খালেদা-তারেকবিহীন বিএনপি আসছে?

খালেদা-তারেকের নেতৃত্বাধীন বিএনপি এখন চরম সঙ্কটের মুখে। বিএনপি এখন কঠিন সময় অতিক্রম করছে। দল সৃষ্টির পর থেকে বিভিন্ন সময় নানা বাধা আসলেও বর্তমান পরিস্থিতির মতো এত সঙ্কটের মধ্যে বিএনপি আর কখনো পরেনি। বর্তমান সঙ্কটকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার মতো নেতৃত্ব এখন বিএনপিতে নেই। প্রায় নয় বত্সরের কাছাকাছি দলটি ক্ষমতার বাহিরে থাকাতে নানা দল ও নানা মতামতের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের এখন একত্রে ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এরা সকলেই দলে এসেছিলেন কিছু পাওয়া, কিছু নেওয়ার জন্য। কিন্তু বর্তমান বিএনপির অবস্থা দেখে এদের অনেকেই ইতিমধ্যেই কেটে পড়েছেন। বাকিরাও কেটে পরার চিন্তা ভাবনা করছেন।

এদিকে নিস্তেজ বিএনপিকে পুনরায় সতেজ করা অসুস্থ খালেদা জিয়ার পক্ষে এখন আর ততটা আগের মতো সহজ নয় বলেই অনেকে মনে করছেন। অন্যদিকে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান পরোক্ষভাবে বিএনপির নেতৃত্ব দিলেও তিনি কোনভাবেই দলকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারছেন না বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। কারণ দীর্ঘদিন থেকে দেশের বাইরে থাকায় বিএনপি ও দেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতির বাস্তবতা থেকে এখন তারেক রহমান অনেক দূরে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি হয়তো রিস্ক নিয়ে আর দেশে ফিরে আসতে চাইবেন না। এমন অবস্থায় তার ব্রিটেনে বসবাসের সময় আরো দীর্ঘ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

এছাড়া অবস্থা দেখে আপাতদৃষ্টিতে মনে করা যেতে পারে আগামী ২০১৯ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের ক্ষমতায় আসার সম্ভবনা রয়েছে। বর্তমান অবস্থায় লন্ডনে বসে বিএনপিকে তারেক রহমান কতটুকু নেতৃত্ব দিতে পারবেন সে বিষয়ে অনেকেই সন্দেহ করেন। বিএনপির এই দুঃসময়ে দলটি সামনের দিকে আদৌ আর অগ্রসর হতে পারবে কি না তাতে সন্দেহ রয়েছে। তাই দলের অনেক কেন্দ্রীয় নেতাকে এখন খালেদা-তারেকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা পর্যন্ত করতে দেখা যাচ্ছে।

বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে বিএনপির ভবিষ্যৎ ক্রমাগত ছোটো হয়ে আসার সম্ভবনা রয়েছে। যার কারণে অনেকেই মনে করছেন আর বিলম্ব না করে দলকে নুতন করে পুনর্গঠন করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থায় এব্যপারে তিনি কতটুকু সফল হতে পারবেন তা নিয়ে প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক। অন্যদিকে তারেক রহমান বর্তমান বয়স্ক সিনিয়ার নেতাদের সরিয়ে দিয়ে তরুণদের হাতে বিএনপির নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী। কারণ অতীতে বিএনপির ডাকা আন্দোলনগুলোতে এসকল সিনিয়ার নেতাদের রাস্তায় নামতে দেখা যায়নি। অনেকের সাথে সরকারের আঁতাত রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এসব নেতারা বিএনপির শাসন আমলে বড় বড় ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ পেয়েছেন। বর্তমানে এগুলোকে ধরে রাখতে তারা দলের ডাকে সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে আগ্রহী নন। এদের অনেকেই শুধু শুধু নিজের অর্থনৈতিক ক্ষতি ডেকে আনতে চান না। ইতিমধ্যে এ ধরনের সমস্যার মধ্যে জড়িয়ে পড়েছেন ঢাকা ব্যংকের মালিক মির্জা আব্বাসসহ কয়েকজন সিনিয়ার নেতা। অন্যদিকে বিএনপি অদূর ভবিষ্যতে কবে আবার ক্ষমতায় আসতে পারবে কিংবা আদৌ কোনো দিন আসতে পারবে কি না সে ব্যাপারে কোনো গ্যারেন্টি নেই। এমন অবস্থায় গা বাঁচিয়ে চলাটাকেই অনেক সিনিয়ার নেতারা উচিৎ বলে মনে করছেন। এদের অনেককেই এখন তারেক রহমানের পছন্দ নয়। তিনি সুবিধাবাদী এসকল নেতাদের সরিয়ে দিয়ে দলে নুতন নেতৃত্ব নিয়ে আসতে আগ্রহী। মা বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ হলে তারেক রহমান সম্ভবত এ ধরনের সিনিয়ার নেতাদের উপদেষ্টা কিংবা অন্যভাবে দলের ক্ষমতাবান পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার দাবি জানাতে পারেন।

