ফ্রিল্যান্সারদের প্রতি সাইদুর মামুন খান

গতানুগতিক কাজের বাইরে ফ্রিল্যান্সারদের সাফল্য পেতে যা করতে হবে

দেশের ফ্রিল্যান্সার কমিউনিটির অন্যতম একজন সদস্য সাইদুর মামুন খান। তিনি নিজে ছিলেন একজন ফ্রিল্যান্সার। পরে যোগ দেন বিশ্বখ্যাত মার্কেটপ্লেস (সাবেক) ওডেস্কের কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে। ওডেস্ক নাম বদলে আপওয়ার্ক হলে তিনি তাতে বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেন। দেশের ফ্রিল্যান্সারদের প্রচলিত ঘরানার কাজের বাইরে এসে অ্যাডভান্স লেভেলের ক্রিয়েটিভ কাজের দিকে মনোযোগী হতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, উন্নতির জন্য দ্ক্ষতা অর্জনের কোনও বিকল্প নেই। প্রয়োজনে গবেষণারও পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশকে তৃতীয় দাবি করে আসলে কখনোই আপওয়ার্কের পক্ষ থেকে কোনও তালিকা দেওয়া হয়নি, শুধু একটি সূচকে (নির্দিষ্ট একটি স্কিলে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের কাজের পরিমাণের ভিত্তিতে) সেই র‌্যাংক দেওয়া হয়েছিল। এমনিতে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সারদের উপার্জনের ভিত্তিত সপ্তম অবস্থানে আছে

আপনি আগে ছিলেন আপওয়ার্কের (সাবেক ওডেস্ক) কান্ট্রি ম্যানেজার। এখন বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার। বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে আপনার পরিকল্পনা জানতে চাই।

সাইদুর মামুন খান: আমি মূলত এখন আপওয়ার্কের মার্কেটিং ডিভিশনের একটি টিম লিড করছি এবং আমার টিমের কাজ নর্থ আমেরিকান ক্লায়েন্ট মার্কেট নিয়ে। সেই হিসেবে আসলে বাংলাদেশ মার্কেট নিয়ে আপাতত সরাসরি কাজ করছি না। তবে আপওয়ার্কের বাইরে ব্যক্তিগত পর্যায়ে বাংলাদেশের টেক কমিউনিটি নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে। ইতিমধ্যে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে কিছু প্রজেক্টে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ শুরু করেছি।

একটি রিপোর্টে আপওয়ার্কের তালিকায় বাংলাদেশকে তৃতীয় দাবি করা হয় কিন্তু আসলে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। এটা কেন প্রচার করা হয়? অনেক সূচকেই তো আমরা এগিয়ে আছি।

সাইদুর মামুন খান: বাংলাদেশকে তৃতীয় দাবি করে আসলে কখনোই আপওয়ার্কের পক্ষ থেকে কোনও তালিকা দেওয়া হয়নি, শুধু একটি সূচকে (নির্দিষ্ট একটি স্কিলে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের কাজের পরিমাণের ভিত্তিতে) সেই র‌্যাংক দেওয়া হয়েছিল। এমনিতে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সারদের উপার্জনের ভিত্তিত সপ্তম অবস্থানে আছে।

ব্যবসায়িক পরিচয় নিয়ে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। যেহেতু বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্স বা মুক্ত পেশাজীবী অফিস ছাড়া কাজ করছে, তারা ট্রেড লাইসেন্স নিতে পারছে না বা ব্যবসা নিবন্ধন করতে পারছে না। অথচ প্রতি বছর ৪০-৫০ মিলিয়ন ডলার তাদের হাত ধরেই দেশে আসছে। এখানে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনে পলিসি তৈরি করে ফ্রিল্যান্স পেশাজীবীদের ব্যবসায়িক পরিচয় তৈরির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে

দেশে ফ্রিল্যান্সারদের চ্যালেঞ্জগুলো কি কি?

সাইদুর মামুন খান: দুর্বল ইন্টারনেট স্পিড এবং ঢাকার বাইরে ভাল মানের ইন্টারনেটের অভাব অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ। যদি এখন অনেক জায়গায় ১-৩ এমবিপিএস স্পিডের কথা বলা হয়, তবে বড় কোনও ফাইল আপলোড বা ডাউনলোড করতে গেলে এখন স্পিডের ওঠানামা লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া ঢাকার বাইরে গেলেই প্রায়ই দেখা যায় ফ্রিল্যান্সাররা ভাল মানের ব্রডব্যান্ড সংযোগ পাচ্ছে না।
এছাড়া ব্যবসায়িক পরিচয় নিয়ে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। যেহেতু বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্স বা মুক্ত পেশাজীবী অফিস ছাড়া কাজ করছে, তারা ট্রেড লাইসেন্স নিতে পারছে না বা ব্যবসা নিবন্ধন করতে পারছে না। অথচ প্রতি বছর ৪০-৫০ মিলিয়ন ডলার তাদের হাত ধরেই দেশে আসছে। এখানে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনে পলিসি তৈরি করে ফ্রিল্যান্স পেশাজীবীদের ব্যবসায়িক পরিচয় তৈরির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

পেমেন্ট পাওয়া নিয়েও বিভিন্ন কথা শোনা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রাইভেট ব্যাংক ও বেসিসের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে কেমন?

