ক্ষুধার্ত শিশুর মুখ চেয়ে মা যাচ্ছেন দেহ বেচতে!

অভাব অনেক সময়ে সামাজিক অবক্ষয় ডেকে আনে। বইয়ে পড়া এই নীতিবাক্যের বাস্তব রূপ দেখা যাচ্ছে ভারতের খরাপ্রবণ এলাকাগুলোতে। সম্প্রতি দেশটির সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের অনন্তপুর জেলার একটি করুণ ছবি জনসম্মুখে নিয়ে এসেছে। সেখানে দেখা গেছে ক্ষুধার্ত শিশুর মুখ চেয়ে মা যাচ্ছেন দেহ বেচতে!

একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের যৌথ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অনন্তপুর জেলায় অন্তত ৪৪০ জন নারী কেবল শিশুর খাবার জোগাতে যৌনব্যবসার পঙ্কিল পথে নেমেছেন। খরার কারণে অন্ধ্র্রপ্রদেশে গত দুই বছর ধরে চাষবাস কার্যত বন্ধ।

গ্রামের অনেক বাড়িতেই পরিবার ফেলে শহরে চলে গেছেন হতাশ কৃষকরা| দিনমজুরের কাজ করে নিজেরা হয়তো বেঁচে থাকতে পারছেন কিন্তু পরিবারের মুখে অন্ন জোগানোর সক্ষমতা তাঁদের নেই। ফলে ক্ষুধার্ত শিশুদের কান্না বন্ধ করতে মা বিক্রি করছেন নিজের শরীর|

একটা সামগ্রিক হিসেব অনুযায়ী, যৌন ব্যবসায় মাস শেষে হাতে আসে হাজার তিনেক রুপি। এ অর্থে মোটামুটি চলে যায় সংসার। তবে হ্যাপাও কম নয়। এর পরিবর্তে সহ্য করতে হচ্ছে শারীরিক নির্যাতন| সাধারণ গ্রাম্য নারীদের জোর করে মদ খাইয়ে বিকৃত যৌনাচারের মতো ঘটনাও ঘটছে। কখনো ঘরের বাইরে বের না হওয়া নারীদের এমনকি ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে দেশের নানা শহর|

সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, মূলত অন্ধ্রপ্রদেশের ওপর দিয়ে চলে যাওয়া মহাসড়কের যানবাহন ব্যবসায়ী এবং ট্রাকের ড্রাইভাররাই এই ব্যবসার ক্রেতা। এ ছাড়া স্থানীয় হোটেল এবং রাস্তার পাশের রেস্তোরাঁগুলোতেও (ধাবা) এই ব্যবসা রমরমা।

অন্ধ্রপ্রদেশের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার একজন কর্মী জানান, দুই বছর ধরে চলা খরায় খাদ্যাভাবের কারণে হাজার বছর ধরে চলে আসা পারিবারিক কাঠামোর স্থায়ী ক্ষতি হচ্ছে। পাচার হয়ে গেছে অন্তত ৮৪৮ কিশোরী| অসহায় হয়ে কখনো জেনেশুনে তারা পা রাখছেন দেহ বিক্রির পথে| কখনো পা দিতে হচ্ছে এজেন্টদের ফাঁদে পড়ে। আর এ সবই তাঁরা করছেন সংসারের মুখ চেয়ে। কেবল দুটো খাবারের জন্য!

ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার বা কেন্দ্রীয় সরকারেরও কোনো সঠিক পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ করেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ওই কর্মী। তিনি বলেন, ‘পুলিশ মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে নীরিহ নারীদের আটক করে নিয়ে যায়। পরে আবার টাকার বিনিময়ে তাঁদের ছেড়েও দেয়। আর মূল সমস্যাটির কথা কেউ ভাবছে না।’



মন্তব্য চালু নেই