গুলশানে নিহত দুজনের ছবি নিয়ে প্রশ্ন

রাজধানীর গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলাকারী সন্ত্রাসীর সংখ্যা ও তাদের ছবি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হামলায় একটি রাজনৈতিক দলের নেতার ছেলে রোহান ইমতিয়াজ হত্যাযজ্ঞে অংশ নিলেও অভিযোগ উঠেছে, সন্ত্রাসীদের লাশের সারির ছবিতে তিনি নেই। সেই ছবিতে রয়েছে রেস্তোরাঁর বাবুর্চি সাইফুল ইসলাম চৌকিদারের মরদেহ।

সাইফুলের স্বজনদের দাবি, সাইফুল ওই রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন। তিনি সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত নন।

অন্যদিকে রোহান ইমতিয়াজের বাবার বক্তব্য জানতে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

গত শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে একদল অস্ত্রধারী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি নামের রেঁস্তোরায় ঢুকে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। জিম্মিদের উদ্ধার করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের গুলি ও গ্রেনেড হামলায় নিহত হন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন আহমেদ খান ও গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম। এ ছাড়া আহত হন অনেক পুলিশ সদস্য। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট অভিযান’ চালিয়ে রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়।

সেখান থেকে ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত এবং ২০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মধ্যে ১৭ জনই বিদেশি বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়।

শনিবার দুপুরে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ অভিযানের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী বলেন, অভিযানে সাত সন্ত্রাসীর মধ্যে ছয়জন নিহত হয়। আহত হন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২০ সদস্য। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে হামলার পর জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলাকারী উল্লেখ করে পাঁচ তরুণের ছবি প্রকাশ করে। শনিবার রাতে ওই ছবিগুলো প্রকাশ করা হয় বলে জানিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠীর ইন্টারনেটভিত্তিক তৎপরতা নজরদারিতে যুক্ত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ।

ছয় সন্ত্রাসী নিহতের কথা বলা হলেও পুলিশ সদর দপ্তর রেস্তোরাঁয় হামলাকারী উল্লেখ করে পাঁচজনের লাশের ছবি প্রকাশ করে। পুলিশ তাদের নামও জানায়, আকাশ, বিকাশ, ডন, বাঁধন ও রিপন। তবে আরেক সন্ত্রাসীর ছবি ও নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি তারা।

প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশের পাঠানো লাশের ওই ছবি ও নাম নিয়ে। পুলিশ তাদের নাম জানায় আকাশ, বিকাশ, ডন, বাঁধন ও রিপন। আর টেররিজম মনিটরের টুইটার অ্যাকাউন্টে ওই তরুণদের ছবি দিয়ে তাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে- আবু উমায়ের, আবু সালাম, আবু রাহিক, আবু মুসলিম ও আবু মুহারিব।

তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও সংবাদমাধ্যমে আসা খবরে জানা যায়, হামলাকারীদের চারজনের নাম নিব্রাস ইসলাম, মীর সাবিহ মুবাশ্বের, রোহান ইমতিয়াজ ও রাইয়ান মিনহাজ।

তবে সাইট ইন্টেলিজেন্সের টুইটারে ছবি প্রকাশের পর সংবাদমাধ্যমের কাছে পুলিশের পাঠানো হামলাকারীদের লাশের ছবিতে রোহান ইমতিয়াজের ছবি নেই।

রোহান ইমতিয়াজের বাবা ইমতিয়াজ খান বাবুল সদ্য বিলুপ্ত অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি সাইক্লিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উপমহাসচিব।

ফেসবুকে প্রকাশিত আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, হলি আর্টিজান বেকারি প্রাঙ্গণে পাঁচজনের মরদেহ পড়ে আছে। সেখানে কোনো মরদেহের গায়ে সাদা পোশাক ছিল না। অথচ পুলিশের পাঠানো ছবিতে দেখা যায়, বাবুর্চির সাদা পোশাক পরা সাইফুল চোখ বন্ধ করে চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন।

এদিকে জিম্মি ঘটনার পরপর বাবুর্চি সাইফুলের বোন তাঁর ছবি নিয়ে ওই রেস্তোরাঁর সামনে যান। ভাইয়ের ছবি হাতে বোনের ছবিটি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। সে সময় নিখোঁজ ছবি হাতে সাইফুলের বোন সেলিনা জানিয়েছিলেন, তাঁদের বাড়ি শরীয়তপুরে নড়িয়া উপজেলার কলুকাঠি গ্রামে। সেলিনার দাবি, তাঁর ভাই হলি আর্টিজানে পিৎজা তৈরির বাবুর্চি হিসেবে কাজ করেন।

1467561086-JMB-111

সাইফুলের গ্রামের বাড়ির সদস্যরা জানান, কলুকাঠি গ্রামের মৃত আবুল হাসেম চৌকিদারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সাইফুল দ্বিতীয়। তাঁর ছোট ভাই বিল্লাল মালয়েশিয়া থাকেন। তিন বোন সবার বিয়ে হয়ে গেছে। দীর্ঘ ১০ বছর সাইফুল জার্মানিতে থাকার পর দেশে ফিরে আসেন। দেড় বছর আগে তিনি হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় কাজ নেন।

1467560407-Sheff

এদিকে নিহতদের ছবি নিয়ে বিভ্রান্তির ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তর ও ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা একাধিক কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে কথা বলা হলেও তাঁরা বক্তব্য দিতে রাজি হননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ছবির কথা ভুলে যান। পুলিশ নিহতদের ছবি কাউকে সরবরাহ করেনি।’

এর আগে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের জানান, হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারী নিহত ছয়জনই বাংলাদেশি। এদের মধ্যে পাঁচজন জেএমবি সদস্য এবং তাদের খোঁজা হচ্ছিল।



মন্তব্য চালু নেই