সাইদুর মামুন খান: পেমেন্ট নিয়ে আজ থেকে কয়েক বছর আগে যেমন সমস্যা ছিল, তেমনটা আসলে এখন আর নেই। যারা মার্কেটপ্লেসে কাজ করছেন, তারা সহজেই ব্যাংকে তাদের পেমেন্ট নিয়ে আসতে পারছেন। আগে অনেক সময় দেশীয় ব্যাংকগুলো কাগজপত্র নিয়ে ঝামেলা করত, তবে এখন বিষয়টি অনেক সহজ হয়ে গেছে। যারা বাইরে কাজ করছে, তারা পেয়োনিয়ার, পায়জা ইত্যাদি সার্ভিস ব্যবহার করে পেমেন্ট গ্রহণ করতে পারছে। এর বাইরে বেসিসের পক্ষ থেকে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ইআরকিউ অ্যাকাউন্ট খোলার যে ব্যবস্থা করে হয়েছে সেটা অনেকে ব্যবহার করে পেমেন্ট নিতে পারছে আবার সেটা দেশের বাইরেও ব্যবসা সম্প্রসারণে কাজে লাগাতে পারছে।

আমাদের দেশে ক্রিয়েটিভ কাজ বলতে এখন সেই ফটোশপ এবং ইলাস্ট্রেটরের মধ্যেই আটকে যায় অধিকাংশ মানুষ। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে যদি ভবিষ্যতে বাজিমাত করতে হয়, তাহলে এই চিন্তা ধারণার বাইরে বের হয়ে আসতে হবে। ভারচুয়াল রিয়ালিটি, ৩৬০ ডিগ্রি ভিডিও প্রোডাকশন এবং এডিটিং, ক্যারেক্টার ডিজাইন ইত্যাদি ক্রিয়েটিভ কাজের সেক্টরগুলোতেও কিন্তু দুর্দান্ত চাহিদা রয়েছে। শুধু দরকার দক্ষ জনবলের। আমাদের ফ্রিল্যন্সাররা যদি এভাবে নিজেদের স্কিল নিয়ে একটু গবেষণা করে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ চাহিদাগুলো নিয়ে একটু পড়াশোনা করে যদি নিজেদের তৈরি করে, তাহলে অচিরেই আমাদের দেশের তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাত অনেক উপরে পৌঁছে যাবে

ফ্রিল্যান্সারদের জন্য জন্য কয়েকটি টিপস, যা তাদের চলার পথকে সুগম করবে। সঠিক ট্র্যাকে থাকতে সহায়তা করবে।

সাইদুর মামুন খান: আমার প্রথম টিপস হল আগে নিজের দক্ষতা, আগ্রহ এবং পড়াশোনা বিবেচনা করে নিজের জায়গা বুঝে নিতে হবে। ফ্রিল্যান্স কাজ করা সবার জন্য না, ঠিক যেমনটা যে কেউ চাইলেই কিছু কোর্স করে আর একটু প্র্যাকটিস করে ডাক্তার বা উকিল হয়ে যেতে পারে না। এর জন্য প্রচুর চর্চা, পড়াশোনা এবং সর্বোপরি আগ্রহ থাকতে হয়। সবার আগে নিজেকে বিশ্ব মার্কেটে উপস্থাপন করার মত করে তৈরি করে নিতে হবে। যদি সেরকম মনোবল না থাকে তাহলে আগে কিছুদিন দেশি মার্কেটে কাজ করে প্রয়োজনে অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানে বা প্রতিষ্ঠিত কারও সঙ্গে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। অনলাইনে হোক আর স্থানীয় (লোকাল) মার্কেটে হোক, ফ্রিল্যান্স কাজ করা হচ্ছে ‘একাই একশো’ হয়ে একটি ব্যবসা চালানোর মত। দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা ছাড়া আসলে এখানে সাফল্য কামনা করা বোকামি হবে।
আমাদের দেশে এখনও ফ্রিল্যান্স বা আইটি ক্যারিয়ারে খুব নির্দিষ্ট কিছু স্কিল নিয়ে কাজ করা হয় এবং কাজ সেখানো হয়, যেটা আসলে ভবিষ্যতের সঙ্গে সেভাবে তাল মিলিয়ে চলার জন্য পর্যাপ্ত নয়। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের দেশে ক্রিয়েটিভ কাজ বলতে এখন সেই ফটোশপ এবং ইলাস্ট্রেটরের মধ্যেই আটকে যায় অধিকাংশ মানুষ। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে যদি ভবিষ্যতে বাজিমাত করতে হয়, তাহলে এই চিন্তা ধারণার বাইরে বের হয়ে আসতে হবে। ভারচুয়াল রিয়ালিটি, ৩৬০ ডিগ্রি ভিডিও প্রোডাকশন এবং এডিটিং, ক্যারেক্টার ডিজাইন ইত্যাদি ক্রিয়েটিভ কাজের সেক্টরগুলোতেও কিন্তু দুর্দান্ত চাহিদা রয়েছে। শুধু দরকার দক্ষ জনবলের। আমাদের ফ্রিল্যন্সাররা যদি এভাবে নিজেদের স্কিল নিয়ে একটু গবেষণা করে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ চাহিদাগুলো নিয়ে একটু পড়াশোনা করে যদি নিজেদের তৈরি করে, তাহলে অচিরেই আমাদের দেশের তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাত অনেক উপরে পৌঁছে যাবে।বাংলাট্রিবিউন



মন্তব্য চালু নেই