গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটে আগুনে ৫৪ বছরের ব্যবসা ছাই

রাজধানীর গুলশান-১ নম্বরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ডিএনসিসি মার্কেটে (ডিসিসি মার্কেট নামে পরিচিত) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার গভীর রাতে আগুনের সূত্রপাত।

গতকাল মঙ্গলবার দিনভর চেষ্টা করেও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ডিসিসি মার্কেটের পূর্ব পাশের সাড়ে তিনতলা কাঁচাবাজারটি রক্ষা করতে পারেনি। মার্কেটের ওই অংশটি সম্পূর্ণ পুড়ে ধসে যায়। আগুনে পশ্চিম পাশের পাকা মার্কেটেরও বেশির ভাগ দোকান পুড়ে গেছে। আগুন ছড়িয়ে পড়ে ডিসিসি মার্কেটের উত্তর-পূর্ব কোণে গুলশান ১ নম্বর গোলচত্বরের গুলশান শপিং কমপ্লেক্সেও। গতকাল সন্ধ্যায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও নিভিয়ে ফেলা সম্ভব হয়নি। আগুন লাগার ১৮ ঘণ্টা পরও গতকাল রাতে ডিসিসি মার্কেটের পশ্চিম পাশের অংশ থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী বেরোতে দেখা গেছে।
ফায়ার সার্ভিস, ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের লোকজন বলছেন আগুনে তিনতলা কাঁচাবাজারটি ৪০০ দোকানসহ পুড়ে ধসে পড়ে। আর পশ্চিম দিকের মার্কেটের ২৩৪টি দোকানের মধ্যে ১০০টি সম্পূর্ণ ও আরো কয়েক শ দোকান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সংশ্লিষ্টরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, আগুনে ব্যবসায়ীদের অন্তত এক হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

গতকাল ভোর থেকে দিনব্যাপী উত্কণ্ঠার মধ্যে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হয়। পাকা মার্কেট ও শপিং কমপ্লেক্সের অনেক ব্যবসায়ীকে দোকানের মালপত্র সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। অনেককে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে। এ সময় গুলশান ১ নম্বরের বেশির ভাগ বিপণিবিতান এবং অফিস বন্ধ হয়ে যায়। গুলশান-হাতিরঝিল লিংক রোডে যান চলাচলা বন্ধ থাকায় আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট লেগে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনাকে পরিকল্পিত নাশকতা বলে দাবি করছে। তারা বলছে, ডিসিসি মার্কেটের স্থানে বহুতল ভবন নির্মাণে যাদের লাভ তারাই পরিকল্পিতভাবে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। দিনভর চেষ্টায় আগুর নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে ব্যবসায়ীরা। গতকাল জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, ঢাকা উত্তর সিটিকরপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। প্রশাসনের লোকজন, ডিএনসিসি মেয়র প্রাথমিকভাবে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত বলে ধারণা দিয়েছেন। সঠিক কারণ যাচাইয়ে তদন্ত হবে বলেও জানান তাঁরা। এরই মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারীরা দাবি করছেন, মার্কেট এলাকায় পানির সংগ্রহ ব্যবস্থা না থাকায় অগ্নিনির্বাপণের কাজে বিঘ্ন ঘটে। আর এতেই আগুনের ভয়াবহতা বেড়েছে।

রাতেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে আগুন : ফায়ার সার্ভিস ও প্রতক্ষদর্শীরা জানায়, গত সোমবার রাত সোয়া ২টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয় মার্কেটের পূর্ব দিকে। পরে তা অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রাত আড়াইটার দিকে কাজ শুরু করেন। একে একে ২২টি ইউনিট সেখানে যুক্ত হয়। মার্কেটটির পূর্ব ও পশ্চিম অংশে দুটি ভাগ আছে। পূর্ব অংশের নিচতলায় ছিল কাঁচাবাজার। ওই অংশটিকে সাড়ে তিনতলা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। নিচতলায় বড় একটি অংশে ছিল আসবাবপত্রের দোকান। বেশ কিছু খাবারের দোকানও ছিল। দোতলায় ছিল আমদানি করা খাদ্যপণ্য, প্রসাধনী, পোশাক, প্লাস্টিক পণ্য ও গয়নার দোকান। পশ্চিম পাশের দোতলা অংশকে বলা হয় পাকা মার্কেট। সেখানে একই ধরনের (কাঁচাবাজার ছাড়া) দোকান আছে। শেষ প্রান্তে অর্থাত্ পশ্চিম পাশে আছে মসজিদ। সেখানে গতকাল রাত পর্যন্ত আগুন ছড়ায়নি। ডিসিসি মার্কেটের কাঁচা অংশের উত্তর-পূর্ব অংশে লাগোয়া চারতলা গুলশান শপিং কমপ্লেক্স। সোমবার রাতে যখন স্থানীয়রা টের পায় তখন কাঁচাবাজার অংশে পুরোপুরি আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। রাতেই মার্কেটের ওপরের অংশে ছোট ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পায় প্রত্যক্ষদর্শীরা। গতকাল সকালে নিচতলায়ও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। ভোর সোয়া ৪টার দিকে কাঁচা মার্কেটের পেছনের একটি অংশ ধসে পড়ে। এর কিছু সময় পরই ধসে পড়ে সামনের একটি অংশ। ভোর হওয়ার আগেই মার্কেটে ছুটে আসে দোকান মালিক, কর্মচারীসহ হাজারো মানুষ। তবে আগুনের তীব্রতার কারণে তারা কাঁচা মার্কেটের কাছে যেতে পারেনি। চোখের সামনে দোকান আর মার্কেট পুড়তে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে অনেক ব্যবসায়ী।

নাসির উদ্দিন নামে এক দোকান কর্মচারী দাবি করেন, কাঁচাবাজারে অবস্থিত একটি কসাইখানার পাশ থেকেই আগুন ছড়িয়ে পড়তে দেখেছেন তিনি। ওই সময় ট্রান্সফরমারেও বিস্ফোরণ ঘটেছিল। তবে কী কারণে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে তা বলতে পারেননি নাসির। ডিসিসি মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মী নূর মহম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, রাত পৌনে ২টার দিকে তিনি মার্কেটের সামনের দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাত্ বিকট শব্দ শুনতে পান। একটু পড়ে জানতে পারেন ট্রান্সফরমারে বিস্ফোরণ ঘটেছে। ঠিক তখনই তিনি দেখতে পান কাঁচা মার্কেটে আগুন জ্বলছে। জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, ‘আমি শুধু ট্রান্সফরমার বার্স্ট হইতে দেখছি, কাউরে আগুন লাগাইতে দেহিনাই। ’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় ফায়ার সার্ভিসের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করে জড়ো হওয়া ব্যবসায়ীরা। ভোর পৌনে ৫টার দিকে মার্কেটের একদল ব্যবসায়ী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ওপর চড়াও হলে তারা সরে যান। প্রায় ১৫ মিনিট পর পানি নিয়ে নতুন করে আগুন নেভাতে শুরু করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এ সময় পানির স্বল্পতার কারণে ঠিকমতো কাজ করা যাচ্ছে না বলে দাবি করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

ব্যবসায়ীরা যা বলছে : ডিসিসি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানায়, কাঁচা ও পাকা মার্কেট মিলে ৬৩৪টি দোকান আছে মার্কেটে। সব দোকানই অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাঁচা মার্কেটের ৪০০ দোকান ভস্মীভূত হয়ে ধসে গেছে। পাকা মার্কেটের ২৩৪টি দোকানের মধ্যে ১০০টি সম্পূর্ণ পুড়েছে। বাকিগুলোও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডিসিসি কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শের মোহাম্মদ বলেন, ‘এই মার্কেট নিয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে মামলা চলছে। সিটি করপোরেশনের কিছু অসাধু কর্মচারী এবং মেট্রো গ্রুপ মিলে এই নাশকতা চালিয়েছে। সাধারণ ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করতে এই নাশকতা। ’

একই সমিতির সহসভাপতি ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন সিদ্দিকী বলেন, সাত বিঘা জমির ওপর এই মার্কেটের পাকা মার্কেট অংশটি আছে ১৯৬২-৬৩ সাল থেকে। ১৯৮২ সালে সিটি করপোরেশন কাঁচা মার্কেটে দোকান বরাদ্দ দেয়। ২০০৩ সালে মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সময়ে মালিক সমিতির সঙ্গে কথা না বলেই এই মার্কেটের জায়গায় ১৮ তলা গুলশান ট্রেড সেন্টার নির্মাণের দরপত্র দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েও তা করতে অপারগতা জানালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা মেট্রো গ্রুপের আমিন অ্যাসোসিয়েটস ওভারসিজ কম্পানি ওই কাজ পায়। কিন্তু বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ওই চুক্তি স্থগিত করে ভবনে ডিসিসির মালিকানা বাড়াতে বলা হয়। এরপর ডিসিসির মালিকানা বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করে নতুন চুক্তি হয়। আইনগতভাবে মার্কেটটির দখল না নিতে পেরে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলে দাবি করেন হুমায়ুন সিদ্দিকী।

ডিসিসি মার্কেটের ‘আর্ট ল্যান্ড’ দোকানের মালিক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের গাফিলতি আছে। মার্কেটের আশপাশে তিনটি লেক রয়েছে। তারা তো লেক থেকেই পানি আনতে পারত। মার্কেটে প্রবেশের ১৬টি গেট রয়েছে। চারপাশ দিয়েই মার্কেটে পানি দেওয়া সম্ভব। কিন্তু তারা তা করেনি। ’

ফায়ার সার্ভিসের ভাষ্য : ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অস্বীকার করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা আগুন নেভানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) মেজর শাকিল নেওয়াজ গতকাল বিকেলে বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ইউনিট কাজ করছে। ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া আগুন আমরা প্রথমে নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। প্রচুর পরিমাণে দাহ্য পদার্থ থাকার কারণে আগুন নির্বাপণ করা যাচ্ছে না। ’ তিনি আরো বলেন, ‘একটা বিল্ডিং কলাপস করেছে। কোনো প্রাণহানি হয়নি। এখানে কমবাস্টিবল ও ফ্লেইমে লিক্যুইড ছড়িয়ে আছে। ডেঞ্জারাস জিনিসপত্র আছে। এই আগুন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রথমে আমাদের যে পরিমাণ পানির সাপ্লাই প্রয়োজন ছিল, তা আমরা পাইনি। এখানে পানির সোর্সই নেই। পরে লেক থেকে পানি এনে কাজ শুরু করা হয়। ’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের গোলযোগের কথা শোনা যাচ্ছে। তবে আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশিস বর্ধন কমিটির প্রধান এবং সদস্য সচিব হচ্ছেন ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক মাসুদুর রহমান। অন্য সদস্যরা হলেন তেজগাঁও ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পরিদর্শক শরিফুল ইসলাম, সালাহ উদ্দিন ও তানহারুল ইসলাম। ’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গতকাল দুপুর সোয়া ১টার দিকে উদ্ধারকারী দলে যোগ দেয় নৌ বাহিনীর একটি ইউনিট। এ ছাড়া ঢাকা ওয়াসা, ডিএনসিসি, রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্টের কর্মীরাও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে আগুন ছড়িয়ে পড়া রোধ করা গেছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। এ কারণে পাশের গুলশান শপিং কমপ্লেক্সে আর আগুন দেখা যায়নি।

গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, সন্ধ্যা পর্যন্ত ধসে পড়া এবং পাকা মার্কেটের কিছু অংশে থেকে থেকে সামান্য পরিমাণে আগুন জ্বলে উঠছে। আবার ধোঁয়ার কুণ্ডলিও বের হচ্ছে। এসব স্থানে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

