গান গেয়ে সংসার চালায় অন্ধ হাবিব

সাদা কাফন পড়াইয়া / খাটের ওপর শুয়াইয়া / কই যাইতেছ মাকে লইয়া রে গ্রামবাসী / একটু দাঁড়াও মায়েরে দেখি..। শুভ্র সকালের নির্মল বাতাসে ভেসে আসছিল এক সুকণ্ঠ করুণ সুর। দাঁড়িয়ে পড়লাম। জরুরী কাজ থাকা সত্বেও ছুটে গেলাম ভেসে আসা সুরের কাছে।

বালিয়াকান্দি বাজারের লোকমানের চায়ের দোকান। সেখানে গিয়ে দেখি ১৪-১৫ বছরের একটি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কিশোরকে ঘিরে রেখেছে বিভিন্ন পেশার প্রায় ২০ জনের মত মানুষ। সবাই চা পান করছে আর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এই কিশোরটি আলাদা একটি টেবিলে হাত দিয়ে টেবিল পিটিয়ে একের পর এক গেয়ে চলেছে।

প্রায় ঘন্টাখানেক পর গান গাওয়া শেষ হলে কথা হয় ঐ কিশোরটির সঙ্গে। নাম হাবিব মল্লিক। রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের বেতাঙ্গা গ্রামের ভূমিহীন দিনমজুর বেল্লাল মন্ডলের বড় ছেলে। জন্মের ৬ মাস পর সর্বনাশা টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিরতরে নিভে যায় ওর দুটি সুন্দর চোখের আলো। বঞ্চিত হয় আলোয় ঝলমল এই পৃথিবী দেখা থেকে।

৬ মাসের সেই শিশুটি আজ ১৫ বছরে পদার্পণ করেছে। ২ ভাই ১ বোন মিলে ওদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫। দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দিনমুজুর বাবা সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যায়। প্রতিদিনের দুই মুঠো খাবারের সন্ধানে বাবাকে একটু সহযোগিতা করার জন্য হাবিব বেছে নেয় এই গান গাওয়াকে। পথে পথে কিংবা চায়ের দোকানে গান গেয়ে দর্শকদের খুশি করে যে অর্থ পায় তাই দিয়ে চলে ওদের পুরো সংসার।

হাবিব আবেগ জড়িত কণ্ঠে জানায়, ‘আমি শুনেছি সরকার প্রতিবন্ধীদের সাহায্য করে।আমাকে একটু সহযোগিতা করে কিছু টাকা দিলে আমার অনেক উপকার হবে।’ হাবিব আরো জানায়, তার ভীষণ ইচ্ছা যে কোন মিডিয়াতে গান করার।

কিছুদিন আগে গান শুনে সন্তুষ্ট হয়ে সমন্বিত প্রমিলা মুক্তি প্রচেষ্টার পরিচালক মো: মোকারম হোসেন তার এনজিওর পক্ষ থেকে ২টি ছাগল উপহার দেন, এজন্য তাকে কৃতজ্ঞতা জানায় হাবিব। এমন কেউ আছেন কী যিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এই হাবিবের পাশে এসে দাঁড়াবেন?

ফিরে আসার সময় কানে ভেসে আসল হাবিবের কণ্ঠ- হেলায় হেলায় বাড়লো বেলা / একদিন ভাঙবে রঙের মেলা / সেদিনের কথা ভুলে গেছ ওরে অবুঝ পাগল মন..।



মন্তব্য চালু নেই