ঘরোয়া উপায়ে নিয়ন্ত্রণে আনুন উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ার পর সবার আগে কাঁচা লবণ খাওয়া বন্ধ করা হয় এবং খাবারে লবণের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিজের জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন আপনিও। এসব পরিবর্তন আপনার হৃদযন্ত্রকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে, কমিয়ে রাখবে বিভিন্ন হৃদরোগের ঝুঁকি।

১) হাঁটুন
অল্প একটু ব্যায়ামই অনেকটা উপকার করতে পারে। প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করুন। এটা আপনার ওজন কমাতেও সহায়ক হবে।

২) পটাশিয়াম খান
সোডিয়াম উচ্চ রক্তচাপের জন্য যেমন খারাপ, পটাশিয়াম তেমনি ভালো। প্রতিদিন ৪.৭ গ্রাম পটাশিয়াম খাওয়া জরুরী কিন্তু তা অনেকেই খান না। কলা, পালং শাক, মিষ্টি আলুতে থাকে অনেকটা পটাশিয়াম। এসব খাবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।

৩) ওষুধ খান নিয়ম করে
আপনি ওষুধ খাওয়া শুরু করছেন কিন্তু রক্তচাপ কমছে না- হয়তো আপনি ওষুধটা সময়মত খাচ্ছেন না বলেই এমন হচ্ছে। ডাক্তারের সাথে কথা বলে ওষুধ খাওয়ার সবচাইতে ভালো সময়টা জেনে নিন। এরপর রুটিন মেনে সেই সময়ে ওষুধ খান। দরকার হলে ফোনে রিমাইন্ডার দিয়ে রাখুন, কিন্তু ওষুধ বাদ দেবেন না।

৪) লবণের বদলে গোলমরিচ
লবণ খাওয়া কমিয়ে দিলে অনেকের কাছেই খাবার বিস্বাদ মনে হয়। এই সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করতে পারেন গোলমরিচের গুঁড়ো। এর পাশপাশি রসুন, বেসিল এবং লেবুর মত স্বাদগুলো ব্যবহার করুন। এতে আপনার লবণ খাওয়ার ইচ্ছে কমে আসবে।

৫) প্রেশার মাপার যন্ত্র
ইদানিং সব এলাকাতেই ফার্মেসিগুলোতে ব্লাড প্রেশার মাপার যন্ত্র থাকে। কিন্তু আপনার নিজের বাড়িতেই এমন একটি যন্ত্র থাকা উচিৎ। যারা নিয়মিত বাড়িতে ব্লাড প্রেশার চেক করেন, তাদের প্রেশার কম থাকে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যাপারে তারা বেশি সচেতন থাকেন।

৬) কফির বদলে চা
প্রতি কাপ চা পানের সাথে সাথে সিস্টোলিক প্রেশার কমতে পারে দুই পয়েন্ট এবং ডায়াস্টোলিক প্রেশার কমতে পারে এক পয়েন্ট। কিন্তু চার কাপের বেশি পান করলে এসব উপকার পাওয়া যাবে না।

৭) মেডিটেশন করুন
মেডিটেশন স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে, পাশাপাশি রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করতে পারে। স্ট্রেস কম রাখাটা জরুরী। প্রতিদিন অন্তত পাঁচ মিনিট মেডিটেশনের পেছনে ব্যয় করুন এবং মন শান্ত করে এমন কোনো কথা চিন্তা করুন।

৮) খান ডার্ক চকলেট
রক্তনালীর দেয়াল শক্ত থাকলে তা রক্তচাপ বাড়াতে পারে। কিন্তু ডার্ক চকলেটে ফ্লাভোনয়েড থাকে যা আর্টারি নমনীয় রাখে। প্রোটিন তিন আউন্স ডার্ক চকলেট খাবার চেষ্টা করুন। মিল্ক চকলেটে এই উপকারিতা পাবেন না।

৯) হাত ধরুন
বিপর্যয়ের সময়ে ১০ মিনিট প্রিয়জনের হাত ধরে থাকাটা খুবই উপকারী রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে। আর বিপত্তি কেটে গেলে আলিঙ্গন করাটাও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকরী।

১০) ঘুমান নিশ্ছিদ্র নীরবতায়
হৈচৈ শব্দদূষণের মাঝে ঘুমানোটা রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। ঘুমান নীরব একটি ঘরে। অথবা ইয়ারপ্লাগ বা ইয়ারমাফ ব্যবহার করুন। আপনি যদি নাক ডাকেন, তাহলে এ ব্যাপারে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।

১১) দুই গ্লাস কমলার রস
সকালে এবং রাতে এক গ্লাস করে কমলার রস পান করলে সিস্টোলিক ব্লাড প্রেশার গড়ে ৭ শতাংশ এবং ডায়াস্টোলিক ব্লাড প্রেশার ৪.৬ শতাংশ কমে বলে এক গবেষণায় দেখা যায়। এতে বেশি পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে বলে সম্ভবত এই উপকারিতা পাওয়া যায়।

১২) পোষা প্রাণী রাখুন বাড়িতে
পোষা প্রাণীর সাথে সময় কাটালে মন ভালো হয়ে যায় অনেকের। এই পোষা প্রাণীর সান্নিধ্য অনেক সময়ে ওষুধের মতোই কাজ করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে।

কিছু খাবার উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে, যেমন-
– ফ্যাট ফ্রি দই
– তেলাপিয়া মাছ
– কলা
– কিউই ফল
– লাল ক্যাপসিকাম
– ব্রকোলি
– অ্যাভোকাডো
– সয়াবিন
– হোল গ্রেইন কার্বোহাইড্রেট
লবণ বাদ দেবার পাশপাশি এড়িয়ে চলুন ধূমপান, কমিয়ে দিন চর্বিযুক্ত খাবার ও জাঙ্ক ফুড। জীবন যাপনে ছোট এসব পরিবর্তন আনলেই আপনি অনেকটা সুস্থ থাকতে পারবেন।



মন্তব্য চালু নেই