ঘাটাইলের ধলাপাড়া বিট কর্মকর্তার ঘুষ বানিজ্য

ঘাটাইলে বন বিভাগের গাছ কেটে করাত কল ও বাসা বাড়ী তৈরী

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়া বিট কর্মকর্তা খলিলুর রহমান বনের গাছ রক্ষা করার বদলে  নিজেই বনের গাছ বিক্রি করে দিচ্ছে এলাকার কাঠচোরদের কাছে। সেই সাথে মোটা টাকায় পকেট ভরে  বনবিভাগের গেজেটভূক্ত জমি একে একে তুলে দিচ্ছেন ভূমি দস্যুর হাতে। ফলে একদিকে হারিয়ে যাচ্ছে বন, অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে তার রাজস্ব সেই সাথে প্রকৃতি হারাচ্ছে তার পরিবেশ।
সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, ধলাপাড়া রেঞ্জের আওতাধীন ধলাপাড়া বিটকর্মকর্তা খলিলুর রহমান ঘাটাইলে যোগদানের পর থেকেই এলাকার কাঠচোর ও ভূমি দস্যুর সাথে সখ্য গড়ে তোলে। প্রতিদিন ডিউটির নাম করে কাঠচোর ও ভূমি দস্যুর সাথে আড্ডায় মেতে থাকে। আর সুযোগ বুঝে বিটকর্মকর্তা  কাঠচোরদেরকে গাছকাটার সুযোগ করে দেয়। পরে কাটা গাছের গুড়ি উপরে ফেলে বনের জমি অলিখিতভাবে তুলে দিচ্ছে ভূমি দস্যুদের হাতে। ফলে বনবিভাগের গেজেট ভূক্ত জমিতে দিন দিন গড়ে উঠেছে পোলট্টি ফার্ম, করাত কল, হ্যাচারী, কোচিং সেন্টার, মাদ্রাসা, কারখানা, গুদাম ও বাসাবাড়ী। এভাবেই বেদখল হয়ে পড়ছে বন বিভাগের জমি। সরেজমিনে গিয়েও এর সত্যতা পাওয়া যায়।
জানা যায় ধলাপাড়া বিটের আওতাধীন মুরাইদ, মধুরচালা, দুলালিয়া, শাপলাপাড়া, নয়াপাড়া, সিংহচালা, শালিয়াবহ ও আকন্দেরবাইদ মৌজায় বনবিভাগের রোপনকৃত গাছের ৭০ ভাগই চুরি হয়ে গেছে । সরকারী কাগজে কলমে বনবিভাগের বাগান থাকলেও ভূমি দস্যুরা সেইসব জমিতে তুলা, আলু ও আনারসের চাষ করেছেন। সেই সাথে গড়ে তুলছেন অবৈধ স্থাপনা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মুরাইদ মৌজায় ৩২৮ দাগে-১৫.৪০ একর জমির উপর বনবিভাগের রোপনকৃত গাছ নাই বললেই চলে। ঐ গ্রামের নিয়ামুদ্দিনের ছেলে মোস্তফা মিয়া বনের গাছ কেটে গড়ে তুলছেন নিজের  বাসাবাড়ী, পোল্ট্রি ফার্ম ও করাত কল। মুরাইদ গ্রামের মোস্তফা মিয়া মাদরাসার নামের নিজস্ব জমি নিজে ভোগ করে বন বিভাগের জমিতে গড়ে তুলছেন মাদরাসা। পুরো জমিতে চাষ করেছেন আনারস।  একই মৌজায় ১৪৭৮ নং দাগে ১৩.৭০ একর জমিতে মোস্তফা মিয়া বনের গাছ কেটে  তার মেয়ের জামাই জাহিদ কে দিয়ে তুলা চাষ করাইয়াছেন। সলিং বাজারের বাসিন্দা আবু হানিফ জানায় মুরাই মৌজায় বনবিভাগের ১০৯৪, ১৪৭৮ ও ৩২৮ দাগের ৬৪.৬০ একর জমির উপর বনবিভাগের রোপনকৃত গাছ মোস্তফা মিয়া ও  তার সহযোগী রফিক তরফদার গোলাপ হোসেন, ইউসুফ, হযরত, কদ্দুস ও ছাত্তার গংরা বিটকর্মকর্তা খলিলুর রহমানকে টাকা দিয়ে সরকারের প্রায় কোটি টাকা মূল্যের গাছ কেটে বিভিন্ন করাত কলে বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন বীটকর্মকর্তা খলিলুর রহমান আর কিছুদিন ঘাটাইলে থাকলে ধলাপাড়া বীটে বন বলতে কিছু থাকবে না। বনবিভাগের জমিতে কিভাবে মুরগীর ফার্ম, করাত কল স্থাপন করছেন এ বিষয়ে মোস্তফা মিয়ার নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন বীট কর্মকর্তার পরামর্শে আমার নিজের জমিতেই সবকিছু স্থাপন করেছি। বন বিভাগের জমি কিভাবে আপনার নিজস্ব হয় কাগজপত্র দেখতে চাইলে অপারগতা প্রকাশ করেন।

প্লটের মালিক ও মুরাইদ গ্রামের বাসিন্দা ফজর আলী জানায় একই মৌজায় ৩৩৫ দাগে ৩.২৫ একর বন বিভাগের জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো থাকলেও মুরাইদ গ্রামের মোতালেব, সুরুজ ও ফজলু মিয়া গত ১লা নভেম্বর প্লটের ৭টি সেগুন গাছ সহ অন্যান্য ৬৪টি গাছ কেটে গারোবাজার করাত কলে বিক্রি করে দেয়। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন প্লটের গাছ কাটার সময় বিটকর্মকর্তা খলিলুর রহমানকে সংবাদ দিলেও  তিনি গাছ জব্দ না করে তাদের সাথে দেখা করে চলে যান। মুরাইদ গ্রামের জহুরুল ও লতিফ জানায়  আমরা বিভিন্ন সময় চোরাই গাছ জমা করে  বীট কর্মকর্তাকে সংবাদ দিয়েছি তিনি বরাবরই গাছ জব্দ না করে চোরদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলে গেছেন।  বনের গাছ কাটা ও মুরগীর ফার্ম স্থাপন করার বিষয়ে ধলাপাড়া বিট কর্মকর্তা খলিলুর রহমানের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাবলিক বলে আমার জমি, আমরা বলি সরকারের জমি এ নিয়ে ঝামেলায় আছি ভাই। তবে নেতা মেম্বার সাহেব কে বলেছি তিনি কাগজপত্র দেখে একটা ফয়সালা দিবেন । বনবিভাগের জমি নেতা কিভাবে ফয়সালা দিবেন জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে মোবাইলের লাইন কেটে দেন।
ধলাপাড়া বিটের গাছ চুরি ও জমি বেদখল হওয়ার বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন- গাছ চুরি ও জমি বেদখল হয়ে যাওয়া এটা তারা কোন বিষয়ই মনে করেন না, তারা সবসময় নিজেদের পকেট ভারী করতে গরিবের নামে মামলা দিয়ে ধনীদের বাঁচাতে বেশি ব্যস্ত থাকে।
এ বিষয়ে ধলাপাড়া রেঞ্জার আবু জাফরের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন সংক্রান্ত কোন বিষয় হলে আমাকে জানাবেন আমি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।


মন্তব্য চালু নেই