ঘুমধুমের পাহাড়ে আগুন : ৫ হাজার একর বনসম্পদ পুড়ে ছাই, ১০ জন অগ্নিদগ্ধ

উখিয়া সীমান্ত সংলগ্ন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম পাহাড়ে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৫ হাজার একর সরকারি বনসম্পদ ও ব্যক্তি মালিকানাধীন বাগান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এসময় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ২ জন বাগান মালিকসহ ৬ জন গুরুতর আহত হয়েছে। তাদেরকে কক্সবাজার সদরসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত সোমবার অগ্নিকান্ডের সৃষ্টি হলেও তা গ্রামবাসী আয়ত্তে আনতে না পারায় অগ্নিকান্ডের ভয়াবহতা আরো বৃদ্ধি পেয়ে মিয়ানমারের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রশাসন, বিজিবি, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

সরেজমিন ঘটনাস্থল নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের শিলের বাঁধ, চিক্কুমের পাহাড়, হাদিন্যার বুইজ্যার ঘোনাসহ নজির আহমদের বাগান এলাকা ঘুরে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত সোমবার সীমান্তের ৪৩ নং পিলারের নিকটস্থ অলি ফকিরের ছনখোলা থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়। ক্রমশ এ আগুনের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ৪৩নং পিলার থেকে ৪১নং পিলার পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে আগুনের লেলিহান শিখাঁ ছড়িয়ে পড়ে।

ফরিদ আহমদের আম বাগানের পাহারাদার আব্দুন্নবী জানায়, সৃষ্ট অগ্নিকান্ডে টাইপালং গ্রামের নুরুল আমিনের ২৫ একর আম বাগান, টাইপালং গ্রামের জসিম উদ্দিন, দরগাহবিল গ্রামের ছুরুত আলম, টাইপালং গ্রামের প্রতিবন্ধী আব্দুর রহমান, তুলাতলী গ্রামের সিরাজ মিয়া, দরগাহবিলের বদিউর রহমান, মেহের আলী, মোঃ শরিফ, ফকির আহমদ, ছৈয়দ নূর, রেজুপাড়া এলাকার হায়দার আলী, তুমব্র“ এলাকার আবু তাহেরসহ ২০/২৫ জনের ব্যক্তি মালিকানাধীন ছনখোলা, আমবাগান, আকাশমনি, গর্জন বাগান, সেগুন বাগান ও কলা বাগানসহ প্রায় ৫ হাজার একর সরকারি বনসম্পদ ও ব্যক্তি মালিকানাধীন বনজ, ফলজ বাগান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এসময় আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে গিয়ে টাইপালং গ্রামের মাস্টার নুরুল আমিন (৩৭), জসিম উদ্দিন (৩০) ও তুলাতলীপাড়া গ্রামের নাসির উদ্দিন (৩৫), সাহাব উদ্দিন (২৮), বাদশাহ মিয়া (৩০), নুরুল ইসলাম(৩৬)সহ ৬ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছে। টেকনাফ ফায়ার সার্ভিসের ৭ সদস্যের একটি দল আগুন নেভানোর জন্য ঘটনাস্থলে রওনা হয়ে মাঝপথে দূর্গম পাহাড়ি পথ হওয়ার কারণে আর এগুতে পারেনি।

বুধবার বেলা ১১ টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাফায়েত মোঃ শাহেদুল ইসলাম, আমতলী বিজিবি, থোয়াঙ্গ্যাঝিরি বিজিবি, ঘুমধুম পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে নাইক্ষ্যংছড়ির ইউএনও জানান, ৪৩ নং সীমান্ত পিলার সংলগ্ন অলি ফকিরের ছনখোলা থেকে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডে প্রায় ৫ হাজার একর সরকারি বনসম্পদ ও ব্যক্তি মালিকানাধীন বাগান পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আগুন বর্তমানে মিয়ানমারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ বাগান মালিকদের তালিকা তৈরি করে তাদেরকে সরকারি ভাবে সাহায্য সহযোগীতা করা হবে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।

 

উখিয়া হাসপাতালের টেন্ডার নিয়ে ঠিকাদারদের মধ্যে চরম উত্তেজনা

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পথ্য সরবরাহের টেন্ডার নিয়ে ঠিকাদারদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে ৭/৮ জনের একদল ঠিকাদার হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী পুন:টেন্ডার আহ্বানের দাবী জানিয়ে কতিপয় কর্মচারীদের প্রতি বিরূপ মন্তব্য করতে দেখা গেছে।

ঠিকাদারদের অভিযোগ, প্রতি বছর বছর গোপনে টেন্ডার আহ্বানের মাধ্যমে হাসপাতালের অফিস সহকারি ফরিদ আহমদ ও স্যানিটারী ইন্সপেক্টরের দায়িত্বে নিয়োজিত নুরুল আলম ঐশী এন্টারপ্রাইজের নাম ভাঙ্গিয়ে পথ্য সরবরাহের ঠিকাদারী হাতিয়ে নিয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা লুটপাট করে আসছিল।

হাসপাতালের তালিকাভূক্ত ঠিকাদার গয়ালমারা গ্রামের ফরিদুল আলম অভিযোগ করে জানান, চলতি অর্থ বছরে পথ্য সরবরাহের দরপত্র আহ্বান করে গোপনে টেন্ডার হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে সিভিল সার্জন বরাবরে অভিযোগ করা হয়। এঘটনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উক্ত টেন্ডার স্থগিত করার নাম ভাঙ্গিয়ে গোপনে তাদের পছন্দের লোকজনকে পথ্য সরবরাহের কার্যাদেশ দিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ঠিকাদার ও রত্নাপালং ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর প্রতিবাদ করে জানান, পুন: টেন্ডার আহ্বানের মাধ্যমে সর্বনিু দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়া না হলে অফিস সহকারি ও স্যানিটারী ইন্সপেক্টরকে এ হাসপাতাল থেকে বিদায় নিয়ে অন্যত্রে চলে যেতে হবে। তাদের কারণে হাসপাতালে সার্বিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

এসময় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছৈয়দ মোহাম্মদ নোমানসহ ১০/১২ জন ঠিকাদার প্রতিবাদ জানাতে দেখা গেছে। জানতে চাওয়া হলে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রবিউর রহমান রবি জানান, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ঢাকায় ট্রেনিংয়ে আছেন। তাই এব্যাপারে তিনি কিছু মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে অভিযুক্ত অফিস সহকারি ফরিদ আহমদ বিগত অর্থ বছরে হাসপাতালে পথ্য সরবরাহের কথা স্বীকার করলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তার নয় বলে দাবী করেন।

এব্যাপারে জানতে কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মখলেছূর রহমান খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে সিভিল সার্জন অফিসের একজন কর্মচারী পুন: টেন্ডার আহ্বানের কথাটি নিশ্চিত করেছেন।



মন্তব্য চালু নেই