খালেদার কার্যালয়ের বিরুদ্ধে এবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

কূটনীতিক পাড়া থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয় সরিয়ে নিতে বেশ কয়েকদিন ধরে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে অনেক সংগঠন। এমনকি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এর থেকে আরো একধাপ এগিয়ে গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। খালেদার কার্যালয় সরাতে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়েছে।

আগামী ২৪ জানুয়ারি বিকেল ৩টার মধ্যে গুলশান এলাকা থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয় সরিয়ে দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ এমপি এ দাবি জানিয়ে  বলেন, ‘সরকার এ সময়ের মধ্যে কার্যালয় সরানোর ব্যবস্থা না করলে স্কুলের পক্ষ থেকে কর্মসূচি দেয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘এ বিষয় নিয়ে আইনগত পদক্ষেপ নিলে দীর্ঘ সূত্রিতায় পড়তে হবে। তাই সরকারকে ডিপ্লোম্যাটিক জোন থেকে সকল প্রকার রাজনৈতিক কার্যালয় সরাতে হবে। তা না হলে স্কুল, শিক্ষক, অভিভাবক, ঢাকা-১৭ আসনের জনগণের পক্ষ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।’

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কে যে বাড়িটি ঘিরে পুলিশ বেষ্টনী ছিল তার জন্য গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় আর গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ একই সড়কে। চলতি মাসের ১৭ তারিখ ওই সড়ক থেকে পুলিশী ব্যারিকেড তুলে নেয়া হয়। ব্যারিকেড থাকাকালীন এক দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির সামনে গিয়ে সেখানকার দারোয়ান আব্দুস সামাদের সঙ্গে কথা হয়।

তিনি বলেন, ‘বেশিার ভাগ বাচ্চারা ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে থাকে। এ জন্য স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক কম।’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সীমানার ফটক পার হয়ে ভেতরে যেতেই দেখা গেলো কয়েকজন অভিভাবক চেয়ারে বসে আছেন। তাদের মধ্যে একজন রুখসানা বেগম। তিনি মহাখালীতে থাকেন। তার সন্তান রোহিতুল ইসলাম এ স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে।

তিনি  বলেন, ‘অবরোধের কারণে মহাখালী থোকে বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে আসতে অনেক সমস্যা হয়। সব সময় একটা আতঙ্ক ও ভয় কাজ করে। কখন যে কি হয়ে যায়।’

পাশে বসা আরেক শিক্ষার্থীর মা। তিনি বাড্ডাতে থাকেন জানিয়ে বলেন, ‘স্কুলে আসার পথে অনেক চেকপোস্ট। তাই বাচ্চা ভয়ে স্কুলে আসতে চায় না।’

নতুন বাজার এলাকা থেকে তার বাচ্চাকে নিয়ে আসেন বেগম তাসলিম। তিনি বলেন, ‘স্কুলে প্রবেশ পথে পুলিশ যেভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, এরকম পরিস্থিতির কারণে আমার সন্তান স্কুলে আসতে চায় না।’

প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলী আশরাফ  বলেন, ‘এই এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার কারণে শিক্ষা কার্যক্রমে তার প্রভাব পড়ছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য দুইবার বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়নি। কিন্তু এবার আমাদেরকে দুইবার বিজ্ঞাপন দিতে হয়েছে। অনেক অভিভাবক আছেন যারা পুলিশের সামনে আসতেই চায় না। ৬ জানুয়ারি এই প্রতিষ্ঠানে কেবলমাত্র প্রিন্সিপাল হওয়ায় আমাকেই প্রবেশ করতে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীতো দূরের কথা অন্য কোনো শিক্ষককেও প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘১৫ জানুয়ারি থেকে মোটামুটি ক্লাশ শুরু হয়েছে তবে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি খুবই কম। বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের মোনাজাতের দিন আমরা স্কুল বন্ধ রাখি না, তারপরও ওইদিন শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসেনি। অবরোধের কারণে সারা শহরে মূলত একই অবস্থা। তবে ভয়াবহ অবস্থা এখানে। পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে কিছুটা শিথিল করেছি। সন্তানদেরকে স্কুলে নিয়ে আসার জন্য তাদের অভিভাবককে ফোন দেয়ার জন্য ক্লাশ টিচারদেরকে নির্দেশ দিয়েছি। ব্যক্তিগত মোবাইল থেকে অভিভাবকদের ফোন করা হচ্ছে। কারণ ক্লাশ বন্ধ থাকলে আমরা পিছিয়ে যাবো।’



মন্তব্য চালু নেই