এদিকে বর্তমান সরকারও নিজেদের স্বার্থে চাইবে বিএনপি ভেঙে যেন বিভক্ত হয়। এ ব্যাপারে সরকার প্রয়োজনে বিপক্ষ শক্তির সহযোগিতায় এগিয়ে আসতেও পারে বলে অনেকে মনে করছেন। ইতিমধ্যেই অনেকে বলছেন- এই মুহূর্তে যদি খালেদা জিয়ার কোনো কিছু হয়ে যায় তাহলে বিএনপি ভেঙে কয়েক টুকরো হয়ে যেতে পারে। এমন অবস্থায় খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর অবশ্যই গুরুত্ব বহন করছে। তিনি লন্ডন যেতে পারবেন কি পারবেন না এব্যাপারে সরকার থেকে এখন পর্যন্ত পরিষ্কারভাবে কিছু বলা হয়নি। কারণ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা নিয়মমাফিক চলে আসছে। এই অবস্থায় দেশের বাইরে যাওয়ার নো অবজেকশন সার্টিফিকেট আদালত তাকে দিবে কি দিবে না সে সম্পর্কেও এখনো কিছু বলা হয়নি।

অনেকে বলছেন- খালেদা জিয়া লন্ডন গেলে তিনি তার শারীরিক অসুস্থতার কারণে দীর্ঘ সময় পরিবারের সাথে থাকার সম্ভবনা রয়েছে। এই অবস্থায় দেশে বিএনপির নেতৃত্বের ভার যাকে দেয়া হবে তাকে অবশ্যই অত্যন্ত বিশ্বস্ত হতে হবে। বর্তমানে যারা বেগম খালেদা জিয়ার আশেপাশে আছেন তাদের বিরুদ্ধে দলের ভেতরে রয়েছে বিভিন্ন অভিযোগ।

পর্যবেক্ষক মহলের মতে, খালেদা জিয়া দেশের বাইরে গেলে বিএনপির সিনিয়ার নেতারা নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের ব্যাপারে একটা সমঝোতায় আসার সম্ভবনা দেখা দিতে পারে। বিএনপির অনেক সিনিয়ার নেতারা মনে করেন দলের জনপ্রিয়তা এখনো বর্তমান। সুতরাং ২০১৯ নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের নামকে সামনে রেখে খালেদা-তারেকবিহীন বিএনপি গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে দলের পক্ষে ভালো ফলাফল আসার সম্ভবনা রয়েছে। এইসময় যদি খালেদা জিয়া আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা কোনো নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে জামায়াতকে সাথে নিয়ে আন্দোলনে নামেন তাহলে দলের ভবিষ্যৎ অস্তিত্ব কঠিন সমস্যার মধ্যে পড়ার সম্ভবনা রয়েছে।

অন্যদিকে আগামী নির্বাচনের পূর্বে সরকার হয়তো জামায়াতের সকল রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। ফলে এককভাবে বিএনপির পক্ষে নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় আসা কোনোদিন আর সম্ভব হবে না বলেই অনেকে মনে করছেন। পরিসংখ্যান অনুসারে বিএনপির পক্ষে এখন পর্যন্ত ৩৫% ভোট আসার সম্ভবনা রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। যদিও বিএনপির অনেকে বলছেন- সেই হার ৭৫%। তবে দল ভেঙে গেলে ভোটের ফলাফল আরো খারাপ হবে বলেই পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন।

পরিসংখানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৩০% মানুষ সরাসরি আওয়ামী লীগ বিরোধী। এই জনগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ ও ভারতবিরোধী যে কোনো মোর্চায় সবসময় সমর্থন জানিয়ে আসছে। এই জনগোষ্ঠীকেই সম্ভবত খালেদা-তারেকবিহীন বিএনপি আগামীতে তাদের পক্ষে নিয়ে আসার চেষ্টা করবে। তাহলে ২০১৯ জাতীয় সংসদের নির্বাচনে তাদের অবস্থান শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকায় আসার একটা বড় সুযোগ পাবে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর ও পরবর্তীতে তার সাংগঠনিক কর্মসূচির উপর। বাংলাদেশের জনগণ চায় দেশে একটা শক্তিশালী বিরোধী দলের অবস্থান। বর্তমানে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে কেউ বিরোধী দল হিসেবে দেখছে না। কারণ সরকারের সাথে আপোষ করে তারা ক্ষমতায় রয়েছে।

অন্যদিকে অনেকে মনে করেন বিএনপির এই দুর্বলতার সুযোগে এরশাদের জাতীয় পার্টি ক্ষমতা থেকে সরে এসে সরকার বিরোধী দলের ভূমিকায় মাঠে নামলে জনগণের একটা ভালো সমর্থন দলটির পক্ষে আসার সম্ভবনা রয়েছে। তবে ক্ষমতায় থাকা আর না থাকা নিয়ে দলটির মধ্যে বর্তমানে রয়েছে মতানৈক্য। এই কারণে এরশাদের ইচ্ছা থাকা সত্বেও তিনি জাতীয় পার্টিকে সরকার বিরোধী ভূমিকায় নিয়ে আসতে পারছেন না। অনেকের মতে বিএনপিকে ঠেকাতে সরকারের সাথে একটি আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দলের ভূমিকায় রাজনৈতিক মাঠে নামা উচিৎ। এখন প্রশ্ন হলো বর্তমান অবস্থায় এরশাদ কি পারবেন জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দল হিসেবে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে? কিংবা খালেদা-তারেকবিহীন বিএনপি কি পারবে আগামী নির্বাচনে বিরোধী দলের আসনে বসতে?

এদিকে খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা ও তারেক রহমানের দীর্ঘ সময় লন্ডনে অবস্থান জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত বিএনপিকে এখন বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে বলে পর্যবেক্ষকমহল মনে করছেন। দলটি এতোবড় ক্রাইসিসের মধ্যে এর আগে আর কখনো পড়েনি। এখন বিএনপির চারিদিকে শুধু নাই নাই অবস্থা। এই সুযোগে কর্নেল অলি, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ও বদরুদ্দোজাসহ কয়েকজন নেতা বিএনপিতে ফিরে আসার পায়তারা করছেন। তবে তারা বিএনপিতে আসলে দলের বর্তমান অবস্থার আদৌ কোনো পরিবর্তন হবে কি না তাতে সন্দেহ রয়েছে। বরং আরো খারাপও হতে পারে। কারণ এই তিনজনই তিন মেরুকরণের ব্যক্তি। অন্যদিকে অলি ও বদরুদ্দোজা একসময়ে এক হয়েও এক থাকতে পারেননি। ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় তারা কেউ কাউকে মানতে বা ছাড় দিতে রাজি নয়। অন্যদিকে অলি, হুদা ও বদরুদ্দোজা এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো গুরুত্ববহন করেন না। এই অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়া জেনেশুনে খাল কেটে কুমির নাও আনতে পারেন। যদিও তিনজনই আপ্রাণ চেষ্টা করছেন বিএনপির এই ক্রাইসেসকে সৎব্যবহার করে নিজেদের অবস্থানকে বিএনপিতে পাকাপোক্ত করতে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, একসময় এই তিনজনই বিএনপি থেকে বের হয়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড সমালোচনা করেছেন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমানে একটা পরিবর্তন প্রয়োজন বলে পর্যবেক্ষকমহল মনে করছেন। সম্প্রতি দেশ থেকে ফিরে এসে আমার কাছে এখন তাই মনে হচ্ছে। দেশে এখন কোনো বিরোধী দল নেই। চারিদিকে শুধু আওয়ামী লীগের জয় জয়কার। অন্যদিকে বিএনপি গত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করাতে এখন দিন দিন দুর্বল হয়ে আসছে। বর্তমানে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত তাদের কথাও আর দেখা যায় না। অনেকে দল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগে চলে আসছেন। এই কারণে আজ একটি প্রশ্ন সকলের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, বিএনপির বিকল্প কী? কারণ বিএনপি বর্তমানে যেখানে অবস্থান করছে সেখান থেকে তাদের আগের জায়গায় ফিরে আসা আদৌ আর সম্ভব হবে কি না তাতে সন্দেহ রয়েছে। দলের ভেতরে চলছে এখন নেতৃত্বের লড়াই ও একে অপরের প্রতি অবিশ্বাস। একসময় বামপন্থি দল থেকে বিএনপিতে আসা রাজনীতিবিদরা এখন দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।

বিএনপি এখন বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে বন্দী। দলের প্রতিষ্ঠালগ্নে থাকা রাজনীতিবিদদের হাত থেকে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি এখন দক্ষিণপন্থি জামায়াত ও মুসলিমলীগদের হাতে চলে গেছে। তাই প্রশ্ন এসেছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল প্রতিষ্ঠার কথা। ২০১৯ নির্বাচনের পূর্বে দেশে এ ধরনের একটি রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব হলে নির্বাচনে তারা ভালো ফলাফল করবে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন। কারণ বিএনপি আর স্বাধীনতাবিরোধীদের সাথে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার সুযোগ পাবে না। বর্তমান সরকার তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছে। আগামী দিনগুলোতে খালেদা জিয়া-তারেকের নেতৃত্বাধীন বিএনপি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। আওয়ামী লীগ ২১ বছসর ক্ষমতার বাইরে থেকে সংগ্রাম করে আজ এই পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি কি পারবে এতো সময় অপেক্ষা করতে?

বর্তমান বিএনপি দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকলে দলটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে বলেই অনেকে মনে করছেন। এই কারণে বিএনপিকে তাদের রাজনৈতিক আদর্শের ক্ষেত্রে একটা বড় পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। আর এই পরিবর্তনের মূল বিষয় হলো বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশের স্বাধীনতার একক নেতা হিসেবে তাকে সকল সমালোচনার ঊর্ধ্বে রাখাটাই হবে বিএনপির জন্য উত্তম সিদ্ধান্ত। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত না করে ইতিহাসের সততাকে মেনে নিতে হবে। এই বাস্তবতাকে বিএনপিসহ দেশের সকল বিরোধী দলগুলোকে মানতেই হবে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক ও প্রাণ ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। বিশ্বের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় মহান নেতাদের ঐতিহাসিক ভূমিকার কারণে স্ব স্ব জাতির মানমর্যাদা উপরে উঠেছে। যেমন ভারতে মহাত্মা গান্ধী, তুরস্কে কামাল আতাতুর্ক, আমেরিকায় জর্জ ওয়াশিংটন, চিনে মাও সেতুং, ভিয়েতনামে হো চি মিন, কিউবায় ফিদেল কাস্ট্রো, সাউথ আফ্রিকায় নেলসন ম্যান্ডেলা, মালয়েশিয়ায় মাহাথির মোহাম্মদ, পাকিস্থানে মোহাম্মদ আলী। তেমনি বাংলাদেশের বেলায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।

বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন তত্কালীন এডিশনাল এটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার ফিদা মোহাম্মদ কামাল ২০০৪ অক্টোবরে স্টকহলম সফরকালে আমার সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। ওনার জন্যই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।’ একইভাবে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন স্টকহলম সফরকালে বিএনপির তত্কালীন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আমার সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর কথা অস্বীকার করা যাবে না।’

2015_09_11_11_51_06_UvrAfzIhpQvyCBbm6ghuzr0t3DLKii_original
মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু

এতোকিছুর পরও তাহলে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান কেন বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা করছেন? পর্যবেক্ষক মহলের মতে বর্তমান বিএনপিতে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি অত্যন্ত শক্তভাবে বসে আছে। তাদের সাথে রয়েছে জামায়াত। এদের কারণেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিএনপি একদিকে করে আসছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর নামকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চক্রান্ত করেছে। বিএনপিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের এধরনের রাজনৈতিক আদর্শের বিরুদ্ধে থাকলেও কোনোদিন তারা প্রতিবাদ করেননি। তাই এখন বিএনপিতে থাকা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি চিন্তা ভাবনা করছে জিয়ার নামকে সামনে রেখে খালেদা-তারেকবিহীন বিএনপি প্রতিষ্ঠার কথা। খালেদা জিয়ার লন্ডন অবস্থানকালে এমন একটা কিছু ঘটলে ঘটে যেতেও পারে বলে অনেকে সন্দেহ করছেন।

তবে সব কিছুই নির্ভর করতে পারে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ভবিষ্যৎ গঠনিক পরিবর্তনের উপর। লন্ডন থেকে এসে খালেদা জিয়া যদি তারেক রহমানের পরামর্শ অনুসারে বিএনপিতে একটা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেন তখন বিএনপিতে বসে থাকা এই গ্রুপটি সম্ভবত আর চুপ করে বসে থাকবে না। এসময় তাদের খালেদা-তারেকবিহীন বিএনপি প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা দেয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। খালেদা জিয়া দলের এই কঠিন সময়ে কি ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন এটাই এখন দেখার বিষয়। অন্যদিকে তিনি লন্ডনে গেলে কতদিন অবস্থান করবেন তাও দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করবে। বিএনপির এই আভ্যন্তরীণ কোন্দলে সরকার কি চুপ করে বসে থাকবে? নিশ্চই না! ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা খালেদা-তারেকবিহীন বিএনপি গঠনের কথা প্রকাশ্যে মিডিয়ায় বলেছেন। তারাও চান বিএনপি থাকবে। কিন্তু খালেদা-তারেকের নেতৃত্বে নয়। সুতরাং আজ হউক আর কাল হউক আসলেও আসতে পারে খালেদা-তারেকবিহীন বিএনপি!

এ লেখাটি শুধুমাত্র লেখকের অভিমত বা মুক্তমত। এ লেখার মতের সঙ্গে আওয়ার নিউজ বিডি’র কোনো সম্পর্ক নেই।



মন্তব্য চালু নেই