খুলছে শাবিপ্রবি : তিন হলে তল্লাশি, বিপুল অস্ত্র উদ্ধার

গত ২০ নভেম্বর ছাত্রলীগের দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) খুলছে আজ রোববার। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ প্রায় দুই মাস শিক্ষার্থীদের নিদারুণ অপেক্ষার অবসান ঘটছে।

তবে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে ওই সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো মিটমাটের ব্যবস্থা না করায় এবং ওই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন এখনো প্রকাশিত না হওয়ায় আবারও শাবিপ্রবি উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রোববার বিশ্ববিদ্যালয় খোলাকে কেন্দ্র করে শনিবার তিনটি হলে পুলিশের সাহায্যে তল্লাশি চালিয়েছে প্রশাসন। তল্লাশিতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে।

এ দিকে শাবিপ্রবির তিনটি ছাত্র হলে এত দিন বসবাসকারীদের মধ্যে ৯৩ ভাগই অবৈধ ছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

গত ২০ নভেম্বর ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের বিবদমান দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী বন্দুকযুদ্ধ সংঘটিত হয়। বন্দুকযুদ্ধে বহিরাগত এক ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে।

প্রায় দুই মাস পর গত ১০ জানুয়ারি সিন্ডিকেটের ১৯০তম সভায় ক্যাম্পাসে সব ধরনের মিছিল, সমাবেশ, স্লোগান, পোস্টারিং নিষিদ্ধ করে ১৮ জানুয়ারি থেকে ক্যাম্পাস খোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে প্রশাসনের এ ধরনের সিদ্ধান্তকে তাৎক্ষণিকভাবেই প্রত্যাখ্যান করে শাবিপ্রবির ছাত্রসংগঠনগুলো।

শাবিপ্রবি ছাত্রলীগ সহসভাপতি অঞ্জন রায়, ছাত্রদলের আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট শাবিপ্রবি শাখার সভাপতি অনীক ধর, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শ্রীকান্ত শর্মা প্রমুখ নেতা প্রশাসনের এ ধরনের সিদ্ধান্তকে হঠকারী ও অগণতান্ত্রিক বলে মন্তব্য করে প্রত্যাখ্যান করেন।

এমতাবস্থায় আজ শাবিপ্রবি খুললেও ফের উত্তাপ ছড়াবে না- এমন নিশ্চয়তা দিচ্ছেন না কেউই। তা ছাড়া, ছাত্রলীগের ওই সংঘর্ষের ঘটনায় কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিশোধ নিতে আবারও বিশৃঙ্খল হয়ে উঠতে পারে ক্যাম্পাস। এমনকি ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনও প্রকাশ করেনি। কবে করা হবে- সেটাও অনিশ্চিত।

এ দিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগের ওই সংঘর্ষের ঘটনার আগে শাবিপ্রবির তিনটি ছাত্র হলে যত ‘ছাত্র’ থাকতেন, তাদের ৯৩ ভাগই ছিলেন অবৈধ। তারা হলে থাকার জন্য কোনো ধরনের ফি দিতেন না। তিনটি হলই ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল বলে জানা যায়। আর ছাত্রলীগ নেতাদের ধরেই বিভিন্নজন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আসন গাড়তেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাবিপ্রবির তিনটি হল তথা বঙ্গবন্ধু হল, শাহপরান হল ও সৈয়দ মুজতবা হলে আসনসংখ্যা হচ্ছে যথাক্রমে ৫০৮, ৪৪৭ ও ৬৪টি। তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু হলের মাত্র ৫৮টি আসনে বৈধ ছাত্র ছিলেন। একই অবস্থা শাহপরান হলেও। হলটিতে মাত্র ৭০ জন বৈধ ছাত্র থাকতেন।

আর সৈয়দ মুজতবা হলে সবগুলো আসনেই ছিলেন অবৈধরা। তবে এই অবস্থা আগেও ছিল। যখন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় ছিল, তখন হলগুলোর নিয়ন্ত্রণ করত ছাত্রদল-ছাত্রশিবির। তারও আগে, আওয়ামী লীগ শাসনামলে ছিল ছাত্রলীগের দাপট। তবে এই অবস্থা আর থাকবে না বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এখন থেকে হলগুলোতে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিকৃত বৈধ ছাত্রদেরকেই থাকার অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে তারা। আর এ লক্ষ্যেই হলগুলোতে অবৈধদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং হলগুলো অস্ত্রশূন্য করতে শনিবার পুলিশের সহায়তায় তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশিতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।

উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে ছিল ৫৫টি রামদা, ৮১টি পাইপ, ১২৪টি রড, ছুরি ১০টি ও চায়নিজ কুড়াল একটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয়ে শনিবার দিবাগত রাতে কথা হয় শাবিপ্রবির ভিসি অধ্যাপক আমিনুল হক ভূঁইয়ার সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘সিন্ডিকেট সভায় আপাতত ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা বলবৎ থাকবে।’

হলে অবৈধ ছাত্রদের থাকার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে হয়তো অবৈধরা হলে উঠেছিল, বৈধ ছাত্রদের সংখ্যা কম ছিল। তবে এখন থেকে আমরা এ বিষয়টির ওপর জোর নজর দেব। আবাসিক হলগুলোতে যাতে বৈধরাই উঠতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখা হবে।’



মন্তব্য চালু নেই