আসছে ভ্যালেন্টাইন ডে

গদখালির ফুলের সুবাস সারাদেশে

ফুল শুধু পবিত্রতার প্রতীকই নয়। ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায় এমনি শোকেরও একমাত্র অনুষঙ্গ। আর এর চাহিদা দিনদিন বাড়ছে। এদেশের অনেক জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে। তেমনি যশোরের গদখালিও ফুলচাষের জন্য দেশজোড়া খ্যাতি লাভ করেছে।

মাঠের পর মাঠ জারবেরা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধার ক্ষেত। ফুটেছে হলুদ গাঁদা ও চন্দ্রমল্লিকাসহ আরও অনেক ফুল। বাতাসে ফুটন্ত ফুলের সুবাস ছড়িয়ে যাচ্ছে চারিদিকে। সেই ক্ষেতে ফুরফুরে মনে কাজ করছে ফুল চাষীরা।

আসছে বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বাজার ধরতে ফুলক্ষেতে স্বপ্ন বুনছেন তারা। বলছিলাম ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি এলাকার কথা।

গদখালির ফুলের সুবাসে ভরে উঠে সারাদেশের মানুষের মন। এই ফুলের রাজধানীতে সরেজমিনে দেখা গেছে কৃষকের ব্যস্ততা। চাষীরা জানালেন, তাদের ব্যস্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে। এই তিনটি উৎসবে সবচেয়ে বেশি ফুল বিক্রি হয়। এবারের মৌসুমে ১৫-২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে মনে করছে ফুলচাষীরা।

পানিসারা গ্রামের ফুল চাষী ইসমাইল হোসেনের বলেন, ‘প্রায় চার বিঘা জমিতে জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, গ্লাডিওলাস ও রজনীগন্ধা ফুল রয়েছে। বসন্ত বরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ফুল সরবরাহ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে তারা বসন্ত বরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের ফুল বাজারে সরবরাহ করবেন।

হাড়িয়া নিমতলা গ্রামের ফুলচাষী নাজির হোসেন বলেন, ‘এক বিঘা গোলাপ ও দুই বিঘা গ্লাডিওলাস ফুলের আবাদ করেছি। বর্তমানে গোলাপ ৩ টাকা ও গ্লাডিওলাস ২-৪ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। এক বিঘা গোলাপ রোপণে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। ৪ হাজার চারার দাম ৪০ হাজার টাকা। আর রোপনসহ অন্যান্য খরচ আরও ৪০ হাজার টাকা। এছাড়াও পরিচর্যার খরচ রয়েছে। একবার রোপনে ৬-৭ বছর পর্যন্ত গোলাপ ফুল পাওয়া যায়।’ বছরে তিনি অন্তত দুই লাখ টাকা লাভ করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

স্থানীয় আড়সিংড়ি গ্রামের ক্ষুদ্র পাইকারী ব্যবসায়ী শাহাদৎ হোসেন বলেন, ‘সামনে ভ্যালেনটাইনে ডে। এদিন ফুল বিক্রি বেশি হবে। বাজারে জারবেরা, গোলাপ, রজনীগন্ধ ফুলের চাহিদা বেশি। কৃষকরাও দাম ভালো পাবে।’

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, ‘গদখালি অঞ্চলে প্রায় ৫ হাজার কৃষক দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করেছেন। এবারের বসন্তবরণ, ভ্যালেনটাইন ডে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে গদখালি এলাকার কৃষকরা ১৫-২০ কোটি টাকার ফুল সরবরাহ করবেন। গত বছরের চেয়ে এবারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো। আশা করছি কৃষকরা ফুলের ভালো দাম পাবেন। অনেক সময় সরবরাহ বেশি থাকলে দাম কমে যায়।’

যশোরের জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘যশোরে ফুলের আবাদ বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি গদখালি এলাকায় ফুল চাষ হয়। ফুলচাষীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফুল চাষীদের ব্যাংক ঋণ সহজ করতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ফুল সহজে দেশের বিভিন্নস্থানে পৌঁছাতে রেলের বগি বরাদ্দের বিষয়টিও আলোচনা করছি। ফুল রপ্তানির বিষয়ে জাপানের একটি টিমের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে এখনও চূড়ান্ত হয়নি।’



মন্তব্য চালু নেই