গর্ভাবস্থায় দাম্পত্য, যে কথাগুলো মনে রাখবেন স্বামী-স্ত্রী উভয়েই

গর্ভাবস্থা যত সহজ সময় মনে করা হয়, ততটা সহজ হয়তো আদতে নয়। কেননা এই সময়ে প্রত্যেক দম্পতিই এমন কিছু পরিস্থিতির মাঝ দিয়ে অতিক্রম করেন যা তাঁদের উভয়ের জন্যই অনেক কঠিন। বলাই বাহুল্য যে এই সময়ে দম্পতির যৌন জীবনে দেখা দেয় সমস্যা। স্ত্রীর গর্ভাবস্থায় অনেক পুরুষই জড়িয়ে পরেন পরকীয়ায়, স্ত্রীর ক্রমাগত মুড সুইং বা অসুস্থতাও সামাল দিতে পারেন না কেউ কেউ। এছাড়াও নানান পারিবারিক, আর্থিক ও সামাজিক সমস্যা তো আছেই। রইলো ৮টি জরুরী পরামর্শ। সন্তানের আগমনের অপেক্ষায় থাকা প্রত্যেক দম্পতিরই কাজে আসবে আশা রাখছি।

১) প্রথমেই যে জিনিসটি মনে রাখবেন, সেটি হলো সন্তান অনেক বড় একটি দায়িত্ব। সন্তান জন্ম নিতে ৯ মাস দেরি আছে মনে করে বসে থাকবেন না। বরং এই সময়টি কাজে লাগান সন্তান আগমনের প্রস্তুতিতে। শিশু পালন ও প্যারেনটিং বিষয়ক নানান বইপত্র পড়তে পারেন স্বামী-স্ত্রী উভয়েই। সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটাও সেরে ফেলতে পারেন।

২) হ্যাঁ, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের একটি অনেক বড় অংশ হচ্ছে যৌন সম্পর্ক। তবে গর্ভাবস্থায় একেক নারীর ক্ষেত্রে বিষয়টি একেক রকম। সাধারণত শুরু দিকে যৌন মিলনে মানা করে থাকেন চিকিৎসকেরা, এবং পেট স্ফিত হওয়ার সাথে সাথে এমনিতেই বিষয়টি কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তবে যাদের কোন জটিলতা থাকে, তাঁদেরকে পুরো ৯ মাসই যৌন মিলনে মানা করা হয়ে থাকে। এছাড়াও সন্তান জন্মদানের পর অনেকটা সময় লাগে নারীর আবার স্বাভাবিক যৌন জীবনে ফিরতে।

সব মিলিয়ে এই সময়টা দাম্পত্যের জন্য বেশ কঠিন। কেবল যৌনতার কারণেই অনেক পুরুষ এই সময়ে অন্য নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। তবে সত্য কথাটি হচ্ছে এই সময়ে আপনাদের কাজে আসবে কেবলই পরস্পরের জন্য ভালোবাসা ও সম্মান। বলতে পারেন দাম্পত্যের একটি কঠোর পরীক্ষা এটি। যৌন মিলনে মানা করা থাকলেও ছোট ছোট আদর ও ভালোবাসা কখনো বন্ধ করবেন না। সম্পর্ক রক্ষায় সহায়ক হবে।

৩) সন্তান আগমন আজকাল অনেক খরচের একটি বিষয়। সন্তান ডেলিভারি থেকে শুরু করে লালন-পালন, সব ক্ষেত্রেই প্রয়োজন অনেকটা টাকার। সন্তান গর্ভে আসার পর থেকেই প্রয়োজনীয় সকল আর্থিক পরিকল্পনা সেরে ফেলুন ও আর্থিক প্রস্তুতি নিয়ে নিন।

৪) স্বামীরা মনে রাখবেন, গর্ভাবস্থা প্রত্যেক নারীর জন্যই খুব কঠিন একটি সময় এবং কোন জটিলতা না থাকলেও আসলে নারী এ সময়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকেন। জীবনসঙ্গী হিসাবে আপনিই স্ত্রীর সবচাইতে আপন মানুষ। হ্যাঁ, এমনকি মা বাবার চাইতেও আপন। এবং এই কঠোর সময়ে সবার আগে আপনারই দায়িত্ব স্ত্রীর খেয়াল রাখা ও তাঁকে ভালোবাসা।

৫) গর্ভকালে নারীদের ঘন ঘন মুড সুইং হয়। অনেকেই বেশ খিটখিটে স্বভাবের হয়ে ওঠেন ও বিষণ্ণ হয়ে পড়েন। এই অবস্থা থেকে নারীকে বের করতে পারেন কেবল ভালোবাসা। স্বামীকে অবশ্যই এই সময়ে ধৈর্য ধরতে হবে। স্ত্রীকে বুঝুন, এই মেয়েটি আপনার সন্তানের মা হতে চলেছেন- এটা ভেবে হলেও কিছু ছাড় দিন। সঠিক সময়ে আবার সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে, নিশ্চিত থাকুন।

৬) এই সময়ে ওজন বাড়ে, চেহারা খারাপ হয়ে যায় এবং এই সমস্ত কিছু নিয়ে নারী ভীষণ সংকোচ ও লজ্জায় থাকেন। এমন অবস্থায় স্বামীর দায়িত্ব স্ত্রীর মনোবল ভাঙতে না দেয়া।

৭) আজকাল অনেক উন্নত প্রযুক্তি বেরিয়েছে। গর্ভাবস্থাতেই জানা যায় যে সন্তানের বেশ কিছু অগ্রিম অসুস্থতার খবর। দুর্ভাগ্যবশত যদি এমন কিছু আপনাদের সাথেও ঘটে, ভেঙে পড়বেন না মোটেও। দুজনে মিলে সমস্যার মোকাবেলা করেই এগিয়ে যান। সন্তান আপনাদের। লড়াইটা আপনাদেরকেই করতে হবে।

৮) জন্মের আগে সন্তানের লিঙ্গ দেখা খুবই অনুচিত একটি কাজ। কিন্তু যদি দেখেই ফেলেন আর ছেলে সন্তানের আশায় মেয়ে সন্তান হয়, এই বিষয়টি নিয়ে স্ত্রীকে দোষারোপ বা অত্যাচার করবেন না ভুলেও। মনে রাখবেন, সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে তা নির্ধারণ করেন পিতা। মায়ের এখানে কোন ভূমিকাই নেই।

আপনাদের ভালোবাসার চিহ্ন হয়ে আসুক সন্তান পৃথিবীতে, সন্তানের আগমনে আরও সুন্দর হয়ে উঠুক আপনাদের ভালবা। ভালো থাকুন। শুভকামনা।



মন্তব্য চালু নেই