খাবারের কারণে শিশুর অ্যালার্জি হলে করণীয়

শিশুরা এমনিতে একটু বেশি স্পর্শকাতর। শুষ্ক এ আবহাওয়াতে বাতাসে ধুলাবালির ওড়াউড়ি বেশি থাকে। তাই সমস্যায় পড়ছে তারাও। শুধু ধুলা নয় বিভিন্ন খাবার থেকেও শিশুদের অ্যালার্জি হতে পারে। সব শিশুরই যে অ্যালার্জি হয় তা নয়, আবার আক্রান্তদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন শিশুর ভিন্ন ভিন্ন খাবারে অ্যালার্জি হতে পারে। একটু সচেতন হলে সহজে অ্যালার্জি প্রতিরোধ করা যায়।

অ্যালার্জি কী

প্রতিটি মানুষের শরীরের সহ্যক্ষমতা আলাদা। কোনো খাবার হয়তো কেউ সহজে হজম করতে পারে। কারো আবার একই খাবার গ্রহণের পর পরই শুরু হয় চুলকানি। শ্বাস গ্রহণ, স্পর্শ, ইনজেকশন বা খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে কোনো বস্তু শরীরে ঢুকে অতিরিক্ত স্পর্শকাতরতা ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করলে তাকে অ্যালার্জি বলে।

অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া

অ্যালার্জির কারণে শিশুদের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শরীরে চুলকানি, লাল চাক হয়ে ওঠা, চোখ চুলকানো ও লাল হওয়া, নাক দিয়ে পানি পড়া, কাশি, হাঁচি, শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, নাক বন্ধ থাকা, নাক দিয়ে পানি পড়া, চুলকানি ইত্যাদি। তবে সব সময় শুধু খাবার খেলেই অ্যালার্জি হবে তা নয়, সেদ্ধ খাবারের ঘ্রাণ নিলেও অ্যালার্জি হতে পারে। সেদ্ধ খাবার থেকে বায়ুবাহিত কিছু প্রোটিন শ্বাসনালিতে ঢুঁকে এমন প্রতিক্রিয়া ঘটায়।

অ্যালার্জির জন্য দায়ী খাবার

শিশুদের সবচেয়ে বেশি অ্যালার্জি হয় গরুর দুধ, ডিমের সাদা অংশ ও বাদামে। বাদামে প্রতি ২০০ জনে একজন শিশুর অ্যালার্জি হতে পারে। তাই বাদামযুক্ত কেক, পেস্ট্রি, বিস্কুট শিশুর জন্য নিরাপদ নয়। কাঠবাদাম, কাজুবাদাম ও পেস্তাবাদাম থেকেও অ্যালার্জি হতে পারে।

তবে একই প্রজাতির অন্যান্য শস্য, যেমন-ডাল, সয়া ও মটরশুঁটি খেলে অ্যালার্জি হয় না। চিংড়ি, ইলিশ মাছ, বেগুন, গরুর মাংস, হাঁসের মাংস ও ডিম এবং খাসির মাংস খেলে শিশুদের অ্যালার্জি হতে পারে। খুব অল্পসংখ্যক শিশুর ক্ষেত্রে পুঁটি, বোয়াল ও শোল মাছ এবং কুমড়ায় অ্যালার্জি হতে পারে। ফাস্টফুডও অ্যালার্জির জন্য বেশ দায়ী। ময়দাজাত এসব খাবারে গ্লুটিন নামের এক ধরনের প্রোটিন থাকে, যা অ্যালার্জির কারণ। হোটেলে খাবারকে মুখরোচক করার জন্য যে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট মেশানো হয়, তাতে শিশুদের অ্যালার্জি হতে পারে। বিভিন্ন কৃত্রিম রঙ ও মসলা থেকেও অ্যালার্জির সৃষ্টি হয়।

শিশুদের প্রিয় খাবার চিপস। চিপসের মচমচে ভাব বজায় রাখার জন্য সালফাইড মেশানো হয়। চিজ, কেক ও পেস্ট্রিতে মেশানো হয় টাইরামিন। এই সালফাইড ও টাইরামিন অ্যালার্জির জন্য দায়ী। শিশুরা কোমল পানীয় ও ফলের রস খেতেও ভালোবাসে। এসব পানীয়তে থাকে সাইট্রিক এসিড, ফসফরিক এসিড, হাইড্রোক্লোরিক এসিড, সোডিয়াম, পটাশিয়াম ফ্লোরাইড প্রভৃতি। উল্লিখিত উপাদানগুলো শিশুদের অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে।

করণীয়

অনেকে মনে করতে পারেন, অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী খাবারগুলো বর্জন করলেই হয়তো অ্যালার্জি থেকে মুক্ত থাকা যায়। কিন্তু এসব খাবারের অনেকগুলোই পুষ্টিগুণসম্পন্ন। আসলে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী সব খাবারে সব শিশুরই যে অ্যালার্জি হবে তা নয়, একেক শিশুর একেক খাবারে অ্যালার্জি হতে পারে। তাই ঢালাওভাবে সব খাবার বর্জন না করে একটি একটি করে এসব খাবার শিশুদের দেওয়া উচিৎ। কোনো খাবার দেয়ার পর প্রতিক্রিয়া দেখা গেলে ওই খাবার পরিত্যাগ করতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুদের অ্যালার্জি দুই বছর বয়সের পর কম থাকে। তাই এ সময় অ্যালার্জিযুক্ত খাবার বর্জন করলে পরবর্তী সময়ে সুফল পাওয়া যায়। মায়েদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার শেষের তিন মাসে অ্যালার্জিযুক্ত খাবার না খাওয়া ভালো। সব সময় মনে রাখতে হবে, বুকের দুধের পরিবর্তে কৃত্রিম দুধ বা কৌটার দুধ দিলে শিশুর অ্যালার্জির আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। তাই শিশুদের অবশ্যই পর্যাপ্ত বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। শিশুদের অ্যালার্জি হলে সাধারণত অ্যান্টিহিস্টামিন সিরাপ খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়। আজকাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে শিশুর কী কী খাদ্যে অ্যালার্জি হতে পারে তা নির্ণয় করা যায়। সে অনুযায়ী টিকা গ্রহণ করলে অ্যালার্জি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।



মন্তব্য চালু নেই