গভীর রাতে রুবেলের বাসায় গিয়ে যা দেখেছিলেন হ্যাপি…

আমি প্রায় রুবেলের বাসায় গিয়ে থাকতাম। রাত কাটাতাম। গত ৩ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১২টায় আমি না বলেই হঠাৎ ওর বাসায় গিয়ে দেখি দুটি মেয়ে বসে আছে। আমি জানতে চাইলাম-এরা কারা? রুবেল বলল, মেয়ে দুটি তার বান্ধবী। শুনে আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল। রুবেলের সঙ্গে প্রেমের কথা বলতে গিয়ে হ্যাপি এভাবেই বর্ণনা করছিলেন। তিনি বলেন, রুবেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের ব্যাপারে জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাসহ কয়েকজন ক্রিকেটার খুব ভাল করেই জানতেন। তারা রুবেলকে অনেকবার বুঝিয়েছেন, ‘রুবেল তুমি হ্যাপিকে বিয়ে করে ফেল। ও খুব ভালো মেয়ে। হ্যাপি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে।’ মাশরাফি ছাড়াও যে সব ক্রিকেটার হ্যাপি-রুবেল কাহিনী জানতেন তারা হলেন, মুশফিক, সফিউল, নাসির এবং মোমিনুল।

বুধবার সকালে গণমাধ্যমকে হ্যাপি বলেন, মাশরাফি ভাই আমাদের প্রেমের সম্পর্কটা প্রায় শুরু থেকেই জানতেন। তিনি আমাদের খোঁজ-খবর রাখতেন। কয়েকবার ভিআইপি গ্যালারিতে দেখাও হয়েছিল। মিরপুরের এক ফাস্ট ফুডের দোকানে এক সঙ্গে আমরা খাবারও খেয়েছিলাম। তখন মাশরাফি ভাই বলেছিলেন, রুবেল তুই তাড়াতাড়ি ধুমধাম করে বিয়ে করে ফেল। আমরা তোর বিয়েতে খুব মজা করবো। মাশরাফি ভাই সেদিন সফিউল, নাসির, মোমিনুল ও মুশফিক ভাইকে আমাদের বিষয়টা বলেছিলেন। এরপর একদিন তারা আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, দাওয়াত করে খাওয়াতে হবে। আমি রাজিও হয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে রুবেলের আপত্তিতে তা আর হয়ে ওঠেনি।

হ্যাপি বলেন, গত ৩ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমি রুবেলের বাসায় গেলাম। দারোয়ান গেট খুলে দিল। ওর ফ্ল্যাটে ঢুকে দেখি দুইজন মেয়ে বসে আছে। ও আমাকে বলল মেয়ে দুটি ওর বন্ধু। এ নিয়ে সে রাতে আমার সঙ্গে খুব ঝগড়া হলো রুবেলের। সে আমাকে গালাগালি করে এবং আমার গায়ে হাত তোলে। আমি রাগে আমার হাত কেঁটে ফেলি। এক সময় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই। সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখি আমি একাই রুমের ফ্লোরে পড়ে আছি। আর রুবেল পাশের রুমে তার দুই মেয়ে বন্ধু নিয়ে শুয়ে আছে। হ্যাপির ভাষ্য, এ দৃশ্য দেখার পর ওর সঙ্গে কেউ সম্পর্ক রাখে? তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, হয় ওর সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে, না হয় না থাকবে। এ জন্য ৭ ডিসেম্বর মিরপুর থানায় অভিযোগ করতে যাই। এখবর পেয়ে মিরপুর থানায় ছুটে আসেন মাশরাফি ভাই, নাসির, সফিউলসহ আরো কয়েকজন। তারা আমাকে আর রুবেলকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন। মাশরাফি ভাই রুবেলকে বললেন, হ্যাপিকে বিয়ে করতে তোমার সমস্যা কি? বিয়ে করে ফেল। রুবেল সবার সামনে আমাকে বিয়ে করবে বলে কথা দিলো। সেদিন রুবেল আমার সঙ্গে বেশ ভালো ব্যবহার করলো। আমাকে তার বাসায় নিয়ে গেলো। আমি থাকলাম তার বাসায়। নানা মিষ্টি কথা বলে সে আমার মোবাইল ফোনটা নিয়ে নেয়। মোবাইলে রুবেলের যাকিছু ছিল তা সব ডিলিট করে দেয়। এরপরই ওর চেহারা পাল্টে যায়। সে আমাকে বলে, যাও সব প্রমাণ মুছে দিলাম এবার গিয়ে মামলা করো।

হ্যাপি পেছনের দিনগুলোর কথা মনে করে আরো বলেন, এ বছরের শুরুর দিকে দেখলাম আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে রুবেল হোসেন নামে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট। তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ওয়েটিং এ রেখে দিই। এরপর দেখি প্রায় সে আমাকে ফেসবুকের ইনবক্সে ম্যাসেজ পাঠায়। তার রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করতে বলে। ১৪ ফেব্রুয়ারি আমি তাকে আমার বন্ধু লিস্টে গ্রহন করি। এরপর টুকটাক চ্যাট হত। আমার কখনোই ক্রিকেট খেলার প্রতি আগ্রহ ছিল না। আমি খেলাও দেখতাম না। রুবেল আমাকে বলে তুমি আমাকে দেখেছো। ও অন্যান্য ক্রিকেটারদের নিয়ে গল্প বলত। একটা সময় ফোন নম্বর বিনিময় হয়। শুরু হয় ফোনে কথা। শুরুতে কম কথা হলেও একটা সময় নিয়মিত কথা হতো। প্রায় সময় মিরপুরেই দেখা হতো আমাদের। রিকশায় ঘুরতে চাইলে ও আমাকে বলত, পাবলিক প্লেসে গেলে সমস্যা আছে। তাই গাড়িতে করে অথবা তার বাসায় সাক্ষাৎ হতো। আমি এর আগে প্রেম করিনি। আমার কোন প্রেমিক ছিল না। তাই রুবেল আমার ফাস্ট লাভ। সেভাবেই মন-প্রাণ দিয়ে আমি ওকে ভালোবাসি।

ভালোবাসায় তো ঝগড়া থাকেই। ওর সঙ্গেও আমার কম ঝগড়া হয়নি। তবে আমি রাগ করলে রুবেলই আমার অভিমান ভাঙাতো। অভিমান ভাঙ্গানোর একটা ঘটনা মনে করে বলেন, রুবেল দক্ষিণ কোরিয়া যাবে। তার আগে একদিন আমি আর ও গাড়িতে করে ঘুরছিলাম মিরপুর স্টেডিয়ামের আশপাশে। হঠাৎ খুব রাগ হয়। তারপর আমি ওর গাড়ি থেকে নেমে পড়ি। সে গাড়ি পার্কিং করে দৌড়ে এসে রিকশাচালককে নামিয়ে নিজেই রিকশা চালানো শুরু করলো। আরেকদিন সে রাগ করে রাস্তায় বসে পড়লো। রাস্তা থেকে সে উঠবেই না। কিছু হলেই কান্না কাটি শুরু করত। কি যে পাগলামি সে করত। এসব পাগলামির কারণে আমিও ওকে মন থেকেই ভালোবেসে ফেলেছিলাম।

ওর কিছু বদ অভ্যাস ছিল। মদ খাওয়া, মেয়ে মানুষ নিয়ে ফূর্তি করা। আমি একটা সময় এগুলো টের পেলাম। আর তখনই তাকে বললাম আমার সঙ্গে যদি সম্পর্ক রাখতে চাও এসব বাদ দিতে হবে। সে আমাকে বলল সব কিছু ছেড়ে দিয়ে ভালো মানুষ হয়ে যাবে। আমাকেও বলল মিডিয়ায় কাজ করা ছেড়ে দিতে। আমিও ওর কথা রাখলাম। রুবেল থাকে মিরপুর কমার্স কলেজের পেছনের একটি বাড়িতে। আর আমার বাসা মিরপুর রূপনগর আবাসিক এলাকায়। তাই প্রায় সে আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলে নানা কথা বলে তার বাসায় নিয়ে যেত। আমিও যেতাম। কারণ, আমি তাকে মন থেকে ভালোবেসেছি। কখনো মনে আসেনি রুবেল আমার সঙ্গে প্রতারণা করবে। ওর বাসায় কেউ থাকতো না। সে একাই বাসা নিয়ে থাকতো। আমার মা-বাবাকে শ্যুটিংয়ের কথা বলে প্রায় ওর বাসায় থাকতাম। রাতের পর রাতও থেকেছি। একদিন ফজরের আজানের সময় ওকে আমি বললাম, তুমি আমাকে বিয়ে করবে তো? সে আমাকে তার বাবা মার কছম দিয়ে বলল, সে আমাকে বিয়ে করবে। এরপর ওর বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরলাম। এভাবেই যাচ্ছিলো দিন। বেশ কয়েক মাস এভাবেই কাটছিলো আমাদের সময়। সুখেই ছিলাম। আর আমি স্বপ্ন দেখছিলাম রুবেল আর আমার সুখের শান্তির একটা সংসার। কিন্তু মানুষ যা চায় তা পায় না। কিন্তু আমার প্রেমে তো অসততা ছিল না। কেন সে এমন করল? আমাকে পাবার জন্য ওর যে পাগলামি ছিল সেটাও নেই। ও মাঝখানে দলে খেলতে পারেনি। এ নিয়ে ওর মানসিক অবস্থা ভালো ছিল না। ওই সময়টায় আমি ওকে মানসিক সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সাহস দিয়েছি। কিন্তু এত ভালোবাসা দিয়েও কোন লাভ হয়নি।

উল্লেখ্য, গত ১৩ ডিসেম্বর বিকেলে নায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপি জাতীয় ক্রিকেট দলের পেসার রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেন। এরপর হ্যাপিকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নিয়ে তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়। ফরেনসিক পরীক্ষা শেষে মিরপুর থানায় নিয়ে তাকে মামলাসংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাসায় পাঠানো হয়। এর মধ্যে লোকচক্ষুর অগোচরে চলে যাওয়া রুবেল হোসেন হাইকোর্টে জামিন নিতে আসেন। চার সপ্তাহের আগাম জামিন পান। সবার দৃষ্টি এখন ফরেনসিক প্রতিবেদনের দিকে



মন্তব্য চালু নেই