খুলনায় ১২ হাজার শিক্ষার্থীর স্নাতকে ভর্তি অনিশ্চিত

উচ্চমাধ্যমিকে (এইচএসসি) ভালো ফলাফল করেও প্রায় সাড়ে ১২ হাজার শিক্ষার্থীর খুলনার দু’টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলোতে স্নাতকে (সম্মান) ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। উচ্চ শিক্ষায় আসন সংকট এবং তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দুর্দান্ত ফল করেও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনা জেলার ৯৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ২৩ হাজার চারজন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ১৯ হাজার ৪১৫ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু তার বিপরীতে খুলনার দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনটি সরকারি কলেজে মাত্র ছয় হাজার ৯৪০ আসন রয়েছে।

ফলে ভালো ফল নিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও ১২ হাজার ৪৭৫ জন শিক্ষার্থী খুলনার সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্নাতকে (সম্মান) ভর্তির সুযোগ হারাবে।

যশোর বোর্ড সূত্রে জানা যায়, যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে খুলনা সবার শীর্ষে। এখানে পাসের হার ৮৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। খুলনার সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ খুলনা জেলার শীর্ষে রয়েছে। কলেজটিতে এক হাজার ৪৪১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। যাদের মধ্যে এক হাজার ৪১৬ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। পাসের হার ৯৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৮০ জন।

এছাড়াও পার্শ্ববর্তী বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, যশোর, নড়াইল, ঝিনাইদহ ও মাগুরা থেকেও বিভাগীয় শহর খুলনায় লেখাপড়া করতে আসার আগ্রহ রয়েছে অনেক শিক্ষার্থীর। এ অবস্থায় যশোর বোর্ডের মধ্যে খুলনা জেলা দুর্দান্ত ফল করেও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

সূত্রমতে, খুলনায় স্নাতক ভর্তি হওয়ার জন্য সরকারি কলেজ রয়েছে মাত্র তিনটি। বেসরকারি কয়েকটি কলেজে স্নাতক চালু থাকলেও শিক্ষার গুণগত মানের কারণে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ নেই।

এছাড়া উচ্চ শিক্ষার জন্য দু’টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও এখানে জাতীয় মেধা সংযুক্ত হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বিপুল সংখ্যক মেধাবী শিক্ষার্থীরা মেধাক্রম অনুসারে খুলনার দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। পাশাপাশি আসন সংকটের কারণে বাদ পড়ে যায় ভালো ফল করা অনেক শিক্ষার্থী।

জানা যায়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি অনুষদে ও একটি ইনিস্টিটিউটে মোট আসন সংখ্যা ৯৭৫। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) তিনটি অনুষদের ৯টি বিভাগে রয়েছে ৭২৫টি আসন। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন নগরীর সরকারি কলেজগুলোতেও রয়েছে আসন স্বল্পতা।

এর মধ্যে সরকারি আযমখান কর্মাস কলেজে চারটি বিষয়ে আসন সংখ্যা এক হাজার ৫০টি, সরকারি বিএল কলেজে ১৭টি বিষয়ে আসন সংখ্যা তিন হাজার ১৬০টি এবং নগরীর সরকারি মহিলা কলেজে আসন সংখ্যা এক হাজার ৩০টি। মহানগরীসহ খুলনা জেলার কলেজ ও মাদরাসাগুলো থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা এর থেকেও দ্বিগুণ।

অর্থাৎ খুলনার দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় ও তিনটি কলেজে ছয় হাজার ৯৪০ আসনের বিপরীতে শুধুমাত্র খুলনাতেই ভালো ফলাফলকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিনগুণের কাছাকাছি। সেই সঙ্গে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে পরীক্ষা হওয়ায় সারাদেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে খুলনার শিক্ষার্থীদের। সে হিসেবে ভালো ফল করা সত্ত্বেও খুলনার দুই বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্নাতকে ভর্তি হতে পারবে না প্রায় সাড়ে ১২ হাজার শিক্ষার্থী।

এ প্রসঙ্গে যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও খুলনা কালেক্টরেট কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল বাশার মোল্লা বলেন, রাতারাতি ভালো কলেজ তৈরি করা যায় না। তাই ভালো কলেজগুলোর অবকাঠামোগত সুবিধা থাকলে সরকার সেখানে আসন সংখ্যা বাড়াতে পারে। এছাড়া অন্যান্য কলেজগুলোয় পড়াশুনার মান আরো বাড়িয়ে এ সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। এছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।



মন্তব্য চালু নেই