‘খালেদার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের দায়ে মামলা হয়নি’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের দায়ে মামলা করা হয়নি। এ মামলা করা হয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থ সংগ্রহ এবং সেই অর্থ অবৈধভাবে খরচ করার দায়ে।

বৃহস্পতিবার আদালতে এ কথা জানান মামলার বাদী দুদকের উপপরিচালক হারুন অর রশীদ। আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বাদীকে জেরা করার সময় তিনি এ কথা জানান।

সকাল সাড়ে ১০টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে বিচারক সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। প্রথমে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বাদী হারুন অর রশীদকে জেরা শুরু করেন। বিচারক জেরার পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেন। নিচে আওয়ার নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য বাদী ও আইনজীবীর জেরা হুবহু তুলে ধরা হলো।

আইনজীবী : ২০০১-২০০৬ সালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, এটি জবানবন্দিতে আপনি বলেছেন। আর এজাহারে উল্লেখ আছে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এজাহার এবং জবানবন্দিতে ঘটনার তারিখ আলাদা উল্লেখ আছে।

বাদী : ইহা সত্য নহে।

আইনজীবী : আপনি মামলা করেছেন কবে?

বাদী : ২০১১ সালের ৮ আগস্ট।

আইনজীবী : আপনি এই সরকারের আমলে মামলা করেছেন?

বাদী : হ্যাঁ, আমি এই সরকারের আমলে মামলাটি করেছি।

আইনজীবী : আপনি রাজনৈতিকভাবে হয়রানিমূলক মামলা করেছেন।

বাদী : ইহা সত্য নহে।

আইনজীবী : এই মামলা ছাড়া আপনি রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর নামে করা অন্য কোনো মামলা তদন্ত করেছেন?

বাদী : অনেক করেছি।

আইনজীবী : বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট মামলা তদন্ত করেছেন?

বাদী : না।

আইনজীবী : এই মামলার প্রধান আসামি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জানেন কি?

বাদী : না। আমার জানা নেই।

আইনজীবী : প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৫টির মতো মামলা করা হয়েছিল, জানেন?

বাদী : মামলা হয়েছিল, তা জানি। তবে কতটি, তা জানি না।

আইনজীবী : এর সবগুলো দুদক দ্বারা খালাস দেওয়া হয়েছে, তা জানেন?

বাদী : জানি না।

আইনজীবী : বেপজা-সংক্রান্ত ২ কোটি টাকা দুর্নীতির দায়ে মামলা করেছিল দুদক এবং সেই মামলায় চার্জশিটও দেওয়া হয়েছিল, জানেন?

বাদী : জানি না।

আইনজীবী : মেঘনা পাওয়ার প্ল্যান্ট-সংক্রান্ত ২ কোটির বেশি টাকার দুর্নীতির দায়ে আরেকটি মামলা করা হয়েছিল, জানেন?

বাদী : জানি না।

আইনজীবী : মিগ-২৯ বিমান ক্রয়সংক্রান্ত একটি দুর্নীতির মামলা হয়। এতে ৭ বিলিয়ন ডলার টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে খরচ হয়। আপনি কি জানেন?

বাদী : জানি না।

আইনজীবী : এই মামলাটিও দুদক বাতিল করেছে, জানেন?

বাদী : আমার জানা নেই।

আইনজীবী : শেখ হাসিনার নামে ফ্রিগেট ক্রয় দুর্নীতির একটি মামলা হয়, তা কি জানেন?

বাদী : জানি না।

আইনজীবী : এই মামলায় ৪.৪৭ বিলিয়ন টাকা অন্যায়ভাবে খরচ হয়েছে। তা জানেন?

বাদী : আমার জানা নেই।

আইনজীবী : ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনের রাস্তায় পিটিয়ে মানুষ মারার অপরাধে একটি হত্যা মামলা হয়েছিল। তা জানেন?

বাদী এর উত্তর না দিতেই বিচারক বলেন, এটি গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ, এটি দুর্নীতিসংক্রান্ত মামলা নয়। আপনি দুর্নীতিসংক্রান্ত যত মামলা আছে সেগুলো বলেন।

আইনজীবী : প্যারামাউন্ট-সংক্রান্ত ২০০৭ সালে দুদক একটি মামলা করেন। তা কি জানেন?

