গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি

ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে ঘাঘট, ব্রহ্মপুত্র ও করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গাইবান্ধা জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৪৮ সে.মি এবং ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৬ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ৭ উপজেলার ৮২ ইউনিয়নের মধ্যে ৬২টি ইউনিয়নের ৩৫৭টি গ্রামের প্রায় তিন লাখ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।

ওইসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নলকূপ ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির আর কোনো উৎস নেই। মানুষের খাবারের পাশাপাশি গো-খাদ্যের সংকটও তীব্র আকার ধারণ করেছে।

এদিকে সাদুল্যাপুর-দামোদরপুর-নলডাঙ্গা সড়কের জামুডাঙ্গার ঘাঘট নদীর ওপর অবস্থিত ব্রিজ বন্যার পানির তোড়ে হুমকির মুখে পড়েছে। কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে ব্রিজের দক্ষিণ পাশের পিলারের গোড়া থেকে পাকা সড়কের ২০০ ফুট মাটি ঘাঘট নদীতে ধসে পড়েছে। ফলে যানবাহন ও পথচারীদের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কোন মুহুর্তে সড়কটি সম্পূর্ণ ভেঙে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

তড়িৎ ব্যবস্থা না নেওয়া হলে দামোদরপুর, কামারপাড়া, নলডাঙ্গা, কুপতলা, লক্ষীপুর ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়বে।

সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ত্রাণ একেবারে অপ্রতুল হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষদের এখন অসহায় অবস্থা। অন্যদিকে গাইবান্ধায় গণ উন্নয়ন কেন্দ্র, এসকেএস ফাউন্ডেশন, একতাসহ অনেকগুলো বেসরকারি সংগঠন (এনজিও) থাকলেও তারা এখন পর্যন্ত বন্যা দুর্গতদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি।

সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এক এনজিও কর্মী বলেন, এখনো গাইবান্ধায় তেমন কোন বন্যা হয়নি। আর এই মুহুর্তে তাদের কোনো ফান্ড না থাকায় তারা কিছুই করতে পারছেন না।

দু’সপ্তাহের এই টানা বন্যায় জেলার প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন, বীজতলা, শাক-সবজি, আদা ও কলার খেত বিনষ্ট হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তা ও করতোয়া নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষরা জানান, গত এক দশক ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো সংস্কার না করায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পানি ভেতরে ঢুকে পড়ায় গোটা জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এজন্যই ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এ বন্যায়।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ বলেন, বন্যা দুর্গতদের জন্য এখন পর্যন্ত ৩৯০ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য এবং নগদ ৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই বিপর্যয়ে সরকারের পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসা দরকার।



মন্তব্য চালু নেই