সংসদের বাইরে থাকা দলটির। কেননা গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নির্বাচিত কমিটি করার কথা বলা আছে।

তবে উদ্যোগ নিয়েও কাউন্সিল করতে না পারার জন্য বিএনপির অভিযোগের তীর সরকারের দিকে। দলের নেতারা বলছেন, কয়েক বছর ধরে কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীদের যে হারে ধরপাকড় করা হয়েছে, তাতে কাউন্সিল করার পরিবেশ ছিল না।

এখন দলটি মনে করছে, আগের তুলনায় বর্তমানে পরিবেশ কিছুটা শান্ত। তাই তৃণমূলে পুনর্গঠন কার‌্যক্রম শুরু করা গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার জাতীয় কাউন্সিল করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে সক্রিয়ভাবে।

কাউন্সিল প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, “দলে গতি আনতে অবশ্যই কাউন্সিল করতে হবে। সে জন্য যে খুব বেশি সময় লাগবে তা নয়। আমি মনে করি, সুষ্ঠুভাবে কাউন্সিল করার জন্য দুই মাস সময়ই যথেষ্ট। সে ক্ষেত্রে মার্চ অথবা এপ্রিলে কাউন্সিল করা যায় কি না ভেবে দেখা হচ্ছে।”

বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, এবারের কাউন্সিলে সংশোধনী আসতে পারে বিএনপির গঠনতন্ত্রে। মূল দল ও অঙ্গসংগঠনের কমিটি সেই আদলে গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্থায়ী কমিটিসহ কেন্দ্রীয় বেশ কিছু পদে আসতে পারে নতুন মুখ। ৩৮৬ সদস্যের নির্বাহী কমিটির আকারও ছোট হতে পারে।

এদিকে কাউন্সিলের চিন্তাভাবনার পাশাপাশি বিএনপির ৭৪টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি পুনর্গঠনে আবার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। গত আগস্ট মাসে কেন্দ্র থেকে পাঠানো নির্দেশনা অনুযায়ী মেহেরপুরসহ ছয়টি জেলায় ইতিমধ্যে সম্মেলন হয়েছে। সম্মেলন করার পর্যায়ে আছে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, সিলেট জেলা ও মহানগর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, নাটোর, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও লক্ষ্মীপুর। ১০ শতাংশ জেলায় এখন পর্যন্ত পুনর্গঠনের তেমন কোনো কাজ হয়নি।

তাই নতুন করে আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে ভাবার আগে সারা দেশের জেলা কমিটিগুলোর কাজ শেষ করার কথা ভাবছে বিএনপির হাইকমান্ড।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দল পুনর্গঠনের সঙ্গে যুক্ত বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বলেন, “পৌরসভা নির্বাচন শেষ হয়েছে। এখন পুনর্গঠনের বাকি কাজ দ্রুত শুরু করা হবে।”

দলের ত্যাগী নেতাদের দিয়ে বিভিন্ন পর‌্যায়ের কমিটি পুনর্গঠন করার কথা ভাবা হচ্ছে বলেও জানান শাহজাহান।-ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই