ঘরের ভেতরই ঘটছে ধর্ষণের ঘটনা

বেতারে সম্প্রচার করা একটি অনুষ্ঠানে আনা নামের ফরাসি মেয়েটি বর্ণনা করেছেন তাঁর ভয়ংকর সেই অভিজ্ঞতার কথা। একদিন স্নানঘরে ঢুকেছেন তিনি। একটু সতেজ হয়ে বিছানায় যাবেন। এমন সময় সেখানে ঢুকে পড়লেন তাঁর স্বামী লুই। ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে যৌনকর্ম করলেন তিনি। যা আনার কাছে ধর্ষণেরই নামান্তর।

আনার ভাষ্য, এভাবেই সেই দুঃস্বপ্নের শুরু, যা তিনি বয়ে বেড়াচ্ছেন ৩০ বছর ধরে। পাছে বিচ্ছেদ ঘটে, এই ভয়ে তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। চুপটি করে সব সয়ে গেছেন। এমন ঘটনা যেন কারও জীবনে না ঘটে—এটাই তাঁর কামনা।

ফ্রান্সে এমন আনার সংখ্যা অনেক। সে দেশে নারীর প্রতি সহিংস আচরণ, বিশেষ করে ধর্ষণ সমস্যা প্রকট। নারীর প্রতি সহিংসতা ঠেকাতে ফ্রান্সের এখনো অনেক কিছুই করার আছে। দেশটির একটি বেতার অনুষ্ঠানে নারীর প্রতি সহিংস আচরণের অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরা হচ্ছে। এই অনুষ্ঠানে উঠে আসছে অনেক রোমহর্ষক ঘটনার কথা।

দেশটির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেছেন। গত বছর ইউরোপীয় কাউন্সিলে ফ্রান্সের বিষয়টি নিয়ে সমালোচিত হয়েছে। গতকাল আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ওলাঁদ ‘এল’ সাময়িকীতে বলেন, নারীকে মৌখিক বা শারীরিকভাবে হয়রানির করার ঘটনা এখন ব্যাপক বিষয়, অবশ্যই যার মোকাবিলা করতে হবে। কারণ এতে অন্যের সঙ্গে বসবাসের মূল নীতিগুলো ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

বেতার অনুষ্ঠানটির আয়োজক ফেমিনিস্ট কালেকটিভ অ্যাগেইনস্ট নামের একটি সংগঠনের দাবি, যাঁরা লজ্জায় নিজের জীবনে ঘটা সহিংসতার কথা বলতে পারেন না, তাঁদের তা প্রকাশে উৎসাহ দিতে এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছে।

সংগঠনটির তথ্যমতে, ফ্রান্সে প্রতি বছর ৮৬ হাজারের বেশি নারী ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হন। এর মধ্যে মাত্র ১৩ শতাংশ পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, যার মধ্যে মাত্র এক শতাংশ অভিযোগ বিচারের পর্যায়ে যায়।

মাঁহি-ফ্রঁস ক্যাজালিস নামের এক নেতা বলেন, নারীকে স্বস্তির সঙ্গে কথা বলার সুযোগ তৈরি করে দেওয়াটা প্রাথমিক পদক্ষেপ। অভিযোগ ও বিচারের বৈষম্য দেখে এই সংগঠন প্রতিটি অভিযোগ তদন্ত করে দেখার দাবি করেন।

ধর্ষণের চেষ্টাকে অবমাননা হিসেবে না দেখে এটি অপরাধ হিসেবে দেখার দাবিও করছে তারা। ফ্রান্সের আইনে অবমাননার শাস্তি কম। ধর্ষণের শাস্তি বড় জোর ১৫ বছরের কারাদণ্ড। অসুস্থ, অন্তঃসত্ত্বা ও সঙ্গী ধর্ষণ করলে সর্বোচ্চ ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

সম্প্রতি ফ্রান্সের একদল গবেষক ধর্ষণ-বিষয়ক সহিংসতায় মানসিক প্রভাব নিয়ে ‘মেমোরি ট্রমাটিক অ্যাট ভিকটিমোলজি’ নামের একটি গবেষণা পরিচালনা করে। এতে দেখা গেছে, দেশটির প্রতি পাঁচজনের একজন মনে করেন, নারী যদি আকৃষ্ট করার মতো হয়, তবে ধর্ষকের দায় কম। ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের ধারণা, জোর করলে নারী বেশি আনন্দ পায়।

গবেষক মুরিয়েল স্যালমোনা বলেন. ধর্ষণের বিষয়ে নীরবতা, পার পেয়ে যাওয়া, ভুক্তভোগীর এড়িয়ে যাওয়া—এসব বিষয় এখনো দাপটের সঙ্গে বিদ্যমান।
ফ্রান্সের সমাজবিজ্ঞানী ফ্রাঁসোয়া দ্য সিঙ্গলি বলেন, ফ্রান্সের শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। কারণ এখানে যেভাবে শেখানো হয়, এতে ‘জোরপূর্বক বিষয়টি বাধ্যতামূলক’ বলে শেখে তারা। এ ছাড়া অভিভাবক কর্তৃক সন্তানকে শারীরিক শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি বাদ দিতে হবে। কারণ এতে সন্তান সহিংসতার বিষয়টি পরিবার থেকে শেখে।

সমাজবিজ্ঞানী সিঙ্গলি বলেন, শারীরিক শাস্তি উঠিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত ধর্ষণের বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেওয়াও কপটতা বা ভণ্ডামি ছাড়া কিছুই না। তথ্যসূত্র: এএফপি।



মন্তব্য চালু নেই