খোলা আকাশের নিচে চলে শিক্ষার্থীদের পাঠ দান

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার চরযশোরদী ইউনিয়নের রাখালগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবন না থাকায় খোলা আকাশের নিচে চলে শিক্ষার্থীদের পাঠ দান। সেই সাথে খেলার মাঠ, শৌচাগার, লাইব্রেরী না থাকায় ও ব্যাঞ্চ সংকটে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। কথাটি এমন “চোখ থাকতেও দেখার যেন কেও নেই ”।

১৯৯৫ সালে রাখালগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য একটি টিনসেট ছোট ভবন নির্মাণ করা হলেও, নির্মাণ কাজ নি¤মানের হওয়ায় বর্তমানে ভবনটির দেয়াল, পিলার, দরজা, জানালাসহ টিনের চাল সবই প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের ভবন না থাকায় ব্যাঞ্চ, টেবিল, ব্লাকবোর্ডসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ বাধ্য হয়ে উন্মুক্ত জায়গায় রাখতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ের মুল্যবান উপকরন চুরি যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও কিছুই করার নেই শিক্ষকদের।

খোলা আকাশের নিচে, ধুলো বালির মধ্যে ক্লাশ করতে হয় শিক্ষার্থীদের। প্রচন্ড রোদে সীমাহীন কষ্ট সহ্য করে খোলা আকাশের নিচে ক্লাশ করে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে এরই মধ্যে। বৃষ্টির এই দিনে বিদ্যালয়ে পাঠ দান অব্যাহত রাখতে গেলে আরো দুর্ভোগ পোহাতে হয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। বৃষ্টির দিনে ক্লাশ করতে যেয়ে অনেক শিক্ষার্থীর বই খাতা ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। বৃষ্টিতে স্কুলড্রেস ভিজে ঠান্ডা, কাশি, নিউমুনিয়াসহ জটিল বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে অনেকেই। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য নেই কোন শৌচাগার এই বিদ্যালয়ে।

এ কারনে চরম ভোগান্তির মধ্যে অমানবিক পরিস্থিতির সাথে সংগ্রাম করছে এ বিদ্যালয়ের পাঠ দান ও গ্রহনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই। তার পরেও সব কষ্ট, সব বাধা উপেক্ষা করে ২০১৫ সালে এ বিদ্যালয়ে ১৭৫ জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যায়ন করছে বলে জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভীন সুলতানা।

এলাকাবাসীর দাবি, এই বিদ্যালয়ের সভাপতি ও শিক্ষকরা শিক্ষাদান করার মতো মহান পেশাকে মানব সেবার ও শিক্ষার আলো সবার মাঝে পৌছে দেয়ার সুযোগ মনে করে, সীমাহীন প্রতিকুলতার মাঝেও শিশুদের শিক্ষাদানে আছেন অবিচল। শিক্ষকদের আন্তরিকতায় ও প্রচেষ্টায় এই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষার মান খুবই সন্তোষজনক। যদি বিদ্যালয়ের ভবন, খেলার মাঠ, শৌচাগার, লাউব্রেরীসহ প্রয়োজনীয় সব ঠিকঠাক থাকতো, তাহলে এই স্কুলটির ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা ও শিক্ষার মান উপজেলার মানুষের কাছে মডেল হতে পারতো।

বিদ্যালয়ের সভাপতি হাফিজুর রহমান তালুকদার বলেন, বিদ্যালয়ের এমন বেহাল দশা এই একুশ শতকে এসে সম্ভাবত বাংলাদেশে আর দ্বিতীয়টি নেই। তার পরেও সুনামের সাথে পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এটা সম্ভব হয়েছে শুধু এলাকার শিশুদের শিক্ষার প্রতি প্রবল আগ্রহ ও অভিভাবকদের আন্তরিকতার কারনে। তবে এভাবে আর হয়তো চলা অসম্ভব হয়ে পরেছে। সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিৎ শিশুদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে বিশেষ বিবেচনায় ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটি মান সম্পন্ন ভবন যত দ্রুত সম্ভব নির্মাণ করার ব্যবস্থা করা। আমরা উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বিদ্যালয়ের সার্বিক সমস্যা জানিয়েছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মহসিন মোল্যা বলেন, রাখালগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি ভবন নির্মাণ করা খুবই জরুরী। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করেছি। আশা করছি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।



মন্তব্য চালু নেই