খালেদার প্রচারণা বন্ধে ইসির ‘ব্যবস্থা’

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া রাস্তা বন্ধ ও যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে নির্বাচনী প্রচারণা চালালে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে শুক্রবার এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিয়ে কমিশন সচিবালয়কে জানাতে বলা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন থেকে শুক্রবার রাতে উত্তর–দক্ষিণ রিটার্নিং অফিসার বরাবর এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠির অনুলিপি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি), মহাপুলিশ পরির্দশক (আইজিপি) ও নির্বাচনে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিতে করেছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গাড়িবহর নিয়ে দলের সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নিয়োজিত থাকায় জন-চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। পাশাপাশি তার গাড়িবহরকে লক্ষ্য করে কিছু ব্যক্তি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। এ বিষয়ে ১৮ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গণমাধ্যমে যে সব সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে তা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এটা সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালা-২০১০ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

চিঠিতে আচরণবিধির ৬ ধারার প্রচারণা সংক্রান্ত বাধা-নিষেধ, সভা-সমিতি-অনুষ্ঠানে বিধি-নিষেধ, মিছিল বা শোডাউনে বাধা-নিষেধ, উস্কানিমূলক বক্তব্য ও অনভিপ্রেত গোলযোগ সৃষ্টির বাধা-নিষেধ উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া এ সব কাজ বিধিমালা পরিপন্থী এবং বিধি ৯ মোতাবেক তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

আচরণবিধিগুলো বেগম খালেদা জিয়ার নজরে এনে এ কাজ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিতে রিটার্নিং অফিসারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ মোতাবেক জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিয়ে কমিশন সচিবালয়কে অবহিত করতেও বলা হয়েছে চিঠিতে।

আচরণবিধির ৯ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে কোনো ব্যক্তি বিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, সর্বোচ্চ ৬ মাসের দণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

এ বিষয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কেউ যেন রাস্তা বন্ধ করে প্রচারণা চলাতে না পারেন সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে দুই সিটির রিটার্নিং অফিসার, ডিএমপি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশনা পাঠানো হচ্ছে।’ এ দিন রাতেই নির্দেশনা পাঠানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ইসি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার নির্বাচনী আচরণবিধি পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দেয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত সহস্র নাগরিক কমিটি। ওই অভিযোগের পর ইসি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি আমলে নেয়।

তবে ইসি বলছে, সহস্র নাগরিক কমিটির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আগে থেকেই এর প্রক্রিয়া চলছিল।

ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রচারণা চালানোয় বাধা নেই। তবে তিনি যে বিপুল সংখ্যক গাড়িবহর নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন এতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।’

তিনি বলেন, ‘বিধি লঙ্ঘন করে প্রচারাণা চালালে সে যে-ই হোক না কেনো আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

সহস্র নাগরিক কমিটির অভিযোগের ভিত্তিতে ইসি নির্দেশানা দিচ্ছে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, তাদের অভিযোগের আগেই বিষয়টি ইসির নজরে এসেছে। তবে তারাও একই অভিযোগ করেছেন।’

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দীন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সংগঠনের একটি প্রতিনিধি দল এ অভিযোগপত্র জমা দেয়।

সাক্ষাৎ শেষে সহস্র নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘আমরা সিইসির কাছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্বাচনী আচরণবিধি পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

নির্বাচনী আচরণ বিধিতে বলা হয়েছে, নির্বাচনের উদ্দেশ্যে পথসভা ও ঘরোয়া সভা ব্যতীত কোনো জনসভা বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। জনগণের চলাচল বিঘ্ন হতে পারে এ রূপ সড়কে প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে কোনো ব্যক্তি পথসভা করতে পারবেন না বা তদুদ্দেশ্যে কোনো মঞ্চ তৈরি করতে পারবেন না।



মন্তব্য চালু নেই