ঘুরে আসুন মধুপুরের রাবার বাগান

ইয়াজিম ইসলাম পলাশ, (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) : ভ্রমণ করতে কার না ভালো লাগে? মাঝে মাঝে প্রকৃতির বুকে হারিয়ে যেতে আমাদের সবারই ইচ্ছে করে! প্রকৃতির কাছাকাছি এলেই মন একধরনের প্রশান্তিতে ভরে যায় কারণ প্রকৃতি আমাদের বিনম্র হতে শিক্ষা দেয়। শহুরের যান্ত্রিক জীবনের ফাঁকে এক চিলতে সময়ের জন্য ঘুরে আসতে পারেন ভিন্নধর্মী প্রকৃতির এক অপরূপ নিবিড় মেলবন্ধন থেকে। বলছিলাম মধুপুরের পীরগাছা রাবার বাগানের কথা। সম্পূর্ণ কৃত্রিম এরুপ বাগান সত্যিই মনভুলানো অকৃত্রিম সৌন্দর্যের প্রতীক।

কাঁচা সবুজ রঙের পাতা। সুউচ্চ বৃক্ষের সারি। ঠিক যেন স্কেল দিয়ে মেপে মেপে একই সমান্তরালে লাগানো গাছগুলো। যতদূর চোখ যায় শুধু গাছ আর গাছ। চারদিকে সবুজের সমারোহ। দেখলেই মন ভরে যায়। গাছগুলোর নাম রাবার গাছ। আর বলছিলাম মধুপুরের পীরগাছা রাবার বাগানের অকৃত্রিম সৌন্দর্যের কথা। দুধারে হাজারো গাছ আর এরই মাঝখানে সুবিশাল পথ। পথ চলতে চলতে মনে হয় এরুপ পথ যদি শেষ না হতো। বাগানের আসল সৌন্দর্য হচ্ছে যেদিকেই দু চোখ যায় দেখতে একই রকম লাগে আর বাগানের সব রাস্তাগুলোই একই রকম সুন্দর। বাগানটির আরেক অন্যতম সৌন্দর্য হলো এটি একেক ঋতুতে একেক রকম সাজে সজ্জিত হয়। শীতকালে গাছের সকল পাতা ঝরে গিয়ে যেমন রিক্ততায় পরিণিত হয় তেমনি বর্ষায় ফিরে পায় নতুন যৌবন। কিছুদূর এগিয়েই চোখে পড়ে বাগানের অফিস। অফিসের পাশেই রয়েছে গেস্টহাউজ। চারদিকে নানা রঙের ফুলের গাছ তারই মাঝে একটি আধাপাঁকা বিল্ডিং। গেস্টহাউজে অনুমতি সাপেক্ষে থাকার সুযোগ ও মেলে। রঙিন চালের ছাউনিতে গেস্টহাউজটি যেন প্রকৃতিরই একটা অংশ। বৃষ্টির দিনে মেলে বৃষ্টিবিলাসের সুযোগ। এমন বর্ষার দিনে এককাপ চা খেতে খেতে বৃষ্টি দেখার মজাই আলাদা। বাগানের প্রতিটা গাছের পাতা থেকে বৃষ্টি ঝড়ে পড়ার অপরূপ দৃশ্য আর টিনের গায়ে বৃষ্টি পড়ার শব্দ মিলে যেন ভিন্নধর্মী এক অনুভূতির সৃষ্টি করে। আর বাগানে জোছনা রাতে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। এসময় ভিন্ন রুপে সাজে বাগানের অপরূপ দৃশ্য।

1463910846-2

অফিসের পূর্বদিকের রাস্তা দিয়ে কিছুদূর এগিয়েই দেখা যায় সুবিশাল কারখানা, যেখানে রাবারশিট তৈরি করা হয়। সকালে দুধের মতো সাদা কাঁচা রাবার সংগ্রহ করে জমা করে রাখা হয় বড় বড় হাউজে। সেখান থেকে নানা প্রক্রিয়াজাতকরণ ও মেশিনের ব্যবহারের মাধ্যমে তৈরি করা হয় রাবারশিট। এই রাবারশিট শুকানো ও আগুনে তাপ দিয়ে লালচে ভাব না হওয়া পর্যন্ত তাপ দেওয়া হয়। প্রক্রিয়াগুলো সত্যিই অসাধারণ।

আমাদের ব্যবহার্য জিনিসপত্রের যে সুবিশাল অংশ এই রাবার থেকে তৈরি তার প্রস্তুতপ্রণালী দেখার মধ্যে একধরনের পুলকিত অনুভূতি পাওয়া যায়। মনে পড়ে যায় কবিতার দুটো লাইন- ‘বহুদিন ধরে বহুদেশ ঘুরে, দেখিতে গিয়েছিলাম পর্বতমালা। দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দু’পা ফেলিয়া, একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু’। বাগানের মাঝামাঝি জায়গায় দেখা যায় গারোদের বসতি ও তাদের সংগ্রামি জীবনবৈচিত্র। বাগানের শেষভাগে দেখা মিলে মধুপুরের গড়। এদিকে কিছু বন্য পশু-পাখি দেখা যায়। বিশেষ করে বানরের। তবে হাতে খাবারের দ্রবাদি নিয়ে এদিকে প্রবেশ না করাটাই ভালো। বনের গভীরে প্রবেশের পূর্বে স্থানীয় ও টহলরত পুলিশদের জানিয়ে রাখা ভালো।

রাবার বাগান সম্পর্কিত কিছু তথ্য:

সর্বপ্রথম রাবার গাছ আবিস্কার করেন স্যার হেনরি উইকহ্যাম আমাজান নদীর অববাহিকা থেকে ১৮৭৬ সালে। আর বাংলাদেশে সর্বপ্রথম রাবার চাষ শুরু হয় ১৯৬১ সালে কক্সবাজারের রামুতে সরকারি উদ্যোগে। ৩০০০ একর আয়তনের মধুপুর পীরগাছা রাবার বাগানটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালে। বাগানটিতে রাবার গাছের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৫৪ হাজার। শুধু রাবার গাছই নয় এর পাশাপাশি নানা ধরনের ফল ও ফুলের গাছও রয়েছে।

1463910861-5

কীভাবে যাবেন?

ঢাকা মহাখালী থেকে সরাসরি মধুপুরের বাস রয়েছে। ভাড়া বাসভেদে ২০০-৩০০ টাকা। মধুপুর বাসস্ট্যা- থেকে রাবার বাগান ১০ কি.মি দূরে অবস্থিত। বাসস্ট্যান্ড থেকে রাবার বাগানে অটোরিকশা, সি.এন.জি অথবা মটর সাইকেলে করে যাওয়া যায়। ভাড়া অটোরিকশা ও সি.এন.জি তে ২৫-৩৫ টাকা। তবে মটর সাইকেলে ভাড়া একটু বেশি হলেও বাগানের ভেতর ঘুরার জন্য মটর সাইকেলই সবথেকে ভালো। পুরো বাগান ঘুরার জন্য মটর সাইকেলে ৩০০-৬০০ টাকা নিতে পারে।

কোথায় থাকবেন?

তাই রাবার বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য কিছুদিন থাকতে চাইলে মধুপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশেই কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। ভাড়া কক্ষভেদে ২০০-৫০০ টাকা। তবে বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে বাগানের গেস্ট হাউজে থাকার সুযোগ রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই