ঘুম থেকে ভোরে উঠতে পারত না, সেই ঘুমের মধ্যেই প্রিয়ার মৃত্যু হল

সকাল সকাল কিছুতেই ঘুম থেকে উঠতে পারত না। তার জন্য বাবা-মা থেকে শুরু করে স্কুলের শিক্ষিকারাও বকাবকি করতেন। শুক্রবার গভীর রাতে পাতিপুকুরের সুভাষ কলোনিতে সেই ঘুমের মধ্যেই আগুনে পুড়ে মৃত্যু হল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী প্রিয়া অধিকারীর (১৫)।

পরীক্ষায় প্রিয়ার রেজাল্ট ভালই হতো। কিন্তু ঘুমকাতুরে হওয়ার কারণেই সমস্যা ছিল স্কুলে উপস্থিতির হার নিয়ে। সেই ঘুমই যে কাল হবে, কে জানত! আগুন লাগার পর কলোনির আরও অনেকে বাড়ির বাইরে কোনওমতে বার হতে পারলেও প্রিয়া আর তার কাকা নিমাই অধিকারী তা পারেননি। প্রিয়ার মা সোমা আশ্রয় নিয়েছিলেন ২১ নম্বর রাজা মণীন্দ্র রোডে এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সোমার কোলে প্রিয়ার একরত্তি বোন। তার বয়স সবে এক বছর দু’মাস। কোনওমতে আগুনের গ্রাস থেকে ছোট মেয়েকে বাঁচাতে পেরেছেন সোমা। শনিবার সকালে সেই সন্তানকেই কোলে আঁকড়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে তিনি জানতে চাইছিলেন সকলের কাছে, প্রিয়া ভাল আছে তো? তখনও সোমা বিশ্বাস করতে পারছেন না যে, বড় মেয়ের অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে।

সোমা বলছিলেন, ‘‘খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে ছিল। কারও সঙ্গে কোনও রকম ঝামেলায় যেত না। বাড়ির বাইরেও বেরোতো না।’’ সোমাই জানালেন, তার মেয়ে শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন দেখত। সোমার কথায়, ‘‘আমাকে প্রায়ই বলতো, আমি টিচার হবো! আমি তখন বকে বলতাম, সকালবেলা ঘুম থেকে উঠতে পারিস না, কী করে টিচার হবি!’’ প্রিয়ার পিসি আশা অধিকারী বলছিলেন, ‘‘ঘুমোতে যাওয়ার আগে বলল, আমাকে ডিস্টার্ব করিস না! সকালে আমাকে উঠতে হবে। সেই ঘুম আর ওর ভাঙল না!’’

স্কুলের শিক্ষিকারাও জানাচ্ছেন, ভাল ছাত্রী হলেও হাজিরায় অনিয়মিত ছিল প্রিয়া। সে যে স্কুলে পড়ত, সেই ‘শিল্পকলা শিক্ষা মন্দিরে’ সকাল ৬টায় স্কুলে যেতে হতো। কিন্তু প্রিয়াকে কিছুতেই ঘুম থেকে তোলা যেত না।

স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা বনানী সেনগুপ্তের কথায়, ‘‘ও সকালে ঘুম থেকে উঠতে চাইত না। তাই ওর মা’ই আমাদের বকতে বলেছিল।’’ তবে ঘুম থেকে ঠিক সময়ে উঠতে না পারলে কী হবে, পড়াশোনা করে প্রিয়া ঠিক তা পুষিয়ে দিত বলেই জানাচ্ছেন স্কুলের শিক্ষিকারা। তাঁরা জানালেন, জীবনবিজ্ঞান প্রিয় বিষয় ছিল প্রিয়ার। টেস্ট পরীক্ষার পরে শেষ মুহূর্তের পড়া বুঝে নিচ্ছিল সে। খুঁটিয়ে জানতে চাইছিল, তার কোথায় কী ত্রুটি রয়েছে। কোন বিষয়ে আরও মনোযোগ দিতে হবে। বনানীর কথায়, ‘‘ওর সবচেয়ে বড় গুণ ছিল ঠান্ডা মাথা। বকাবকি করলেও কিছু বলত না। কখনও কারও সঙ্গে কোনও ঝামেলা করতে দেখিনি।’’

গত মাসেই টেস্ট পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ঘটনাচক্রে, এদিন সকালেই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের টেস্ট পেপার্স দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রিয়ার তা আর আনা হল না!



মন্তব্য চালু নেই