খালেদার সঙ্গে বৈঠকের অভিযোগে চাকরি হারালেন যুগ্ম সচিব

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) যুগ্ম সচিব এ কে এম জাহাঙ্গীরকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গুঞ্জন উঠেছে, গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করার অভিযোগে তাকে অবসরে পাঠানো হলো।
বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপন জারি করে জাহাঙ্গীরকে অবসরে পাঠানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জাহাঙ্গীরের চাকরির বয়স ২৫ বছর হওয়ায় সরকার জনস্বার্থে তাকে চাকরি থেকে অবসর দিয়েছে। ১৯৪৭ সালের চাকরিবিধি ক্ষমতাবলে তাকে এ অবসর দেওয়া হয়েছে। এর আগে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক সাংবাদিকদের জানান, খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করা কর্মকর্তাদের শনাক্ত করা হয়েছে, অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে গত বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করেন একদল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। ওই রাতেই দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই বৈঠকের বিষয়টি ফলাও করে প্রচারিত হয়।
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বরাবরই ওই বৈঠকের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- এমন কোনো বৈঠক হয়নি।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, বৃহস্পতিবার গুলশান কার্যালয়ে ওই ধরনের কোনো বৈঠক হয়নি।বিএনপি বৈঠকের বিষয়টি অস্বীকার করলেও ওই বৈঠকে যুগ্ম সচিব (ওএসডি) এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসেন, সিনিয়র সহকারী সচিব (ওএসডি) এহসানুল হক, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বাদিউল কবির, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইব্রাহীম মিয়াজী, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের নুরুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আবদুল মান্নান, এ কে এম হুমায়ুন কবীর, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অফিস সহকারী শহীদুল হক, এজি অফিসের কর্মচারী আবদুল মান্নান উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়। তবে কেন তারা বৈঠকে গিয়েছিলেন, সেখানে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি।
এই বৈঠক সম্পর্কে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, ‘বৈঠকে যোগ দেওয়ার অভিযোগে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের শাস্তি দেওয়া সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। যারা সরকারি চাকরিজীবী তারা ওই বৈঠকে যেতে পারেন না। যারা গিয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে প্রথমে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে হবে। তারপর অন্যান্য প্রক্রিয়া।”যারা ওএসডি আছেন তারাও বৈঠকে যেতে পারেন না। কারণ, তারা সরকারি কর্মকর্তা। তবে যারা অবসরপ্রাপ্ত তারা যেতে পারেন।’সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান এই বৈঠক সম্পর্কে বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীরা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে বৈঠকে যেতে পারবেন না। এটা শৃঙ্খলা পরিপন্থী। তবে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকলে যেতে পারেন।”এ ধরনের ঘটনায় মাইনর (সামান্য) শাস্তি হতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সরকার এদের বিরুদ্ধে কী ধরনের চার্জশিট দেয় তার ওপর। অর্থাৎ সরকারের ইচ্ছার ওপর। এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়, এসব ১৯৯৫-৯৬ সাল থেকেই কার্যত শুরু।’



মন্তব্য চালু নেই