ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সংলাপ চায় না সরকার

অবৈধভাবে দখল করা ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসতে চায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।

বুধবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ দাবি করেন তিনি।

রিজভী আহমেদ বলেন, ‘সরকার তার অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে গুম-খুন ও গুপ্তহত্যার পথকে একমাত্র অবলম্বন হিসেবে বেছে নিয়েছে। এজন্য দেশবাসীসহ সুশীল সমাজের আহ্বান সত্ত্বেও তারা গণতন্ত্রের পথ মসৃণ করছে না।’

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নয়াপল্টনে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবসের সমাবেশ থেকে রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে সব দলের সঙ্গে অবিলম্বে সংলাপে বসে জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

এর একদিন পর বুধবার দুপুরে বেগম খালেদা জিয়ার ‘সংলাপে সঙ্কট নিরসনের’ প্রস্তাব নাকচ করে দেয় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সঙ্গে যৌথসভা শেষে যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘দেশে কোনো সঙ্কট নেই। দেশ প্রত্যাশার চেয়ে বেশি এগিয়ে যাচ্ছে। যা সঙ্কট আছে তা কেবল পাকিস্তানি বেগম জিয়ার মনে। যদি ব্যক্তিগতভাবে কারও সমস্যা থাকে তা নিরসনের দায়িত্ব আওয়ামী লীগের নয়।’

বিএনপির সংলাপের প্রস্তাব আওয়ামী লীগের প্রত্যাখ্যান করা প্রসঙ্গে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। তাদের একমাত্র ইচ্ছা, জোর করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা। সেজন্য তারা বিরোধী দলকে কোনো ধরনের গণতান্ত্রিক স্পেস দিতে চায় না। তাদের ভয়, গণতান্ত্রিক স্পেস প্রসারিত হলে অবৈধ ক্ষমতা টলমল করে পড়ে যাবে। এজন্য তারা বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসতে চায় না।’

রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকার বিরোধী দলের টুটি চেপে ধরে দেশকে উপসংহারহীন অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। শান্তির বাণী তাদের কাছে ব্যর্থ পরিহাস মাত্র। তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তাতে বিশ্বাস করে না। এজন্য তারা বিরোধী দলকে কোনা গণতান্ত্রিক স্পেস দিতে চায় না।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবসের কর্মসূচিকে ঘিরে সরকার সারা দেশে তাণ্ডব চালিয়েছে। বিএনপি যাতে ঠিকমতো প্রস্তুতি নিতে না পারে সেজন্য আমাদের শেষ মুহূর্তে নয়াপল্টনের সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়। এরপরও সমাবেশে আসার পথে অনেক জায়গায় নেতা-কর্মীদের বাধা দেয়া হয়েছে। অথচ, সমাবেশ মানে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যুবশক্তিকে দমন করতে ক্রসফায়ার দিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করতে চায়। এরই অংশ হিসেবে আজ গাজীপুর সদর থানা যুবদলের সদস্য মনির হোসেনকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে।’

মির্জা আব্বাসের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো প্রসঙ্গে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘদিন পর আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়। আমরা অবিলম্বে তার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।’

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর পল্টন ও মতিঝিল থানার নাশকতার দুই মামলায় বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস। এরপর জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে পাঠান আদালত।

নয়া পল্টনের সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনির হোসেন, ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই