গৃহবধূকে ধর্ষণ করলো যুবলীগ নেতা: অতঃপর আত্মহত্যা

পিরোজপুরের জিয়ানগরে ধর্ষণের শিকার গৃহবধু নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। জিয়ানগর উপজেলার মধ্য বালিপাড়া গ্রামের নৌ শ্রমীক ফারুক ফরাজীর স্ত্রী ২ সন্তানের স্ত্রী রাহেলা বেগম নিজ শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা চেষ্টার ৪ দিন পর বুধবার দুপুর দিকে পার্শবর্তী মোড়েলগঞ্জের পাঠামারা পিত্রালয়ে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গৃহবধূর স্বামী ফারুক ফরাজী বাদী হয়ে জিয়ানগরের ইন্দুরকানি থানায় চাচাতো ভাই সহ ২ জনকে আসামী করে মামলা করেছে।

নিহতের ও তার মেয়ের জবানবন্দি এবং থানা সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার রাতে গৃহবধূর স্বামীর চাচাতো ভাই বালিপাড়া সিনিয়ার মাদ্রাসার ক্বারী আব্দুর রাজ্জাকের সহযোগীতায় একই গ্রামের গনি শেখের ছেলে পল্লী চিকিৎসক ও যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান তাকে জোরপূর্বক ধর্ষন করে। এসময় ওই গৃহবধূর ছোট মেয়ে রিনা ঘটনাটি দেখে ফেলায় লজ্জায় ও ঘৃনায় রাহেলা বেগম নিজ শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এ সময় ডাকচিৎকারে তার মেয়ে রিনা ও ঐ চাচাতো ভাই শরীরে পানি ঢালতে শুরু করে। ততক্ষণে তার শরীরের ৮০ ভাগ পুড়ে যায়।

পরে তাকে উদ্ধার করে ওই রাতেই মুমূর্ষু অবস্থায় খুলানা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি দেখে সেখানকার চিকিৎসকরা রবিবার হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে ঢাকা বার্ন ইউনিটে নিয়ে ভর্তি করার পরামর্শ দেয়। কিন্তু অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে না পেরে ২ দিন পর স্বজনরা তাকে সোমবার বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়িতে আনার ২দিন পর বুধবার দুপুরে তিনি মারা যান। লাশ বুধবার দুপুরে মোড়েলগঞ্জ থানা পুলিশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বাগেরহাটে নিয়ে গেছে বলে জানা যায়।

এদিকে মৃত্যুর আাগে মঙ্গলবার সকালে ওই গৃহবধূ সাংবাদিক ও পুলিশের কাছে তার ধর্ষণের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে যান। এর ভিত্তিতে ওই গৃহবধূর স্বামী ফারুক ফরাজী বাদী হয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান সেখ ও স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ইবতেদায়ী ক্বারী রাজ্জাক ফরাজীকে আসামী করে ইন্দুরকানি থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা সাংবাদিকদের বলেন, ওনার অসুস্থ্যতার খবর শুনে ঐ দিন আমি স্যালাইন নিয়ে গিয়েছিলাম। সে সময় বাড়ির লোকজনও উপস্থিত ছিল। আমার বিরুদ্ধে আনীত এ অভিযোগ ভিত্তিহীন। স্থানীয় লোকজনের কুপরামর্শে আমাকে ফাঁসানোর জন্য ষড়যন্ত্র করছে বলে তিনি দাবি করেন।

অপর অভিযুক্ত ব্যক্তি নিহতের ভাসুর বলেন, ঐদিন যদি কোন ধর্ষনের ঘটনা ঘটত তাহলেও তো সে চিৎকার করে লোকজন ডাকতে পারত। কিন্তু তা না করে এভাবে একটি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে আমাকে সহায়তাকারী হিসেবে এর মধ্যে দোষী সাব্যস্ত করলো। তিনি আরো বলেন ঐ মহিলার সাথে মনষা ছিল। যেটা প্রায়ই রাতে দেখা দিত। হয়তবা ওর কোন ইশারায় এ ধরনের দূর্ঘটনা নিজে ঘটিছে।

জিয়ানগরের ইন্দুরকানি থানার ওসি একেএম মিজানুল হক জানান, গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তরা গৃহবধূর সম্ভ্রম হানি করে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে অভিযুক্ত হবে। মামলার তদন্তকারী কর্মকতা এস আই মোতালেব হোসেন জানান, আসামীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে। তবে আসামীরা আত্মগোপনে রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই