গরম খুন্তির ছ্যাঁকা, ফেলে দেওয়া হয়েছে দাঁত

মেয়েটির অপরাধ সে দুধ চুরি করে খেয়েছে। সামান্য এই অপরাধে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয় তার ওপর। পিটিয়ে খ্যান্ত হননি গৃহকর্ত্রী তিম্মি বেগম। দেওয়া হয়েছে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা; ভেঙে দেওয়া হয়েছে কয়েকটি দাঁত।

অভাবের সংসারের কারণে একটু ভালো খাওয়া-পড়ার আশায় ঢাকার এক পরিচিতজন নজরুল ইসলামের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতে যায় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বরফা গ্রামের ১০ বছরের লিয়া। প্রথম প্রথম ভালোই ব্যবহার করতেন গৃহকর্ত্রী তিম্মি। পরে কাজ না পারার অজুহাতে প্রায়ই তাকে মারধর করা হতো।

ঠিকভাবে রুটি বানাতে না পাড়ায় ব্যালুন দিয়ে পিটিয়ে চারটি দাঁত ভেঙে ফেলা হয়। এসবের কিছুই জানতেন না লিয়ার দরিদ্র বাবা-মা। একদিন দুধ চুরি করে খাওয়ার অভিযাগ এনে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়ে সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত করা হয়।

লিয়ার কান্নার শব্দে পাশের বাসার এক নারী পুলিশে খবর দিলে বাসায় গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে খিলগাঁও থানা পুলিশ। কিন্তু পুলিশ গৃহকর্ত্রী তিম্মি ও গৃহকর্তা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং তাদেরকে দিয়ে গত বুধবার গভীর রাতে গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয় লিয়াকে। সেখানে রিয়ার বাবা-মার কাছে না দিয়ে নজরুলের শ্বশুর বরফা গ্রামের শাহাবুদ্দিন মীনার বাড়িতে এনে চারদিন আটকে রাখা হয় তাকে।

খবর পেয়ে লিয়ার মা তাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এক সপ্তাহ ধরে সে গোপালগঞ্জ আড়াইশ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েও কোন ফল পায়নি লিয়ার পরিবার। এদিকে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ও লিয়াক হাসপাতাল থেকে দ্রুত সড়িয়ে নিতে পরিবারকে চাপ দিচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। তারা সালিস বৈঠকের নামে এক লাখ টাকা দিয়ে বিষয়টি রফা করার প্রস্তাব দিয়েছে।

হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বি-১৬ নম্বর বেডে গিয়ে দেখা যায়, লিমার গায়ে এখানো নির্যাতনের চিহ্ন স্পষ্ট। মুখ-হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতচিহ্নগুলো প্রায় শুকিয়ে এলেও শরীর এখনো সুস্থ হয়নি। মুখের ভিতরের দাঁত ভেঙে দেওয়া হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে।

গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নির্যাতনের শিকার লিয়া বলে, ঢাকায় যাবার পর কিছুদিন ভালোই কাটে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই বাসার সব কাজ করতে দেওয়া হয়। এতো কাজের চাপ সহ্য করতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। কাজের একটু এদিক-সেদিক হলেই গৃহকর্ত্রী তিম্মি বেগম আমার ওপর নির্যাতন চালাতো।

লিয়ার মা মর্জিনা ও বাবা রহমান মীনা অভিযোগ করেন, মেয়েকে যাতে হাসপাতালে না রেখে চিকিৎসা করি, সে জন্য চাপ দিচ্ছে প্রভাবশালী মহল। সালিশ বৈঠকে মামলা না করার জন্য বলা হয়েছে। এ জন্য আমাদের এক লাখ টাকা দেওয়ার লোভ দেখানো হয়েছে।

অভিযুক্ত তিম্মির বাবা শাহাবুদ্দিন মীনা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এটি তারা করে থাকলে ঠিক করেনি।

এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা ও গোপিনাথপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইদ্রিস আলী জানান, ঘটনাটি যেহেতু ঢাকার, সেজন্য তাদেরকে সেখানেই অভিযোগ দিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সেরকমই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টিকে ন্যক্কারজনক উল্লেখ করে জালালাবাদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মীনা জানান, এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।রাইজিংবিডি



মন্তব্য চালু নেই