ঘরে ফেরার অপেক্ষায় বিএনপির অর্ধশতাধিক সংস্কারপন্থি

প্রায় দশ বছর ধরে অপেক্ষায় থাকা বিএনপির আলোচিত প্রায় অর্ধশতাধিক সংস্কারপন্থি নেতাকে এবার ঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে বিএনপি। হাইকমান্ডের এই উদ্যোগে সরাসরি কেউ বিরোধীতা না করলে ভেতরে ভেতরে সমালোচনার মাঝেও ইতিবাচক দেখছে দলটির নেতাকর্মীরা। তবে দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন এরফলে দল সারাদেশে সাংগঠনিকভাবে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে, শক্তিশালী হবে এবং আগামীতে দলের মুল নেতৃত্বের পথচলা আরো মসৃণ হবে।

সংস্কারপন্থিদের দলে ফেরানোর হাইকমান্ডের এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে চান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসবে এটাই তো স্বাভাবিক। তাই না। এটা নিয়ে মন্তব্য করার কী থাকতে পারে। সারাদেশে দলের সাংগঠনিক বিষয়টি দেখভাল করছেন ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজাহান। তিনি বলেন, অতীতের ভুল ভ্রান্তি স্বীকার করে যারা দলের প্রতি নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করবে এবং ভবিষ্যতে তারা এই ধরণের ভুল পথে আর হাটবে না এই আশ্বাস দেওয়াদেরকে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বাকি যারা আছেন তারাও যদি এমনটা করেন তাহলে তাদের ব্ষিয়ে দলের হাইকমান্ড অবশ্যই বিবেচনা করবেন।

তবে দলটির সুত্র জানায়, যেসব সংস্কারপন্থি নেতা এখনো অন্য দলে যাননি বা র্দীঘদিন ধরে দলের মুল ধারার বাইরে থাকলেও তাদের স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকায় এখনো জনপ্রিয়। তাদের নির্বাচনী এলাকায় এখনো সংস্কারপন্থিদের বাইরে বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি করা সম্ভব হয়নি এসব নেতাদেরকে আগে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিনশ আসনে বিএনপি যাতে দলীয় প্রার্থী নিশ্চিত করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে সংস্কারপন্থিদের দলে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

যাদেরকে দলে ফেরানো হচ্ছে তাদের মধ্যে সাবেক দুই এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল ও জহির উদ্দিন স্বপনকে ইতিমধ্যে গুলশান কার্যালয়ে ডেকে কথা বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরবাইরে আরো যারা ডাকের অপেক্ষায় রয়েছেন তাদের মধ্যে সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, বগুড়ার সাবেক সংসদ সদস্য ডা. জিয়াউল হক মোল্লা ও জি এম সিরাজ, নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান আঙ্গুর, নোয়াখালীর ফজলে আজিম, মুন্সীগঞ্জের শাম্মী শের, এ কে এম আনোয়ারুল হক, শাহরিয়ার আক্তার বুলু, ময়মনসিংহের সাবেক সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান দুলু, জয়পুরহাটের আবু ইউসুফ খলিলুর রহমান, মেজর জেনারেল (অব.) আনোয়ারুল কবীর তালুকদার, নেত্রকোনার আবদুল করিম আব্বাসী, চাঁদপুরের সাবেক সংসদ সদস্য এস এ সুলতান টিটু, মৌলভীবাজারের সাবেক সংসদ সদস্য এম এম শাহীন, গাইবান্ধার শামীম লিঙ্কন, মেজর জেনারেল (অব.) জেড এ খান, মোফাজ্জল করিম, আশরাফ হোসেন, শাহ মো. আবুল হোসাইন, শহিদুল হক জামাল, ইঞ্জিনিয়ার শহিদুজ্জামান, নুরুল ইসলাম মনি, ইলেন ভুট্টো, আলমগীর কবীর, আবু হেনা, মেহেরপুরের আবদুল গণি, নজির হোসেন প্রমুখ।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলোচিত একটি নাম সংস্কার পন্থি। এই সংস্কারপন্থিদের কারণে এক এগারো সরকারের সময়ে দল দুটিকে বেকায়দার মধ্যেও পড়তে হয়েছে। দেশের বাঘা বাঘা অনেক নেতা সেদিন এক এগারো সরকারের রাজনৈতিক সংস্কারের ডাকে সাড়া দিয়ে নিজ দলকে ভেঙ্গে দিয়ে একই নামে আরেকটি দলগঠন করে সেখানে তাদের নাম লিখিয়েছিলেন। বিশেষ করে এই কাজটি করেছিলেন আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপির প্রথম সারির নেতারা। বিএনপির তৎকালিন মহাসচিব আবদুল মান্œান ভুইয়া নিজের সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে দলের মুল নেতৃত্বের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ও বেইমানি করে নাম লিখিয়েছিলেন সংস্কার পন্থিদের খাতায়। বিএনপিকে বিপদে ফেলে তার ডাকে সেদিন সাড়া দিয়েছিলেন তৃণমুল থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের প্রায় শতাধিক মন্ত্রী ও এমপি।

পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের সংস্কারপন্থি অনেক নেতাকে দলে ফেরানো হয়। কিন্তু বিএনপির ক্ষেত্রে তেমনটা আর হয়নি। দলের মধ্যে প্রবল বাঁধার মুখে অনেক সংস্কারপন্থি নেতা ফিরতে পারেননি। তবে রাজনৈতিক পটপরির্বতনের সাথে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিয়ে বিএনপির বর্তমান কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, আবদুস সালামরা দলে ভিড়েন। কিন্তু সেদিন তাদের ডাকে সাড়া দেওয়া প্রায় অর্ধশতাধিক সংস্কারপন্থি নেতাদের আর দলে ফেরা হয়নি।

যদিও বিএনপির বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর আগে ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি সংস্কারপন্থি নেতাদের নিয়ে রাজধানীতে একটি বৈঠকও করেছিলেন দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে। ওই বৈঠকে সংস্কারপন্থি নেতারা যাতে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নেন সেব্যপারে তাদের সহযোগিতা চান। এবং সংস্কারপন্থি নেতাদেরকে আশ্বস্ত করা হয় সময় ও সুযোগ মতো তাদেরকে মুল দলে আবারও ফিরিয়ে নেওয়া হবে। সেদিন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের কথা রেখেছিলেন সংস্কারপন্থিরা। তাই তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের দেওয়া আশ্বাস এবার বাস্তবায়ন করছে বিএনপি। তবে যারা নিজেরা দল গঠন করেছেন বা অন্য দলে চলে গেছেন এমন কাউকে আপাতত দলে ফেরানো হবে না বলে জানিয়েছেন দলটির এক নীতিনির্ধারক।



মন্তব্য চালু নেই