প্রশাসনের বক্তব্য : গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে যান ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে মনে হয় বিদ্যুত্ থেকে সৃষ্ট আগুন। এখানে দাহ্য পদার্থ, খাবার, পারফিউমসহ অনেক কিছু আছে। কোনো জীবনহানি হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। ’ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ও আশঙ্কার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এটা মেয়রের পক্ষে বলা সম্ভব নয়, মেয়র নাশকতা এক্সপার্ট না। পুলিশ ভালো বলতে পারবে। তবে মেয়র হিসেবে আমার মনে হয়, নাশকতা না হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ পারসেন্ট। ’ এরপর দুপুরে দ্বিতীয় দফায় ঘটনাস্থলে গিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘ভবনটির নিচে কোনো মানুষ চাপা পড়েনি, এটা আল্লাহর রহমত। ’ ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসুক, তারপর আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসব। আমাদের কাছে কোনো আলাদিনের চেরাগ নাই যে সলিউশন হয়ে যাবে। আগুন মোটামুটিভাবে নিয়ন্ত্রণে। আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস কাজ করবে। দু-একটা জায়গায় আগুনের স্ফুলিঙ্গ এখনো দেখা যাচ্ছে। ’

সকাল ১১টার দিকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গিয়ে পুলিশের আইজিপি কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘এর পেছনে কোনো নাশকতা আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মার্কেটটিতে কাপড়ের দোকান, ছোট ছোট নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, জুতাসহ দাহ্য বিভিন্ন পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিস সর্বাত্মকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ’

এ সময় ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। দোকান থেকে মালিক-কর্মচারীদের জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য পুলিশ সহযোগিতা করছে। ’

স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে এম রহমত উল্লাহ ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেন, ‘আগুনের এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করা হবে। এ ব্যাপারে মেয়র ও সংশ্লিষ্ট দোকান মালিকদের নিয়ে সভা করে ব্যবস্থা নিব। ’

ঘটনাস্থলে মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান : এদিকে গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগুন কিভাবে লেগেছে, সেটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিতভাবে লাগানো হয়েছে তা তদন্ত করে দেখতে হবে। ’ ফায়ার সার্ভিসের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার ফায়ার সার্ভিসকে আধুনিক করেছে। আধুনিক সরঞ্জামও আছে। এমনটা হওয়ার কথা নয়। তার পরও এটি তদন্ত করে দেখা উচিত। এখানে স্থাপনাগুলো সঠিকভাবে ছিল কি না তা সংশ্লিষ্টদের দেখার কথা। তা সঠিকভাবে দেখা হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। ’ এই তদন্তের দায়িত্ব কেবল ফায়ার সার্ভিসের ওপর না দিয়ে পুলিশ, দোকান মালিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আলাদা একটি তদন্ত কমিটি করে আগুনের কারণ খুঁজে বের করতে বলেন তিনি।

স্থবির গুলশান-১ : অন্যদিকে ডিসিসি মার্কেটের আগুনের পর গুলশান ১ নম্বর এলাকার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সম্পূর্ণরূপে ব্যাহত হয়। সোমবার গভীর রাত থেকেই গোলচত্বর এলাকায় দোকান থেকে মালপত্র বের করে রাস্তায় রাখে ব্যবসায়ীরা। নিরাপত্তার স্বার্থে গুলশান-১ থেকে হাতিরঝিল সংযোগ সড়কের রাস্তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এতে গুলশান এলাকার ট্রাফিকব্যবস্থা অনেকটা ভেঙে পড়ে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ডিসিসি মার্কেটের চারপাশে পুলিশ, ব্যবসায়ী ও ফায়ার সার্ভিস এবং উত্সুক মানুষের ভিড় ছিল সারা দিন। দামি সোফা, ফ্রিজ, টেলিভিশন, কসমেটিকস, বিভিন্ন ধরনের খাবারসহ গুলশান-১ নম্বর গোলচত্বরের চতুর্দিকের সড়কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। গুলশানের উপকমিশনার মোসতাক আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর গোটা এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহনসহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। র্যাব ও আনসার সদস্যরাও নিরাপত্তার কাজে পুলিশকে সহায়তা করছেন।



মন্তব্য চালু নেই