‘খাওনের কথা কইলেই মারতো’

‘খাওনের কথা কইলেই মারতো, দিনে এক মগ পানি আর দুই মুঠ ভাত দিত খাইতে। একটু ভালকইরে চলার জন্যে, পেটের দায়ে মালশিয়া যাইতে চাইছিলাম কিন্তু ওরা আমার পেটেই লাথি মারলো’।

কান্নাজরিত কণ্ঠে ঠিক এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন, মালয়েশিয়া ফেরত বাংলাদেশী, রাজবাড়ীর দিরাজ কুমার বিশ্বাস।

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর রিপোর্টার্স ইউনিটিতে দৈনিক ভোরের কাগজ ও ডিবেট ফর ডেমক্রেসি আয়োজিত ” মানবপাচার রোধে করণীয়” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথাগুলো বলেন।

দালালের খপ্পরে পরে ১ লাখ ৭০হাজার টাকা মুক্তিপন দিয়েও রেহাই পায়নি কুমার বিশ্বাস। সাড়ে ৭ মাস জেল খেটে অবশেষে শূন্যহাতে বাড়ী ফিরেন রংপুরের এই কাঠমিস্ত্রী।

তিনি জানান, ৮/৯ টি নৌকার মিশনে ৪ টি ধাপে বিক্রি করে পাচার করা হয় অবৈধপথে বিদেশগামী এসব যাত্রীদের। মালশিয়া পৌঁছানোর পর মুক্তিপণ আদায় করা হয় ভোক্তভোগী বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গাদের থেকে। টাকা দিতে না পারলে অনেককেই মেরে মাটি চাপা দেওয়া হয় জঙ্গলে অথবা ভাসিয়ে দেওয়া হয় সাগরে।

এ সময় দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুনু, সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেনসহ মানবধিকার বিষয়ক নেতৃবৃন্দ।

এ সময় বক্তারা বলেন, পাচারকারী রাঘববোয়ালদের ধরতে হবে এবং এই পাচার চক্রকে দ্রুতই নষ্ট করতে হবে। একই সাথে দোষীদের আইন ও বিচারের আওতায় আনতে হবে। এর জন্য সরকারকেই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, বিশ্ব মানবতাকে ধর্মীয় ও গোষ্ঠীগত দিক বাদ দিয়ে মানবিক দিকটি মূল্যায়ন করতে হবে। বর্তমানে যেটি চলছে এটি অতীতের দাস প্রথা থেকেও খারাপ।

সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ভারত সরকার গরু পাচার রোধে যতটা সিরিয়াস। এদেশে মানব পাচার রোধে সরকার ততটাও সিরিয়াস না’।

অধ্যাপক দেলোয়ার বলেন, কালো টাকার রশদের একটি বড় উদাহরণ হলো মানব পাচার। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত নির্লিপ্ততা ও বিবৃতি বাদ দিয়ে সমস্যাটি মূল্যায়ন করা। কেননা এতে তাদেরও দায় রয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ইতোমধ্যে পাচার বন্ধে সরকার বিভিন্ন বাহীনি দিয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে। এটি স্থায়ী ভাবে সমাধাণ করতে একটু সময় লাগবে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এবং স্থায়ী সমাধাণে সরকার কূটনৈতিক ভাবে তৎপর রয়েছে বলেও জানান তিনি।



মন্তব্য চালু নেই