গুলশান হামলার ‘হোতা’ মারজানের পরিচয় মিলেছে

গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার সন্দেহভাজন মাস্টারমাইন্ড মারজানের পরিচয় মিলেছে।

মারজানের পুরো নাম নুরুল ইসলাম মারজান। বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের আফুরিয়া গ্রামে। সে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ছাত্র।

পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের আফুরিয়া গ্রামের গেঞ্জি তৈরির কারিগর নিজাম উদ্দিন ও সালমা খাতুন দম্পতির পাঁচ ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় মারজান। পারিবারিকভাবে ধর্মীয় অনুশাসন ও আর্থিক অনটনে বেড়ে ওঠা তার।

জঙ্গি হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় মারজানের পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। মারজান কীভাবে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ল তা জানেন না তারা। স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় কান্না থামছে না অসহায় দরিদ্র বাবা-মায়ের। তবে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে মারজানের বিচার চায় তার পরিবারও।

মারজানের বাবা নিজাম উদ্দিন জানান, আফরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করার পর মারজান ভর্তি হয় শহরের পুরাতন বাঁশবাজার আহলে হাদিস কওমী মাদরাসায়। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি পাবনা আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হয়ে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে দাখিল ও আলিম পাশ করে মারজান। এরপর ২০১৪ সালে ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে।

এ বছরের জানুয়ারিতে শেষবারের মতো বাড়িতে এসে স্ত্রীকে নিয়ে চট্টগ্রাম চলে যায় সে। তারপর গত ৭/৮ মাস ধরে মারজানের সাথে যোগাযোগ নেই পরিবারের। তিন দিন আগে পত্রিকায় ও টিভিতে ছবি দেখে মারজানের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারেন পরিবারের সদস্যরা। ছেলে যে এতটা খারাপ পথে গেছে তা ভাবতে পারছেন না তারা। তাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। এমন ছেলের সাথে সম্পর্ক রাখতে চান না তারা।

মারজানের মা সালমা খাতুন বলেন, ‘ব্যাটাটা আমার কাছে থাকতি আগলায়া রাখছিল্যাম। আর চট্টগ্রাম যায়া কার পাল্টানে পইড়্যা কী যে করল বুঝব্যার পারতিছি না। আমারে সব স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ কইর্যার দিল।’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকার দেশের শান্তি আনার লাইগ্যা চেষ্টা করতিছে। এহন আমার ছাওয়াল যদি দোষী হয় তার বিচার হোক। আর যারা এ পথে লিয়ে গ্যাছে তাদেরও ধরা হোক।’

এলাকাবাসীর কাছে ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী, সৎ ও ধার্মিক ছেলে হিসেবে পরিচিত মারজান। হঠাৎ তার জঙ্গি সম্পৃক্ততার খবর কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই গ্রামবাসী বলেন, মারজান ছোটবেলা থেকেই নামাজ-কালাম পড়ত। সবার সাথে ভালো ব্যবহার করত। কিন্তু চট্টগ্রামে গিয়ে কীভাবে সে সন্ত্রাসের সাথে জড়াল, এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।

মারজানের বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনার পুলিশ সুপার আলমগীর কবির জানান, ‘শুনেছি, তার বাড়ি পাবনায়। তার সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’

র‌্যাব-১২ পাবনার কোম্পানি কমান্ডার আকরামুল হোসেন জানান, মারজানের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলো যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে থাকায় বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না।

প্রসঙ্গত: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেওয়া তথ্য ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, হামলার রাতে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত রেস্তোরাঁর ভেতর থেকে জঙ্গিরা মারজানের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং হামলার ছবি তুলে মারজানসহ কয়েকজনের কাছে পাঠায়।

মারজান গুলশান হামলায় জড়িত সন্দেহে তার তথ্য চেয়ে গত শুক্রবার ‘হ্যালো সিটি’ অ্যাপে ছবি প্রকাশ করা হয়। সেখানে তাকে গুলশান হামলার ‘অপারেশন কমান্ডার’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই