গাইবান্ধায় সুদের টাকা পরিশোধ করতে নবালক-নাবালিকার বিয়ে

গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার কুচখালী চরে প্রায় ১৫’শর অধিক মানুষের বসবাস। এদের বেশির ভাগ মানুষেই অশিক্ষিত ও বেকার। কুচখালী চরের এক-তৃতীয়াংশ নারী পুরুষেরা মাছ ধরে সংসার চালান। অনেকে আবার নদীর ওপারে অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

তবে প্রত্যেকের বাড়িতেই গভাদি পশু পালন হয় । ওইসব বাড়ির পুরুষদের কাজ হলো সারাদিন গরু নিয়ে মাঠ-ঘাট চষে বেড়ানো। কারণ, গরুই তাদের একমাত্র সম্পত্তি।

হুচখালি চরের অন্যতম বড় সমস্যা রাস্তাঘাট, চিকিৎসা সেবা ও শিক্ষা। এছাড়াও ব্যতিক্রমী সমস্যা হচ্ছে ঋণ ও সুদের টাকা পরিশোধ করতে হয় অকালে ছেলের বিয়ে দিয়ে।

কারণ অধিকাংশ পুরুষ বেকার হওয়ায় মাত্রাতিরিক্ত সুদে ঋণ নিয়ে সংসার চালাতে হয় তাদের। সুদ পরিশোধে ব্যর্থ হলে কম যৌতুক নিয়ে নিজেদের নাবালক ছেলেকে বিয়ে দিতে বাধ্য হন অন্য কোনো দরিদ্র পরিবারের নাবালিকার সঙ্গে। এভাবেই সুদ পরিশোধ করতে হয় নাবালক ছেলে মেয়ের বিয়ে দিয়ে।
সরেজমিনে গিয়ে জান যায়, বিয়ে ও সুদ পরিশোধের পুরো ব্যপারটা চালান সুদ ব্যবসায়ীরা।

বিয়ে, সুদ, ঋণ সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করেন তারা। বিয়ের আগে ও পরে যৌতুকের টাকাটাও নিজেরাই নিয়ে নেন মেয়ের পরিবারের কাছ থেকে। ঋণ গ্রস্তের সুদ ও ঋণে সমন্বিত হয় ওই টাকা। তবে এতেও পুরো ঋণ পরিশোধ না হওয়ায় সুদ ব্যবসায়ীদের ঋণের জালে আটকা পড়ে আছেন কুচখালী চরের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ।

এভাবেই সুদ ব্যবসায়ীরা আশ্রয় নেন চরের যেসব পরিবারের মেয়েদের বয়স ১০ থেকে ১২ বছর তাদের পরিবারের কাছে। কম যৌতুকে ঋণগ্রস্ত পরিবারের ছেলের সঙ্গে সেসব মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেন ওই সুদ ব্যবসায়ীরা। শর্ত যৌতুকের টাকা দিতে হবে সুদ ব্যবসায়ীকে। এক পর্যায়ে এসে রাজি হয়ে যান মেয়ের বাবা এবং ঋণগ্র¯’ পরিবার।

কুচখালী চরের তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমি নিজেও ১১ বছর বয়সে বিয়ে করেছি। আমার স্ত্রীর বয়স তখন ছিল মাত্র ৯ বছর। এখন আমার দুই মেয়ে। বড় মেয়ের বয়স ১০ বছর। আর দুই বছর পরেই তার বিয়ে দিয়ে দেবো।

তিনি আরও বলেন, এ চরে একটি মাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে সেখানে কোন মতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করলেই এখানকার মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়। কারণ, এখানে কোনো উচ্চ বিদ্যালয় না থাকায় নদী পার করে মেয়েদের পড়তে যাওয়া ভয়ের ব্যাপার। তাছাড়া সব সময় নৌকাও পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়। ছেলে মেয়েদের ১০ থেকে ১২ বছর বয়সে বিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটা এখানে নিয়মে পরিণত হয়েছে।

এ চরের বাসিন্দা ওয়াহাব আলী জানালেন, এ সমস্যায় শুধু আমি না, চরের প্রতিটি মানুষ ভুগছেন। সবাই ঋণের জালে আটকা পড়েছেন। তিন আরও জানান, শুধু ভোটের সময় প্রতিনিধি পাওয়া যায়। ভোট শেষ হলে এখানকার কোন খোজ খবর কেউ রাখে না।

তিনি সরকারের প্রতি আকুতি জানিয়ে বলেন আমরা সুদ ব্যবসায়ীদের কবল থেকে রক্ষা পেতে চাই। দয়া করে আমাদের বাঁচান।



মন্তব্য চালু নেই