খুবিতে প্রকল্পের কাজে ১০ লাখ টাকা ‘সম্মানী’ দাবী করে বিপাকে কর্মকর্তারা

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের একটি কাজ চলছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) আওতায় কাজটি হচ্ছে। সেই উন্নয়নকাজ মূল্যায়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘মধ্যবর্তী মূল্যায়ন কমিটি’ গঠন করে দেয়। এই কমিটির সদস্যরা ‘সম্মানীর’ নামে ১০ লাখ টাকা চাইতে গেলেই ঘটে বিপত্তি।

বিষয়টি ধরা পড়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোলপাড় চলছে। এ ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান স্বপন কুমার ঘোষ ও উপপ্রধান ওমর ইমরুল মহসিনকে কাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার বিশ্বাসের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। ইউজিসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক নাছিমা রহমান ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক আতোয়ার রহমানকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়া হয়েছে। ইউজিসিও আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিয়ে বিরাট অঙ্কের সম্মানী নির্ধারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তদন্ত কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্তে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইউজিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এম শাহ নওয়াজ আলী বলেন, তাঁরা আইনি ব্যবস্থা নেবেন।

মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, আবাসিক হল নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজের জন্য ২০১০ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। মোট ১৮টি কাজের জন্য ও কন্টিনজেন্সির (থোক বরাদ্দ) ৫৫ লাখ টাকাসহ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৮০ কোটি ১০ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের জুনে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। তখন সংশোধিত ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৮৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এ সময় সুকৌশলে প্রকল্পের মধ্যবর্তী মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের সম্মানীর জন্য ১০ লাখ টাকা রাখা হয়।

6116dc1c0402e6b1332f86c775179af0-Untitled-2

পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান স্বপন কুমার ঘোষের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের ‘মধ্যবর্তী মূল্যায়ন কমিটি’ গঠন করা হয়। সেই কমিটিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ছাড়াও ইউজিসি, পরিকল্পনা কমিশন ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের রাখা হয়। গত ২৯ এপ্রিল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটির সভা ডাকা হয়। সেখানে কমিটির সদস্যরা উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ ফায়েকউজ্জামানের বাসভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। সেখানেই কমিটির সদস্যরা ‘সম্মানীর’ টাকা চান। কিন্তু তাতে বেঁকে বসেন উপাচার্য। একপর্যায়ে তিনি চেকের মাধ্যমে টাকা দিতে চান। কিন্তু কমিটির সদস্যরা তাতে রাজি হননি। এ নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়।

পরে উপাচার্য এ বিষয়ে শিক্ষাসচিব ও ইউজিসির কাছে অভিযোগ দেন। তখন মূল্যায়ন কমিটি জানায়, প্রকল্প প্রস্তাবেই মধ্যবর্তী মূল্যায়ন কমিটির জন্য ১০ লাখ টাকা সম্মানীর অনুমোদন রয়েছে; যেখানে শিক্ষাসচিব, ইউজিসি চেয়ারম্যান ও উপাচার্যের সই রয়েছে। এ বিষয়টি জানার পর মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আরও বিস্মিত হন ও ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেন। কারণ এ বিষয়টি তাঁদের অবহিত না করেই সই নেওয়া হয়েছে।

একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এভাবে নিজেদের মূল্যায়ন কমিটির নামে এত টাকা সম্মানী কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির তিনজন সদস্য বলেন, তাঁরা অনুমোদিত ‘সম্মানী’ চেয়েছেন, তবে আনেননি। তাঁদের দাবি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এটা প্রথম ঘটনা হলেও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের কিছু প্রকল্পে এ ধরনের সম্মানী নেওয়া হয়।

গত মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্বপন কুমার ঘোষ ও উপপ্রধান ওমর ইমরুল মহসিন অফিসে আসেননি। তবে গত সোমবার স্বপন কুমার ঘোষ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কেউ তাদের (বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ) কাছে টাকা দাবি করেনি। বরং প্রকল্পের দুর্বলতা এড়াতে তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

ইউজিসির দুই কর্মকর্তা মঙ্গলবার অফিসে গেলেও বিকেলে তাঁদের বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়া হয়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ ফায়েকউজ্জামান বলেন, তদন্তে যদি তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কর্মকর্তার যোগসাজশ প্রমাণিত হয়, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  প্রথম আলো



মন্তব্য চালু নেই