গভীর রাতে বাল্যবিয়ে: বর-কাজী সহ চারজন আটক

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার পোমরা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে গোপনে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাল্য বিয়ে দেয়ার সময় অভিযান চালিয়ে বিয়ে বন্ধ করেছেন প্রশাসন। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মজুমদার গত বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে দশটায় উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের মহত্তেরখীল গ্রামে স্কুল ছাত্রীটির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিয়ে করতে আসা বর মো. সুজন (২৭), বিয়ের কাবিন রেজিষ্ট্রি করার জন্য আসা কাজী হাফেজ মো. আবদুল জব্বার (৫০), কনের পিতা মো. নুরুন্নবী (৫০) ও বরের মামা মো. ইদ্রিছ (৭০) কে আটক করে নিয়ে আসেন। রাতেই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে চারজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেন। ইউএনও সাইফুল ইসলাম মজুমদার আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেন।

আদালত সুত্র জানায়, রাঙ্গুনিয়ার পোমরা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর এক ছাত্রী ও ইউনিয়নের মহত্তেরখীল গ্রামের মো. নুরুন্নবীর ১৩ বছর বয়সি মেয়েটিকে বেশ কিছুদিন ধরে উপজেলার মরিয়মনগর ইউনিয়নের নজরের টিলা গ্রামের মো. ইউনুছের পুত্র মো. সুজনের সাথে বিয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে দুটি পরিবার। পেশায় মুদি দোকানদার সুজন ঝাঁড়ফুক ও বৈদ্যগিরি করেন এলাকায়।
কিন্তু এই বয়সে বিয়েতে অমত থাকা স্কুল ছাত্রীটি বান্ধবীর মাধ্যমে খবরটি পৌঁছান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। ইউএনও মেয়েটিকে বিয়ে না দিতে তার বাবাকে ডেকে নিষেধ করেন।

এরপর তারা মাইজ ভান্ডার দরবারে গিয়ে বিয়ে পড়ানোর চেষ্ঠা করেন। মেয়েটির বয়স কম হওয়ায় সেখানকার কাজী বিয়ে পড়াতে অমত প্রকাশ করায় সেখানে বিয়ে পড়ানো সম্ভব হয়নি। গত বুধবার রাতে গোপনে কাজী ডেকে বিয়ে পড়ানোর খবর পেয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে থানার উপপরিদর্শক হারুনুর রশিদ একদল পুলিশ নিয়ে স্কুল ছাত্রীর বাবা নুরুন্নবীর বাড়িতে হানা দেন। সেখানে ভুড়িভোজরত অবস্থায় ঘেরাও করে চারজনকে আটক করে নিয় যান।

তাৎক্ষনিক ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে বিয়ের বর উপজেলার মরিয়মনগর নজরের টিলা গ্রামের মো. ইউনুচের পুত্র মো. সুজনকে ১ মাস, পোমরা ইউনিয়নের কাজী ছাবের আহমদ আলকাদেরীর প্রতিনিধি হিসেবে বিয়ে রেজিষ্ট্রি করতে আসা হাফেজ আবদুল জব্বারকে ১ মাস, বরের মামা রাউজানের পটিয়া পাড়ার মৃত ছালে আহমদের পুত্র মো. ইদ্রিছকে ৭ দিন, মেয়ের বাবা মো. নুরুন্নবীকে ৭ দিন করে বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়ে জেলে পাঠানোর আদেশ দেন এবং প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত স্কুল ছাত্রীটিকে বিয়ে দিবেন না মর্মে মূচলেকা নেন মেয়েটির বাবার কাছ থেকে। রাতেই আটককৃত আসামীদের রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে বলে থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবির জানান। পোমরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম টিপু মেয়েটি বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী বলে নিশ্চিত করেছেন।



মন্তব্য চালু নেই