ঘুরে আসুন রাজশাহীর চিরযৌবনা পদ্মায়

ইয়াজিম ইসলাম পলাশ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : সর্বনাশা পদ্মা নদী তোর কাছে শুধাই, বল আমারে তোর কি আর কূল কিনারা নাই, কূল কিনারা নাই। পদ্মা যতই সর্বনাশা হোক কিন্তু তার অকৃত্রিম সৌন্দর্যকে কি হার মানানো যায়? মাঝে মাঝে প্রকৃতির নিবিড় স্বাদ গ্রহণ করতে আমাদের সবারই ইচ্ছা করে। এই বর্ষায় প্রকৃতি যেন নবরূপে সজ্জ্বিত। বর্ষায় নদীগুলো যেন তাদের নবযৌবন ফিরে পায়। আর পদ্মা তো চিরযৌবনা। সারাবছরই পদ্মা তার নিজস্ব সৌন্দর্যে ভরপুর। তাই পদ্মার অকৃত্রিম সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য চলে আসতে পারেন বর্ষার এই দিনে। বর্ষার কথায় মনে পড়ে যায় হুমায়ুন আহমেদের বর্ষার কথা,‘যদি মন কাঁদে তবে চলে এসো এক বরষায়।’ নদীর জন্য কার না মন কাঁদে? তাও যদি হয় বর্ষায়! নদীর পাশে দাড়িয়ে বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়ার তৃপ্তিই আলাদা। ফুরফুরে বাতাস। মেঘলা আকাশ। মনে হচ্ছে আর কিছুক্ষনের মধ্যেই বৃষ্টি হবে। এমন নির্মল বাতাসে প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে নদীর ওপারের দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে হালকা কুয়াশার চাদরে মুড়ে আছে তাই ওপারের প্রাকৃতিক পরিবেশটা সবুজাভ মনে হচ্ছে।

প্রকৃতপক্ষে ওপারের হালকা বৃষ্টিকে কুয়াশার মতো মনে হচ্ছে। নদীর পাড়ে বসে ফুচকা খাওয়া হবে না তাই কি হয়? নদীর পাড়ে রয়েছে কিছু ফুচকা ও চায়ের দোকান। সাথে নদীর পাড়ে বসার জন্য রয়েছে বেঞ্চ ও চেয়ার। ফুচকা খেতে খেতে নদীর বুকে ছুটে চলা নৌকার দৃশ্য সত্যিই উপভোগ্য। মাঝে মাঝে দেখা মেলে পাখির ঝাঁকের। তবে সবথেকে ভালো লাগে নৌকাতে করে নদীর বুকে ঘুরতে। নদীর স্রোতের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটতে ছুটতে মাঝে মাঝে পাখির মতো ডানা মেলে উড়তে ইচ্ছে করে। মনে হয় এ ছোটার যদি শেষ না হতো তাহলে কতই না মজা হতো। নদীর ওপারে দেখা মেলে বিশাল চরের যা আগে নদীর অংশ ছিলো। চরের সবুজ ঘাসগুলো যেন একটু বেয়াড়াই বটে এর বাঁধাহীন বেঁড়ে ওঠাই এর সৌন্দর্যের মূল কারণ। পরম আদরে ঘাসগুলোকে ছুঁয়ে মনকে সিক্ত করার পাশাপাশি শুয়ে থাকার মজাই আলাদা।

নদীর ওপারে বেশ কিছুদুর যাওয়ার পর দেখা মেলে পদ্মা পাড়ের সংগ্রামী মানুষের জীবনচিত্র। প্রায় আট কিলোমিটার পর দেখা যায় ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত। তবে সীমান্তের কাছাকাছি যাওয়ার কোন যানবাহন নেই। আর সীমান্তের খুব কাছাকাছি না যাওয়াটাই ভালো। ফিরে আসার পথে সবথেকে অসাধারণ ও আকর্ষণীয় দৃশ্য হলো নদীর বুকে থাকা অবস্থায় সূযার্স্ত দেখা। গোধূলি লগ্নে সূর্যের লালচে আভা পদ্মার জলে মিশে চিকচিকে আলো যেন চারদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছিল। ধীরে ধীরে একসময় এই লালচে আভা মিশে যায় পদ্মার জলে। এ রকম নৈসর্গিক দৃশ্য দেখার ভাগ্য খুব কমই হয়। প্রিয় মানুষটির সাথে একসাথে সূর্য অস্ত যাওয়ার দৃশ্য দেখতে দেখতে মনে হয়ে যায় কাজী নজরুল ইসলামের দুটি লাইন, ‘আবার গাঙ্গে আসবে জোয়ার, দুলবে তরী রঙ্গে, সেই তরীতে হয়তো কেহ থাকবে তোমার সঙ্গে, দুলবে তরী রঙ্গে, পড়বে মনে সে কোন রাতে এক তরীতে ছিলে সাথে এমনি গাঙ্গে ছিল জোয়ার নদীর দুধার এমনি আধার তেমনি তরী ছুটবে- বুঝবে সেদিন বুঝবে।’

পদ্মা নদীতীরের পাশে রয়েছে একটি পার্ক। পার্কটির নাম পদ্মা গার্ডেন। পার্কটিতে ভালো মানের রেস্টুরেন্ট এর পাশাপাশি রয়েছে পিকনিক স্পট। আরো আছে সীমান্ত অবকাশ নামক আরো একটি অবকাশ কেন্দ্র। বর্ষার এই দিনেও এতো মানুষের ভিড়। দেখে মনে হয় যেন পহেলা বৈশাখ বা ভালোবাসা দিবসের মতো উৎসবের দিন। চাইলেই চলে আসতে পারেন পরিবারসহ পিকনিকে।
কীভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেন দুইভাবেই আসতে পারেন রাজশাহীতে। গাবতলী থেকে বাসভাড়া বাসভেদে ৪০০-৭০০ টাকা আর ট্রেনে ৩৬০-৬০০ টাকা। বাসে আসলে বাসস্ট্যা- থেকে পদ্মার পাড়ে যেতে হবে রিকশা বা অটোতে করে। আর ট্রেনে আসলে রেল স্টেশন থেকে রিকশা করে পদ্মার পাড়ে যেতে হবে। রিকশা বা অটোতে জনপ্রাতি ১০-১৫ টাকা ভাড়া নিতে পারে। আপনি রাজশাহীতে কয়েকদিন থাকতে চাইলে রাজশাহীর সাহেববাজারে কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। সেখানে থাকতে পারেন। ভাড়া আবাসিক হোটেলভেদে ৩০০-১৫০০ টাকা। রাজশাহীতে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে। চিড়িয়াখানা, জিয়া পার্ক, নির্মল চর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড, শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালাসহ আরো অনেক দর্শনীয় স্থান। আপনি চাইলে একইসাথে সবগুলো দর্শনীয় স্থান থেকে ঘুরে আসতে পারেন।



মন্তব্য চালু নেই