ক্রিকেট দেখতে চাকরী ছেড়েছিলেন যিনি!

বয়স কতই বা হবে? বড় জোর ২৬ কিংবা ২৭। এসময় তার ভাবনা জুড়ে থাকার কথা ভবিষৎত উন্নতির কথা। সামর্থ্য আর শিক্ষানুযায়ী দিব্যি একটি চাকরি জুটিয়ে দিন পার করে দিতে পারতেন।

কিন্তু ওসবের পথে না হেঁটে ক্রিকেট মাঠেই সময় কাটাতে চান তিনি। আর গ্যালারি থেকে অবিরত থেকে চিৎকার করে যান ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ বলে। নিজেকে সাজান বাঘের আদলে। ক্রিকেটারও তার আসল নাম ধরে ডাকেন না মিরপুর স্টেডিয়াম পাড়ায় তাকে সবাই বাঘ বলেই চেনে।

পাকিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজের আগে অনুশীলন করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। কিন্তু অনুশীলনে পুরো মাঠ খালি থাকলেও অনবরত লাল সবুজের পতাকা নাড়িয়ে যাচ্ছেন শোয়েব আল বুখারি নামের একজন পাগল সমর্থক।

পাগল সমর্থক কথাটা বলাই যায়। পাগল না হলে কি ২০০৬ সালে ১৬-১৭ বছর বয়েসে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির খেলা দেখার জন্যে বিনা পাসপোর্টে ভারত পৌঁছে গিয়েছিলেন শোয়েব! পেশায় মোটর মেকানিক এই সমর্থক নির্দিষ্ট কোন চাকরি করেন না। কারণ চাকরির কারণে সিরিজ চলাকালিন সময়ে মাঠে আসতে পারবেন না সেই ভয়েই চাকরির আশেপাশেও ভীড়ছেন না শোয়েব। এমনকি মোটর মেকানিক হিসেবে অ্যাঙ্গোলায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েও যাননি শোয়েব।

শোয়েবকে তার ভবিষৎ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তাকে বেশ ভাবলেশহীন দেখালো, বললো, ‘বাংলাদেশের খেলা হবে আর মাঠে আসতে পারব না, এটা মনে করলে বেশ খারাপ লাগে। তাই চাকরি করি না বরং ক্ষেপ মেরে যা আয় হয় তাই দিয়ে চলার চেষ্টা করি।’

বাংলাদেশ দলকে বিশ্বকাপে সমর্থন দেওয়ার জন্যে এবার যেতে চেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ায় কিন্তু পেশায় মোটর মেকানিক হওয়ায় ভিসা জুটেনি তার কপালে এনিয়ে শোয়েবের আক্ষেপ নেই। কারণ অধিনায়ক মাশরাফি তাকে বলেছেন ২০১৯ এর বিশ্বকাপে তিনি যাতে যেতে পারেন সে চেষ্টায় করবেন, শোয়েবের জবানীতেই শুনি চলুন, ‘দেখেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যাম্বেসি ভাবছি আমি মোটর মেকানিক সেখানে আমি থ্যাইক্যা যামু সে কারণেই ভিসা দেয় নাই আমারে। কিন্তু এনামুল ভাইও চেষ্টা করছিল। আর মাশরাফি ভাই বলছে বাঘ মন খারাপ করিস না ২০১৯ এ আমি যাইতে না পারলেও তোরে পাঠামুর চেষ্টা করব।’

এই যে এভাবে টাইগারদের জন্যে গলা ফাটানো এ থেকে শোয়েবের প্রাপ্তি কি? সে বললো ‘আমার কিছু লাগে না, মাশরাফি ভাই, মুশফিক ভাই যখন জিজ্ঞাসা করে কিরে বাঘ কেমন আছিস তাতেই আমার সব পাওয়া হয়ে যায়। ’

শোয়েবের বাবা পেশায় একজন ইমাম। তাকে পড়াশুনার জন্যে মাদ্রাসায় পাঠানো হলেও সেখান থেকে আটবার তিনি পালিয়েছিলেন। কারণটাও ছিল ক্রিকেট। শোয়েব জানান, ‘ঢাকায় আসার পর কল্যাণপুরের মাদ্রাসায় আমাকে ভর্তি করে দেওয়া হয়।কিন্তু খেলা দেখতে পারতাম না সেখানে। আমার আর মন টেকেনি। আটবার পালিয়েছি আমি।’

শোয়েব পুরো জীবনটাই কাটিয়ে দিতে চান মাঠেই। দেশের ক্রিকেটারদের সমর্থন দিয়ে যেতে তার ক্লান্তি নেই… কারণ দেশের গৌরবের অংশীদের হতে চান শোয়েব!



মন্তব্য চালু নেই