গানের স্কুলবিরোধী ছিলেন আটক মাদ্রাসা শিক্ষক ও ঈমাম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক একেএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী ছিলেন গান পাগল মানুষ। শিশুকিশোরদের তিনি গান শেখানোর জন্য গ্রামের বাড়ি বাঘমারায় প্রতিষ্ঠা করেন গানের স্কুল। সেখানে গানের পাশাপাশি খেলাধুলা ও ঘুড়ি উড়ানোর মতো কাজেও হাত বাড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গানের স্কুল প্রতিষ্ঠা ‍ও পরিচালনায় বিরোধী ছিলেন স্থানীয় মাদ্রাসা শিক্ষক ও মসজিদের ঈমাম।

সেই দ্বন্দ্বে তিনি খুন হলেন কি-না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ইতোমধ্যে মসজিদের ইমাম রায়হান আলী ও পাশের গ্রামের খাজাপাড়ার মাদ্রাসা শিক্ষক মুনসুর রহমানকে (৪৮) আটক করেছে ডিবি পুলিশ। বর্তমানে তাদের গোয়েন্দা কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আরএমপির ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগে আরও তিন শিক্ষক খুনের ঘটনায় কোনো না কোনো ক্লু খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছিল পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক রেজাউল করিম খুনের ক্ষেত্রে সঠিক মোটিভ খুঁজতে হিমশিম গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

এ হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কে কোথায় যাচ্ছেন-না যাচ্ছেন তা নিকট আত্মীয় স্বজনরা খেয়াল রাখছেন। ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, অধ্যাপক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত রোববার গভীর রাতে নগরীর খড়খড়ি বাইপাস এলাকা থেকে একজনকে আটক করে পুলিশ।

একই ঘটনায় আটক লোকপ্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হাফিজুর রহমানকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে গত সোমবার জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। হাফিজুর নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি বলে দাবি ডিবি পুলিশের। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ভোরে বাঘমারা এলাকা থেকে আরও দুজনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এবিষয়ে আরএমপির পুলিশ কমিশনার মো. শামসুদ্দিন জানান, অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী তার নিজ গ্রামে একটি গানের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু তার গ্রামের মসজিদের ইমাম রায়হান আলী গান-বাজনা পছন্দ করতেন না। সেসময় তিনি গানের স্কুল প্রতিষ্ঠাতে বিরোধিতা করেন।

এ কারণে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রায়হান আলীকে (৩২) আটক করে নিয়ে আসা হয়েছে। অপর সন্দেহভাজন হিসেবে শিক্ষকের পাশের গ্রামের খাজাপাড়ার মাদ্রাসা শিক্ষক মুনসুর রহমানকে আটক করা হয়েছে। বর্তমানে তাদের গোয়েন্দা কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

আরএমপি গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বাঘমারার স্থানীয় লোকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদেরকে আটক করা হয়েছে। গোয়েন্দা হেফাজতে নিয়ে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর আগে গত ২৬ মার্চে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ওই গানের প্রতিষ্ঠানটিতে। সেখানে চকলেট নিয়ে হাজির হন তিনি। গানের অনুষ্ঠানও হয় সেখানে। প্রাণবন্ত ওই অনুষ্ঠান যাতে না হয় সেজন্যও প্রচারণা চালিয়েছেন ওই মাদ্রাসা শিক্ষক ও মসজিদের ঈমাম। তাদের সেই বিরোধিতায় কান দেননি অধ্যাপক রেজাউল।

ওই ঘটনায় ক্ষোভ থেকে তাকে খুন করা হয়েছে কি-না তা জানার চেষ্টা চলছে জিজ্ঞাসাবাদে। একইসঙ্গে গ্রেফতার শিবির কর্মী হাফিজুরকেও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। শিক্ষক খুনের ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতাও দেখা হচ্ছে।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র সহকারী কমিশনার (ডিবি) সুশান্ত চন্দ্র রায় বলেন, ঘটনার সব বিষয় বিবেচনায় তদন্ত চলছে। বাঘমারা জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কারণে আলোচিত। জেএমবির এক সময়ে ব্যাপক তৎপরতা ছিল এই এলাকাকেন্দ্রিক। সে দিক থেকে মূলে জঙ্গি তৎপরতা থেকেও যেতে পারে। সে কারণে আটক মাদ্রাসা শিক্ষক ও মসজিদের ঈমামের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি রাবি শিক্ষক রেজাউল হত্যায় তাদের যোগসাজশও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই