ক্রেতাদের পদচারণায় জমে উঠতে শুরু করেছে ভোলা ঈদ বাজার

মোঃ ফজলে আলম, ভোলা : রোজার প্রথম থেকে ভ্যাপসা গরমে জনজীবন যখন অস্বস্তিতে, তখন দিনের প্রথম প্রহরের বৃষ্টি ভোলাবাসীকে অনেকটাই শান্ত ও শীতল করে তুলেছিল। কিন্তু ঈদ মার্কেটে সে শীতলতা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। বাইরের শীতলতার চেয়ে ভেতরের উষ্ণতা ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ভিড়, চড়া, দাম এড়াতে মধ্যবিত্তরা আগেভাগেই সেরে ফেলতে চাইছেন কেনাকাটা। কিন্তু শুরুতেই ঈদের বাজার অনেকটা চড়া। তবে শত অভিযোগের পাশ কাটিয়ে বিপণিবিতানগুলোতে ক্রেতাদের সরব উপস্থিতি জানান দিচ্ছে ঈদ কেনাকাটার।
ভোলা বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, আকর্ষণীয় পোশাকের সংগ্রহ রয়েছে প্রতিটি দোকানেই। বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে সব কটি মার্কেট ও বিপণি কেন্দ্র গুলো। এখনো পুরোদমে কেনাকাটা শুরু না হলেও ক্রেতারা মার্কেট ঘুরে ঘুরে দেখছেন, দাম সম্পর্কে ধারণা নিচ্ছেন। পছন্দমাফিক পোশাক পেয়ে গেলে কিনেও ফেলছেন। দেশের বাইরে যারা উপহার পাঠাচ্ছেন মার্কেটে তাদের আনাগোনাই বেশি। দোকানিরা জানালেন, ঈদবাজার এরই মধ্যে জমজমাট হয়ে উঠেছে।
ভোলা সদর রোডস্থ চৌধুরী প্লাজা মার্কেটে তরুণ ব্যবসায়ী ও বিয়ে বাজারের কর্নধার মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, প্রতিবছরই এক শ্রেণির ক্রেতা রোজার আগে বা শুরুর দিকে কেনাকাটা করে ফেলেন। তাদের কথা মাথায় রেখেই ইতোমধ্যে ঈদ পণ্যগুলো দোকানে তুলেছেন । সব শ্রেণির ক্রেতাদের জন্যই ঈদ পোশাক নিয়ে এসেছেন। যদিও আরো কয়েক ধাপে আসবে নতুন পোশাক। তবে শুরুতেই ক্রেতাদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি আশান্বিত করছেন । তবে ক্রেতাদের অভিযোগ- নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মতোই সব ধরনের কাপড়ের দাম গত বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি হাঁকা হচ্ছে। ভোলার বিভিন্ন শপিংমল, সুপার মার্কেট ও বিপণিবিতান ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া গেল। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই রোজার ঈদকে কেন্দ্র করে তাদের ডিসপ্লে উইন্ডোতে তুলেছে নিত্যনতুন ডিজাইনের পোশাক, জুতাসহ অন্যান্য সামগ্রী। দোকানগুলোতে বিক্রয়কর্মীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। জাহাঙ্গীর প্লাজা মার্কেটে মাহি স্মাট চয়েজের মালিক মামুন, এম প্লাস এর মালিক মিজান,জি স্টার প্লাস এর মালিক মিজানুর রহমান ও স্টাইল কর্নার এর মালিক বাঁধন বলেন, ঈদের বিক্রি শুরু হয়েছে। ক্রেতাদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছি। সব ধরনের পোশাকে এসেছে নতুনত্ব। কাপড়ের প্যাটার্নে এসেছে পরিবর্তন। ঈদের এক্সক্লুসিভ পোশাকগুলো বিক্রি হচ্ছে ৭০০০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় আর এর চেয়ে দামী পোশাকের অর্ডার পেলে এনে দেয়া হয়।।
এছাড়া মার্কেট ও শো-রুমগুলোতে শাড়ি, থ্রি-পিস, শার্ট, পাঞ্জাবি, জুতা, স্যান্ডেলসহ ঈদকেন্দ্রিক প্রায় সব পণ্যই পাওয়া যাচ্ছে ভারতীয়। ঈদে চমক সৃষ্টির জন্য জনপ্রিয় হিন্দি ছবি বাজিরাও মাস্তানি নামের পোশাক নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। মিডিয়াম সাইজের বাজিরাও মাস্তানি থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকার মধ্যে। ভারতীয় ফ্লোর টার্চ লং গাউন বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার টাকার মধ্যে। ভারতীয় লেহেঙ্গা ৩ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে। ইন্ডিয়ান পার্টি ড্রেস এবং মতিজ থ্রি-পিস। এগুলো বিক্রি হচ্ছে ১২৫০ টাকা থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে। ইন্ডিয়ান পাঞ্জাবি ১৭৮০ থেকে ৪ হাজার টাকা মধ্যে। শিশুদের ইন্ডিয়ান পার্টি ড্রেস বিক্রি হচ্ছে ১২৫০ কে ৮ হাজার টাকার মধ্যে। ইন্ডিয়ান জর্জেট, গাউন এবং আনস্টিচ থ্রি-পিস ৫ হাজার ৭০০ েেথকে ২২ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। মার্কেটগুলোতে রয়েছে ভারতীয় শাড়ির বিপুল কালেকশন। শাড়িগুলোর রয়েছে বাহারি নামও। ভারতীয় কাঞ্জিবরন কাতান, ফ্রেঞ্জ শিপন, সিল্ক কোটা, জর্জেট, সামুজ শার্টেন সিল্ক, পিওর সিল্ক, খাড্ডি কাতান, গাদোয়াল কাতান এবং ভলিয়ম কাতান। এগুলো পাওয়া যাচ্ছে ২ থেকে ৪১ হাজার টাকার মধ্যে। চেন্নাই কাতান, দুলহান সিল্ক, রাজগুরু সিল্ক, অপেরা কাতান, কেপফ্রি কাতান, নাইসোর সিল্ক, পাট্টিপাল্লি কাতান, গঙ্গা-যমুনা কাতান শাড়ি। এগুলো বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।এ প্রসঙ্গে নাম ও দোকানের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কাপড় ব্যবসায়ী জানান, ভারতীয় পোশাক আধুনিক, চকমকে, কালারফুল এবং দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় েেক্রতাদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই আমরা ভারতীয় পোশাক কালেকশন করি। ভারতীয় পোশাক ও শাড়ির বিপরীতে মার্কেটগুলোতে রয়েছে দেশীয় কালেকশনও। তবে সেগুলোর বিক্রি আশানুরূপ হচ্ছে না বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। দেশী শাড়ির মধ্যে রয়েছে জয়পুরী সিল্ক, অপেরা কাতান, মিরপুরের বেনারসি, ঢাকাইয়া জামদানি, মসলিন জামদানি, টাঙ্গাইলের সুতি এবং সুতি কোটা শাড়ি। এগুলো ২ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। মার্কেটটি ঘুরে দেখা গেল, বিভিন্ন ব্রান্ডের রকমারি পোশাকের দোকানগুলোতে ইতোমধ্যে ঈদের নতুন ডিজাইনের পোশাক এনেছে। ক্রেতারাও ভিড় করছেন কেনাকাটার জন্য। তাদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, রমজানের শুরু থেকে নগরজুড়ে যে ক্রমবর্ধমান ভোগান্তি শুরু হয়। তা এড়াতেই অনেকে আগেভাগে কেনাকাটা সারছেন। ছেলে, মেয়ে আর স্বামী সাইফুল ইসলামকে নিয়ে কে-জাহান মার্কেটে কেনাকাটা করতে এসেছেন পলি। তিনি বলেন, রোজার মাসে শহরের অনেক পরিবর্তন আসে। শেষের দিকে ভিড় বেড়ে যায়। তখন কেনাকাটায় অনেক সময় নষ্ট হয়। এমনকি পছন্দের জিনিসটিও খুঁজে পেতে বেশ বেগ পোহাতে হয়। তাই আগেভাগেই কেনাকাটার পর্বটা সেরে ফেলছি এবার। এখানে আসার আগে বিয়ে বাজার থেকে বাবা ও শ্বশুরের জন্য আর বাচ্চাদের জন্য পাঞ্জাবি কিনেছেন বলে জানান তিনি।তবে কেনাকাটায় মার্কেট গুলোর তুলনায় কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই ভোলার চক বাজার নিম্নধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের জিনিসপত্র বেশি পাওয়া যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভালো শার্ট, প্যান্ট, ছোটদের সব ধরনের পোশাক, সালোয়ার কামিজ, থ্রি-পিসও পাওয়া যাচ্ছে । ভোলার বিভিন্ন মার্কেটে যেসব জামাকাপড় ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে-তার হুবহু একই মানের জামাকাপড় অর্ধেক দামে পাওয়া যাচ্ছে ভোলার চক বাজারের দোকানগুলোতে। ভোলার মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত পর্যন্ত সবশ্রেণির মানুষের কেনাকাটার পছন্দের জায়গা জিয়া সুপার মার্কেট। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মধ্যে সুঁই থেকে পরিধেয় বস্ত্র, গৃহস্থালির অত্যাবশ্যকীয় পণ্য, নারীদের সাজগোজের আইটেম, উপহারসামগ্রী, ব্যাগ সহ এমন কোনো জিনিস নেই- যা পাওয়া যায় না এই মার্কেটটিতে। শাড়ি ও বাচ্চাদের পোশাক, শার্ট-প্যান্ট, থান কাপড় থেকে শুরু করে লুঙ্গি-গামছা সবই রয়েছে এখানে। মূলত দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় এসব দ্রব্য মিলে সহজ ও নিয়ন্ত্রিত দামেই। যে কারণে এই মার্কেটে প্রায় সারা বছরই ভিড় লেগে থাকে। এবারও ঈদের কেনাকাটার জন্য উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, বিক্রেতারা দোকানে তৈরি পোশাক, থান কাপড় ইত্যাদির সম্ভার গড়ে তুলেছেন। এরপর দ্বিতীয় তলায় পোশাকাদির বাহারি পসরা। বিক্রেতারা জানান, বেচাকেনা বলতে যাকে বোঝায়, তা এখনো পুরোপুরি শুরু হয়নি। কিন্তু রোজার শুরুতে এমন ভিড় অন্যান্য বছর তেমন একটা দেখা যেত না। মানুষজন আসছেন। আর ক্রেতা যা আসছেন তাদের বেশিরভাগই কেনাকাটার চেয়ে দেখাদেখি ও দরদামের প্রতি বেশি আগ্রহী। যে কজন কিনছেন, তারা শিশু-কিশোরদের পোশাকের প্রতি মনোযোগী বেশি। তবে মানুষ আসছে, এটাই আশার কথা। দোতলায় পোশাক বিক্রেতা বেলাল জানান, বিক্রি ভালো। গত কয়েকদিনের চেয়ে বেড়েছে।ঈদ বাজারে ভারতীয় পোশাকের একচেটিয়া আধিপত্য নতুন কিছু নয়। ভারতীয় চ্যানেলে প্রচারিত সিরিয়াল বা হিট কোনো হিন্দি সিনেমার নামে নতুন ফ্যাশন বাজারে আসে। প্রতিবারের মতো এবারো এর ব্যাতিক্রম হয়নি।ভারতের ব্যবসা সফল ছবি ‘বাহুবলী’ ও ’বাজিরাও মাস্তানি’ নামে বাজারে এসেছে নতুন পোশাক যা ইতিমধ্যে তরুণীদের মন কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। এর বাইরে ঝলক, সাহারা, নন্দিনী, ইচ্ছামতি পোশাকেরও প্রভাব রয়েছে।বাজার ঘুুরে দেখা গেছে, ঈদ পোশাকের বাজারে এসব পোশাকের দাম দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে। তবে মার্কেট ভেদে এর দামে পার্থক্য রয়েছে।বিভিন্ন মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটের কেনাকাটা মোটামুটি জমে উঠেছে। এর মধ্যে তরুণ-তরুণী ও নারীদের ভিড় কিছুটা বেশি।গৃহিণী আফরোজা আক্তার বলেন, বাচ্চাদের কেনাকাটা দ্রুত শেষ করে ফেলতে চাই। পরে ভিড়ের মধ্যে তাদেরকে নিয়ে কেনাকাটা করা কঠিন। এজন্য আগেভাগেই এসেছি।সঙ্গে থাকা মেয়ে নিকিতা আফরোজ বলেন, ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন মডেলের পোশাক দেখছি। এখনো ঠিক করিনি কোনটা নেবো। তবে বাজিরাও মাস্তানি ভালো লেগেছে।বিক্রেতারা আশা করছেন, ভিড় এড়াতে মার্কেটে আসা মানুষের এই দেখাদেখি বেশিদিন চলবে না। বিশেষ করে চাকরিজীবীদের হাতে বেতন ও ঈদ বোনাসের টাকা আসলেই কেনাকাটার পুরোদমে ধুম পড়বে।



মন্তব্য চালু নেই