খালেদার বিরুদ্ধে গ্যাটকো মামলাও চলবে

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা বাতিলে জারি করা রুল খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এই মামলায় খালেদাকে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণেরও নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ আদেশের ফলে খালেদার বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতে গ্যাটকো মামলা চলতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

বুধবার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি আবদুর রবের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল উপস্থিত ছিলেন।

গ্যাটকো মামলা গত ১৭ জুন শুনানি শেষে যেকোনো দিন রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ (সিএভি) করেন একই বেঞ্চ।

গত ২ আগস্ট এ বেঞ্চের কার্যতালিকায় রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়। গত ১৯ এপ্রিল থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার পক্ষে রুলের শুনানি ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল ও ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী। দুদকের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন মো. খুরশিদ আলম খান।

খালেদার আইনজীবীদের মতে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ বা দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ এ মামলায় নেই। শুধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কোনো দরপত্র অনুমোদনের জন্য প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কারণে তার বিরুদ্ধে এ মামলাটি চলতে পারে না।

তবে দুদকের আইনজীবীর মতে, এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের উপাদান রয়েছে। ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে অনুমোদনের কথা বলে পার পাওয়া যায় না।

গত ১৯ এপ্রিল গ্যাটকো, নাইকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার রুল শুনানি পেছাতে খালেদার চারটি সময়ের আবেদন খারিজ করে প্রথমে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার রুল শুনানি নেওয়া শুরু করেছিলেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ। পরে বিচারপতি জাফর আহমেদের পরিবর্তে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার রুল নিষ্পত্তি করতে বিচারপতি আবদুর রবকে এ বেঞ্চে দেওয়া হয়।

খালেদা জিয়াকে প্রধান আসামি করে দায়ের করা এ মামলা হাইকোর্টের আদেশে কয়েক বছর ধরে স্থগিত ছিল। এ মামলায় স্থায়ী জামিনে রয়েছেন খালেদা জিয়া।

ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে গ্লোবাল অ্যাগ্রো ট্রেড কোম্পানি লিমিটেডকে (গ্যাটকো) ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া ও তার ছোট ছেলে (প্রয়াত) আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে আসামি করে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুদকের উপপরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী। মামলায় গ্যাটকোকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকা ক্ষতির অভিযোগ করা হয়। ২০০৮ সালের ১৩ মে খালেদা জিয়া ও সাবেক ছয় মন্ত্রীসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয়। দুদক আইন ও জরুরি বিধিমালায় অন্তুর্ভুক্তির চ্যালেঞ্জ ও মামলা দায়ের এবং মামলা চালানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে আলাদা দুটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া। এসব আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট খালেদা ও কোকোর বিরুদ্ধে কার্যক্রম স্থগিত এবং রুল জারি করেন। পরে বেশ কয়েক দফায় মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ বাড়ান আদালত।

এদিকে গত ১৮ জুন নাইকো দুর্নীতি মামলার রুলের রায় দেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের বেঞ্চ। মামলাটি বাতিলে খালেদার রিট আবেদন ও এ সংক্রান্ত রুল খারিজ এবং বিচারিক কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে রায়ে বলা হয়, নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম চলবে বিচারিক আদালতে। রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর দুই মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণেরও নির্দেশ দেওয়া হয় খালেদাকে।



মন্তব্য চালু নেই