বাদী : আমার জানা নেই।

আইনজীবী : নাইকোকে ডিসকোয়ালিফাই করার পরেও গ্যাস ফিল্ড ইজারা দেওয়া হয়। দুদক এ রকম একটি মামলা করেছিল। এতে ১৩০ বিলিয়ন টাকা ক্ষতি হয়। তা জানেন?

বাদী : আমার জানা নেই।

আইনজীবী : দুদক এ রকম ১৫টি মামলা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করেছিল এবং তা বাতিল করেছে, জানেন?

বাদী : আমার জানা নেই।

আইনজীবী : দুদক মামলাগুলো ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে কিছু বাতিল ও কিছু প্রত্যাহার করে নিয়েছে, তা জানেন?

বাদী : এটাও আমার জানা নেই।

আইনজীবী : আপনি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নিবন্ধন জব্দ করেছেন।

বাদী : জব্দ করিনি, সংগ্রহ করেছি।

আইনজীবী : খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সরকারি টাকা আত্মসাৎ অথবা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, তা কি এফআইআরে উল্লেখ আছে?

বাদী : না। এখানে টাকা আত্মসাতের মামলা হয়নি। উনি প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে টাকা সংগ্রহ করেছেন এবং তা খরচ করেছেন।

আইনজীবী : অবৈধভাবে টাকা খরচ করেছেন, এমন কোনো অভিযোগ বা সাক্ষী আছে?

বাদী : দুদকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর মামলা করা হয়েছে। বাদীর নাম ও ঠিকানা গোপন রাখার আইন আছে।

আইনজীবী : কেউ দুদকে লিখিত অভিযোগ দেননি। যদি দিয়ে থাকেন, তবে তার নাম বলেন। ঠিকানা বলতে হবে না। তার কি সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন? ১৬৪ ধারায় কি তার বক্তব্য নেওয়া হয়েছে?

বাদী : ডা. ফারজানা আহমেদ নামে একজন অভিযোগ করেছেন। তার লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর দুদক মামলা করেছে।

আইনজীবী : ডা. ফারজানা আহমেদ নামে দুদকে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। এটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।

বাদী : ইহা সত্য নহে।

আইনজীবী : জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ট্রাস্ট। সে কারণে খালেদা তার দুই ছেলেকে ট্রাস্ট বোর্ডে নিয়েছেন। ট্রাস্ট করার উদ্দেশ্য হলো- জিয়ার স্মৃতিকে ধরে রাখা।

বাদী : ইহা সত্য নহে।

আইনজীবী : বাইরে থেকে অনুদান আনা যাবে না, নেওয়া যাবে না- এরকম কিছু নিষেধ আছে?

বাদী : নেওয়ার বিধান আছে। কিন্তু টাকার লিমিট ও নিয়মকানুন আছে। ওনাদের পরিবারের বাইরে কেউ ট্রাস্টি হতে পারবেন না। তবে বাইরের লোক সদস্য হতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে।

আইনজীবী : চ্যারিটেবল ট্রাস্টে বাইরের লোকজন টাকা দিয়েই সদস্য হয়েছেন।

বাদী : বাইরের লোক টাকা দিয়ে সদস্য হয়েছেন, এমন কোনো প্রমাণ পাইনি। যাদের কথা বলা হয়েছে, তারা অস্বীকার করেছেন।

আইনজীবী : ইউনিক গ্রুপের পরিচালক নুর আলী ও প্রাইম ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী প্রকাশ্যে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঘুষ হিসেবে টাকা দিয়েছি। এরপর আবার তারাই মামলা তুলে নিয়েছে। ক্ষমতা থাকলে এ রকম করাই যায়।

বাদী : এ ব্যাপারে আমার জানা নেই।

এ অবস্থায় বেলা ১২টা বেজে যায়। হঠাৎ করে খন্দকার মাহবুব হোসেন অসুস্থ বোধ করায় আদালত মুলতবির আবেদন জানানো হয়। জবাবে আদালত প্রথমে ৩০ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। কিন্তু ওই দিন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মামলার শুনানির দিন থাকায় ৩ আগস্ট শুনানির দিন ধার্য করেন।



মন্তব্য চালু নেই