গুলশানের সেই বাড়িটি হারাচ্ছেন মওদুদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশানের বাড়ি ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলাটি বাতিল করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।এর মধ্যদিয়ে বহুল আলোচিত মওদুদ আহমদের এই বাড়িটি হাতছাড়া হয়ে গেল।

আজ মঙ্গলবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের আপিলটি খারিজ করে দিয়েছে আদালত।

আদালতে মওদুদের পক্ষের আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, রাজউকের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম এবং দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই রায় দেন।বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি ঈমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

একই সঙ্গে মওদুদের ভাই মনজুর আহমদের নামে মিউটেশন করার জন্য হাইকোর্টের দেওয়া রায়ও বাতিল করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।

এর ফলে রাজধানীর গুলশান-২ এর ১৫৯ নম্বর প্লটের একটি বাড়িটি মওদুদ আহমদের ভাইয়ের নামে নামজারি করতে হবে না। ফলে ভাইয়ের নামে দখল করা বাড়িটি মওদুদকে ছাড়তে হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

যেভাবে বাড়িটি হাতিয়ে নেন মওদুদ

গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর গুলশান থানায় মওদুদ আহমদ ও তাঁর ভাই মনজুর আহমদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন দুদকের উপপরিচালক হারুনুর রশীদ।

মামলায় বলা হয়, ‘১৯৬০ সালের ২৪ আগস্টে গুলশান আবাসিক এলাকায় অবস্থিত এক বিঘা ১৩ কাঠা আয়তনের (হোল্ডিং নং ১৫৯) প্লটটি পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসানকে হস্তান্তর করে তৎকালীন ডিআইটি (বর্তমানে রাজউক)।

পরবর্তীতে লিজ গ্রহীতার প্রত্যার্পণ সংক্রান্ত আবেদনের ভিত্তিতে তার স্ত্রী মিসেস ইনজে মারিয়া প্ল্যাজ (অস্ট্রেলিয়ান) এর নামে ওই প্লটটি ৬৫ সালে লিজ দলিল হিসেবে রেজিস্ট্রি করে দেয়া হয়।

সরকারি পরিত্যক্ত সম্পত্তি তালিকা প্রণয়ন সংক্রান্ত ‘মিনিস্ট্রি অব কেবিনেট অ্যাফেয়ার্স’ জারির আগেই মিসেস ইনজে মারিয়া ফ্ল্যাজ ও যুদ্ধের পর পরই তার স্বামী মো. এহসানের দেশত্যাগের কারণে উক্ত প্লটটি পরিত্যক্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়।

এজাহারে বলা হয়েছে, ‘মওদুদ আহমদ উক্ত সম্পত্তি আত্মসাতের অসৎ উদ্দেশ্যে নিজেকে মিসেস ইনজে মারিয়া ফ্ল্যাজ প্রদত্ত আমমোক্তারনামার (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) দাবিদার দেখানোর জন্য ৭৩ সালের ২ আগস্ট একটি আমমোক্তারনামা তৈরি করেন এবং তা তাঁর সুবিধামতো সময়ে ব্যবহার করেন।

পরবর্তীতে নানা কৌশলে বাড়িটি দখলে নিয়ে নিজেকে ইনজে মারিয়া ফ্ল্যাজের ভাড়াটিয়া হিসেবে দেখিয়ে উক্ত বাড়িতে বসবাস করে আসছেন তিনি।’

এজাহারে আরও উল্লেখ রয়েছে, ‘এ নারীর (ইনজে মারিয়া) স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে আসার কোনো দালিলিক প্রমাণ না থাকলেও মওদুদ আহমদ তার পাওয়ার অব অ্যাটর্নিতে তা দেখান।

পরবর্তীতে ৭৮ সালে তৎকালীন সরকারে যোগদান করে প্রথমে সরকারের মন্ত্রী এবং ৭৯ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রিসভায় উপ-প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে নিজের ক্ষমতার অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে উক্ত বাড়িটিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার অপচেষ্টা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় হোল্ডিং নং ১৫৯নং এর প্লটটির মূল্য মাত্র ১০০ টাকা দেখিয়ে বরাদ্দ নেন তিনি। ১৯৮০ সালে প্লটটি রেজিস্ট্রি করা হয়।

পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে ইনজে মারিয়া কর্তৃক জনৈক মহসিন দরবার বরাবরে একটি আমমোক্তারনামা সম্পাদন দেখানো হয়। ইনজে মারিয়া ১৯৮৫ সালে মারা যান। এটা জানা সত্ত্বেও উক্ত মহসিন দরবার নামীয় ব্যক্তিকে দিয়ে মৃত ব্যক্তির আমমোক্তার হিসেবে ৮৫ সালে বাড়িটি মওদুদের সহোদর ভাই মনজুর আহমদ বরাবর চুক্তি সম্পাদনা দেখানো হয়।’

এজাহারে বলা হয়েছে, ‘মওদুদ তার ভাই মনজুর আহমদকে অবৈধভাবে উক্ত বাড়ির কথিত মালিক বানানোর কাজে একে অন্যকে সহায়তা করার মাধ্যমে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অপরাধ করেছেন।’

তবে মওদুদ আহমেদের পক্ষে দাবি করা হয়, বাড়িটি সরকারি সম্পত্তি নয়, ব্যক্তিগত সম্পত্তি। আর মওদুদ আহমদের ভাই ব্যক্তি মালিকের কাছ থেকেই বাড়িটি ক্রয় করেছেন। মনজুর আহমদ বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই