গোপন নীতিতে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার : বিএনপি

গোপন নীতির মাধ্যমে সরকার দেশের গণমাধ্যমের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। সরকারের এই পদক্ষেপকে ‘বৈরী নীতি’ আখ্যা দিয়ে এই পথ থেকে সরে আসারও আহ্বান জানিয়েছে দলটি।

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, গণমাধ্যমের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। টকশোতে কারা যাবে, কারা যাবে না তা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। যে সমস্ত সংবাদপত্র ‘অবৈধ সরকারের’ বিরুদ্ধে কথা বলেছে বা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে; তাদের প্রতি সরকারের খড়গ নেমে আসছে।

পত্রিকায় সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধের মাধ্যমে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে অভিযোগ করেন বিএনপির এই নেতা।

বিভিন্ন অভিযোগে সাংবাদিক ও সম্পাদকদের বিরুদ্ধে করা মানহানির মামলার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এতে তাদের পেশাগত কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এটি সাংবাদিকতা পেশার উপর চাপ প্রয়োগ এবং স্বাধীন গণমাধ্যম বিকাশের ক্ষেত্রে বাধা। এর মাধ্যমে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

গণমাধ্যমকর্মীদের নামে মানহানি মামলা করার আইন বাতিল চেয়ে প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে অভিযোগগুলোর নিষ্পত্তি করার দাবি জানান বিএনপির এই মুখপাত্র। একইসঙ্গে আইসিটি আইনকে ‘গণবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানান তিনি।

নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে রিপন বলেন, ‘সম্পাদক বা সাংবাদিকদের প্রতি কোনো অভিযোগ থাকলে তা প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যেম মীমাংসা করতে হবে। অন্য কোনো আইনে যেন বিচার করা না হয়। অন্য আইনগুলো বাতিল করে প্রেস কাউন্সিল সচল করা হোক।’

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর প্রতি ইঙ্গিত করে রিপন বলেন, তিনি এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর গণমাধ্যমের ওপর বেশি দমন পীড়ন চালানো শুরু হয়েছে। কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করেছেন। আইসিটি অ্যাক্ট এর মাধ্যমে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করার সব উপায় প্রয়োগ করেছেন। ’

গণমাধ্যমের ওপর ‘নগ্ন হস্তক্ষেপ’ করে সরকার সামরিক জান্তার মতো আচরণ করছে মন্তব্য করে এই পথ থেকে সরে আসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান রিপন। একই সঙ্গে সব গণমাধ্যম খুলে দেওয়া এবং সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, মাহমুদুর রহমানসহ সব গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বের মুক্তি দাবি করেন তিনি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমার দেশ পত্রিকা, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, সিএসবি, চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করা হয়েছে। সরকার একদিকে গণমাধ্যম বন্ধ করে দিচ্ছে, অন্যদিকে দলীয় মালিকানায় টিভি চ্যানেলের অনুমোদন দিচ্ছে। আমরা নতুন চ্যানেলের অনুমোদনের বিপক্ষে নই। তবে দলীয় মালিকানার টিভি চ্যানেল দিয়ে তাদের প্রচারণা হবে আর প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে বিরোধী মত দমন করা হবে এটা মেনে নেওয়া যায় না।’

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহতের ঘটনা এবং ওই প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট জোনের ডিআইজির একটি বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে রিপন বলেন, পুলিশ তার প্রো-বিধান অনুযায়ী কাজ করবে। কিন্তু সেটি না মেনে তারা যদি যখন তখন গুলি চালান তা আইনানুগ হয় না। কালিহাতীর ঘটনার পর সাত পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করার মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে গুলি চালানো আইনানুগ হয়নি।

নিহত চার ব্যক্তির প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারকে ক্ষতিপূরণ এবং বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে ওই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন রিপন।

পুলিশ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় যথাযথ ভূমিকা পালন করবে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বিএনপির মুখপাত্র।

দোহার উপজেলায় উপনির্বাচনে শাসকদলের বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্র দখল ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগ এনে রিপন বলেন, বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্র দখল করে রেখেছেন, ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। সরকার একটি উপনির্বাচনে নিরাপত্তা দিতেও ব্যর্থ হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা দলের সভাপতি নূরে আরা সাফা, সহ-দফতর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই