খালেদার বাড়তি নিরাপত্তা চেয়ে সরকারকে চিঠি

দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বর্তমান পুলিশি নিরাপত্তাকে ‘অপর্যাপ্ত’ উল্লেখ করে বাড়তি নিরাপত্তা চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছে দলটি।

গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারি রেস্টুরেন্ট ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার পটভূমিতে বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা জোরদারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

গত ১২ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এ চিঠি দেয়া হয়েছে বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব আব্দুস সাত্তার নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেছেন, গুলশান ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার পর সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে বিএনপি উদ্বিগ্ন। বিএনপি মনে করে, খালেদা জিয়ার বর্তমানে যে পুলিশি নিরাপত্তা আছে, তা যথেষ্ট নয়, অপর্যাপ্ত। এ জন্য তার বাড়তি নিরাপত্তা চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর আবেদন জানানো হয়েছে।

আব্দুস সাত্তার জানান, চিঠিতে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় বর্তমানে যা আছে এর চেয়ে তার বাসভবনে অতিরিক্ত ১ প্লাটুন পুলিশ এবং বাসভবনের বাইরে গেলে অতিরিক্ত ৬ পুলিশ কনস্টেবল এবং ২ গানম্যান চাওয়া হয়েছে।

খালেদা জিয়ার এ একান্ত সচিব আরও জানান, বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবনে পুলিশের এক এএসআইয়ের নেতৃত্বে ৪ কনস্টেবল এবং বাসভবনের বাইরে গেলে চলাচলের জন্য পুলিশের এক এএসআই, এক নায়েক, পাঁচ কনস্টেবল, দুই পোশাকধারী ড্রাইভার ও দুই গানম্যান (সিএসএফ’র সঙ্গে) নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন।

স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার ও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে এ চিঠির অনুলিপি দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস এবং তার উপদেষ্টা পুলিশের সাবেক প্রধান (আইজিপি) এম এ কাইয়ুম এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানান।

প্রসঙ্গত, গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পরপরই ওই এলাকার বাসিন্দা খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা জোরদার করতে বিএনপির পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাতে সাড়া দেয়নি সরকার, বাড়ানো হয়নি বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা। পুলিশি যে নিরাপত্তা ছিল, সেটিই বহাল রয়েছে। সেজন্য খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা জোরদার করতে এবার সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিল বিএনপি।

বর্তমানে খালেদা জিয়ার বাসভবন ও তার চলাচলের সময় পুলিশি নিরাপত্তা রয়েছে। এর বাইরে বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তায় তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী ‘‘চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)’ কাজ করে থাকে। এই টিমে স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) দুইজন সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) রয়েছেন।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। ওই নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠন করে। অন্যদিকে, এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা) সংসদের প্রধান বিরোধী দল হয়। আর দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হন, যদিও দলটি সরকারেও রয়েছে।

রওশন এরশাদ বিরোধী দলীয় নেতা হওয়ায় খালেদা জিয়ার বিরোধী দলীয় নেতার নিরাপত্তা প্রটোকলও প্রত্যাহার হয়ে যায়।

খালেদা জিয়া তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে তিনি সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা, সাবেক রাষ্ট্রপতির স্ত্রী। এ ছাড়া তিনি দেশের একজন ভিভিআইপি, পাশাপাশি বিএনপিরও প্রধান। এসব বিবেচনায় বিএনপির আবেদনের প্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার চলাচলের সময়ে পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে সরকার।

বর্তমানে তার নিরাপত্তায় একজন এএসআইয়ের নেতৃত্বে ৯ সদস্যবিশিষ্ট (দুই পোশাকধারী ড্রাইভারসহ) পুলিশের একটি প্যাট্রোল টিম নিয়োজিত রয়েছে। এ ছাড়া সিএসএফ’র সঙ্গে দুই জন গানম্যান (এসআই) খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন।

গত বছরের এপ্রিলে সর্বশেষ খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবন ফিরোজার সামনে থেকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তবে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে তা পুনর্বহাল করা হয়। একজন এএসআইয়ের নেতৃত্বে পুলিশের চারজন সদস্য বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসার নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে বলে জানা যায়।

এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী ‘সিএসএফ’’ এর টিমে তার নিরাপত্তায় এসবি’র দুইজন এসআই নিয়োজিত রয়েছেন। সেনাবাহিনীর একজন সাবেক কর্মকর্তার নেতৃত্বে সিএসএফ টিমে ৩৫ জনের মতো সদস্য রয়েছে। জানা যায়, ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে ২০০৭ সালে গ্রেপ্তার হয়ে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে কারামুক্ত হওয়ার পর খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় পর্যায়ক্রমে সিএসএফ গঠন করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ১ জুলাই রাতে ঢাকার কূটনীতিকপাড়া গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলায় দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ২০ জন মানুষ নিহত হয়।



মন্তব্য চালু নেই